ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ।
যুগ যুগ আগে থেকে ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ ব্যবহার হয়ে আসছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় রানি ক্লিওপেট্রা দুধ দিয়ে স্নান করতেন। এ গল্প কম-বেশি সকলের জানা। তবে গল্প কতখানি সত্য তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কে না গিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করা যে বাস্তবে কেবলই বিলাসিতা তা নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই।
দুধ ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে থাকে। যার ফলে সান ট্যান ও কালচে দাগ সহজেই দূর হয়। এছাড়াও দুধ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে থাকে সঙ্গে আর্দ্রতাও যোগায়। বয়সের ছাপ দূর করতে অবশ্যই নিয়মিত কাঁচা দুধ ব্যবহার করতে হবে।
দুধে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন ও ল্যাকটিক এসিড। যা ত্বক সুরক্ষায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “ডি” যা ত্বকে নতুন কোষ গঠনে সহায়তার পাশাপাশি ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়িয়ে ত্বককে করে দাগমুক্ত আর প্রাণবন্ত।
দুধে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা সঙ্গে পোড়া দাগও দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য দুধ খেলেও যেমন উপকার মিলবে তেমনি বাহ্যিক ব্যবহারেও এর পুষ্টিগুণ শুষে নেবে ত্বক। যাতে লাভবান হবেন আপনিই।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ কিভাবে ব্যবহার করবেন-
ত্বক উজ্জ্বল করতে:
কাঁচা দুধে থাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা ত্বক উজ্জ্বল করে প্রাকৃতিকভাবে। এটি ত্বকে টায়রোসিন হরমোনের রসক্ষরণ কমাতে সাহায্য করে। ১ চা চামচ লেবুর রসে কাঁচা দুধ মেশান। এরপর এতে গোলাপজল দিন কয়েক ফোঁটা। মুখ এবং গলায় এই মিশ্রণটি লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। ত্বক ধুয়ে ফেলুন পানি দিয়ে।
দুধের সঙ্গে ১ চিমটি হলুদ ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলেও উজ্জ্বল ও নরম হবে ত্বক।
বলিরেখা দূর করতে:
৫-৬টি কাঠবাদাম এবং ৫-৬টি খেজুর কাঁচা দুধে ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। মিক্সারের সাহায্য তিন উপকরণ পেস্ট করে নিন। মুখ ও গলার ত্বকে এই পেস্ট লাগিয়ে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। পানি দিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। নিজেই তফাৎটা বুঝতে পারবেন।
ব্রণ কমাতে:
কাঁচা দুধে প্রচুর ভিটামিন থাকে যা ত্বকের জন্য উপকারী। কাঁচা দুধ ব্রণ কমায় এবং বাড়তি তেল ও জীবাণু কমায়। দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্রণ সৃষ্টিকারী ক্ষুদ্র জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। কাঁচা দুধ তুলার বলের সাহায্যে পরিষ্কার মুখে ব্যবহার করুন। নিয়মিত ব্যবহারে ধীরে ধীরে ব্রণ দূর হবে।
ক্লিনজার হিসেবে:
অল্প একটু তুলো নিয়ে সেটা কাঁচা দুধে ভিজিয়ে পুরো মুখ আস্তে আস্তে মুছে নিন। তুলোতে যে কী পরিমাণ ময়লা উঠে আসবে সেটা দেখে আপনি নিজেই অবাক হবেন। ক্লিনজার হিসেবে ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান।
শুষ্ক ত্বকের ডিপ ময়েশ্চারাইজার হিসেবে:
যাদের স্কিন অনেক বেশি ড্রাই তারা রাতে ঘুমোতে যাবার আগে একটা তুলোর বল কাঁচা দুধে ভিজিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় মুখ ধুয়ে নিন। এবার আপনার পছন্দের ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে নিজের নরম, কোমল আর দীপ্তিময় ত্বক দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।
ত্বকের আসল রঙ ফিরিয়ে আনতে:
অনেকেরই ত্বকে ময়লা জমে বা রোদে পুড়ে গায়ের রঙ নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে, দুই চা চামচ কাঁচা দুধে ১ চা চামচ লেবুর রস মিক্স করে পুরো মুখে, গলায়, হাতে, পায়ে লাগিয়ে আধ ঘণ্টার জন্য রেখে দিন। যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় তাহলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। আর যদি ত্বক শুষ্ক হয়, তাহলে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় মুখ ধুয়ে নিন। ত্বকের যত্নে কাঁচা দুধ নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের রঙে সামঞ্জস্যতা আসবে এবং উজ্জ্বল হবে।
রোদে পোড়াভাব দূর করতে:
একটা পাতলা কাপড় কাঁচা দুধে ভিজিয়ে নিঙরে রোদে পোড়া স্কিন এর (মুখ, গলা, হাত, পা) উপর আধ ঘণ্টার জন্য রেখে দিন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন ব্যবহারে রোদে পোড়াভাব আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।
স্ক্রাব হিসেবে:
চালের গুঁড়োর সাথে কাঁচা দুধ আর মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিন। সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ দিন এটা দিয়ে স্কিনকে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে স্ক্রাবিং করে নিন ১০ মিনিটের জন্য। এটি স্কিন এর ডেডসেলস গুলোকে দূর করে স্কিনকে আরো বেশি উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত দেখাতে সাহায্য করবে।
ঠোঁটের কালচেভাব দূর করতে:
ঠোঁটের কালচেভাব দূর করতেও কাঁচা দুধের জুড়ি নেই। সেক্ষেত্রে, তুলোর বলে কাঁচা দুধ লাগিয়ে ৫ মিনিট ধরে ঠোঁটের চারপাশে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এভাবে সপ্তাহে ২-৩ দিন করলে ঠোঁটের কালচেভাব দূর হয়ে যাবে।
তারুণ্যদীপ্ত ত্বক পেতে:
সুন্দর তারুণ্যময় ত্বক পেতে মুলতানি মাটির সাথে কাঁচা দুধ মিক্স করে ফেইসপ্যাক বানিয়ে নিন। একদিন পরপর আধঘণ্টার জন্য অ্যাপ্লাই করুন। যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় তাহলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। আর যদি ত্বক শুষ্ক হয় তাহলে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় মুখ ধুয়ে নিন।
দাগহীন ত্বক পেতে:
দাগমুক্ত উজ্জ্বল ত্বক পেতে ৫/৬টা কাঠবাদাম আর কাঁচা দুধ ব্লেন্ড করে বা বেটে পেস্ট বানিয়ে নিন। এরপর মুখে অ্যাপ্লাই করুন আধঘণ্টা পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। একদিন পরপর ব্যবহারে ধীরে ধীরে ত্বকের দাগ নির্মূল হয়ে উজ্জ্বল দীপ্তিময় ত্বকের দেখা পাবেন।
ব্রণের দাগ দূর করতে:
দুধ আর মধু একত্রে মিশিয়ে আধ ঘণ্টার জন্য মুখে লাগিয়ে রাখুন। আধঘন্টা পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এভাবে কিছুদিন করলে আস্তে আস্তে ব্রণের দাগ চলে যাবে।