অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করার উপায়।
আমাদের শরীরে যত ব্যাকটিরিয়া রয়েছে, সে সব ব্যাকটিরিয়ার মধ্যে বেশিরভাগই অন্ত্রের মধ্যে থাকে। অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়া মাইক্রোবায়োটা হিসাবে পরিচিত এবং এগুলি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার অন্ত্রে শত শত প্রজাতির ব্যাকটিরিয়া রয়েছে। প্রতিটি ব্যাকটিরিয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য আলাদা ভূমিকা পালন করে এবং এসব ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পুষ্টি প্রয়োজন।
উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, যেমন যব, ভুট্টার তৈরি খাবার, লাল চাল অন্ত্রের জন্য উপকারী। এছাড়া ফলের মধ্যে আপেল, কলা, আদা, পেঁয়াজ, ডাল, ফ্ল্যাক্সসিড তেল ব্যাকটেরিয়াবান্ধব।
অন্ত্রের যেসব ব্যাকটিরিয়া থেকে তার মধ্যে কিছু খারাপ ব্যাকটিরিয়া আছে। কিছু খাবার আছে যেগুলি খারাপ ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা কমিয়ে ভালো ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। নিচে এমন করে কয়েকটি খাবার দেওয়া হলো-
প্রচুর শাকসবজি এবং ফল খান:
ফল এবং শাকসবজি স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়ার জন্য পুষ্টির উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা আমাদের দেহ হজম করতে পারে না।
ফাইবার অন্ত্রের নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাকটিরিয়ার মাধ্যমে হজম হয়। অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধির জন্য কিছু উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে: মটরশুটি, ব্রকলি, ছোলা, মসুর ডাল, আস্ত শস্যদানা।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে উচ্চমাত্রায় ফলমূল ও শাক সবজি যুক্ত ডায়েট অনুসরণ করলে কিছু রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে।
দই খান:
দই একটি প্রোবায়োটিক খাবার অর্থাৎ উপকারী ব্যাকটেরিয়াযুক্ত খাবার। ব্যাকটিরিয়া খাবারের সুগারকে জৈব অ্যাসিডে রূপান্তর করে।
এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক অর্থাৎ উপকারী ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফাইলাস নামক ব্যাকটেরিয়ার কথা বলা যায়। দইয়ের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের পৌষ্টিকতন্ত্রে পৌঁছয় ও খাদ্য হজমে সাহায্য করে। দই আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে যার ফলে আমাদের শরীরের পরিপাক শক্তি বাড়ে এবং পেটের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
কৃত্রিম মিষ্টি খাবেন না:
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, কৃত্রিম মিষ্টি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
কৃত্রিম মিষ্টি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার উপর খারাপ প্রভাব ফেলার পাশাপাশি আমাদের সাস্থের জন্যও খারাপ।
আস্ত শস্য খান:
আস্ত শস্যের মধ্যে কিছু ধরণের ফাইবার প্রাকবায়োটিক হিসাবে কাজ করে। এর অর্থ এগুলি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে যা হজম স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শস্যতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং হজমযোগ্য কার্বহাইড্রেট থাকে যেমন বিটা-গ্লুকান (beta-glucan)। এই কার্বহাইড্রেট ছোট অন্ত্রের মধ্যে শোষিত হয় না এবং পরিবর্তে বৃহত অন্ত্রের দিকে চলে যায়।
বৃহত অন্ত্রের মধ্যে এগুলি ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ভেঙে যায় এবং কিছু উপকারী ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি করে।
নিরামিষাশী ডায়েট:
প্রাণী-ভিত্তিক ডায়েটের চেয়ে উদ্ভিদ-ভিত্তিক ডায়েট বিভিন্ন ধরণের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিরামিষ ডায়েট অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
একটি ছোট্ট গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি নিরামিষ ডায়েট স্থূল লোকের মধ্যে রোগজনিত ব্যাকটেরিয়ার মাত্রাকে হ্রাস করে, পাশাপাশি ওজন, প্রদাহ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে।
পলিফেনল সমৃদ্ধ খাবার খান:
পলিফেনল হল উদ্ভিদ যৌগ যা রক্তচাপ হ্রাস, প্রদাহ, কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সহ অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। পলিফেনল মানব কোষ দ্বারা হজম করা যায় না।
তাই পলিফেনল কোলনে যাওয়ার পথ তৈরি করে, সেখানে পলিফেনল অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়া দ্বারা হজম হয়। পলিফেনলগুলির ভাল উৎসের মধ্যে রয়েছে: কোকো পাউডার এবং ডার্ক চকোলেট, আঙুরের খোসা, গ্রিন চা, কাজুবাদাম, পেঁয়াজ, ব্রকলি।
মানসিক চাপ কমানো:
অন্ত্রে স্বাস্থ্য সহ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মানসিক চাপ কমানো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তাই অন্ত্রের ভালো ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট খুবই জরুরি। এছাড়া এগুলি স্ট্রেসের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
নিয়মিত ব্যায়াম করা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে, যা ফলস্বরূপ স্থূলত্ব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। প্রতিদিন ১৫ মিনিটের ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
পর্যাপ্ত ঘুম পড়ুন:
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম মেজাজ, স্মৃতি এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। একটি গবেষণাযা দেখা গেছে যে অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস অন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
ধূমপান এড়িয়ে চলুন:
ধূমপান অন্ত্রের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হার্ট এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
২০১৮ সালের একটি পর্যালোচনা ১৬ বছরের সময়কাল ধরে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, ধূমপান ক্ষতিকারক অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধি করে এবং উপকারী ব্যাকটিরিয়ার মাত্রা হ্রাস করে।