সুন্দরবনের প্রাণী।

সুন্দরবনের প্রাণী

—————————

বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে প্রকৃতির অপার সম্ভার সুন্দরবন। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই বিশাল বন। এখানে রয়েছে যেমনঃ প্রচুর গাছপালা, কেওড়া ও সুন্দরী গাছের বন, তেমনি রয়েছে নানা প্রাণী, জীবজন্তু।

বিশ্বের কোনো কোনো প্রাণীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দেশের নাম বা জায়গার নাম। যেমন, ক্যাঙ্গারু বললেই মনে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার কথা। সিংহ বললেই মনে ভেসে ওঠে আফ্রিকার কথা। তেমনি বাংলাদেশের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা রাজকীয় বাঘের নাম। এই বাঘ থাকে সুন্দরবনে। এ বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আবার ভয়ঙ্কর। এর চালচলনও রাজার মতো। সুন্দরবনের ভেজা স্যাঁতসেঁতে গোলপাতার বনে এ বাঘ ঘুরে বেড়ায়।

শিকার করে জীবজন্তু, সুযোগ পেলে মানুষও খায়। এক সময় সুন্দরবনে ছিল চিতাবাঘ ও ওলবাঘ। কিন্তু এখন আর এসব বাঘ দেখা যায় না। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। এ বাঘকে বিলুপ্তির হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে হবে।

সুন্দরবনে বাঘ ছাড়াও আছে নানা রকমের হরিণ। কোনোটার বড় বড় শিং, কোনোটার গায়ে ফোঁটা ফোঁটা সাদা দাগ। এদের বলে চিত্রা হরিণ। এক সময় সুন্দরবনে প্রচুর গন্ডার ছিল, ছিল হাতি, ছিল বুনো শুয়োর। এখন এসব প্রাণী আর নেই। তবে দেশের রাঙামাটি আর বান্দরবানের জঙ্গলে হাতি দেখতে পাওয়া যায়।

যেকোনো দেশের জন্যই জীবজন্তু, পশুপাখি এক অমূল্য সম্পদ। দেশের জলবায়ু আবহাওয়া গাছপালা বৃক্ষলতা ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলেই সে দেশের প্রাণিকুল জীবনধারণ করে। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে পৃথিবীতে অপ্রয়োজনীয় প্রাণী বা বৃক্ষলতা বলতে কিছুই নেই।

একসময় আমাদের দেশে প্রচুর শকুন দেখা যেত। শকুন দেখতে যে খুব সুন্দর পাখি তা কিন্তু নয়। এরা উড়ে বেড়ায় আকাশের অনেক উপরে। বাসা করে গাছের ডালে। মানুষের পক্ষে যা ক্ষতিকর, সেইসব আবর্জনা শকুন খায় এবং পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে। কিন্তু শকুন এখন বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায় পাখি।

প্রাণী বৃক্ষলতা সব কিছুই প্রকৃতির দান। তাকে ধ্বংস করতে নেই। ধ্বংস করলে নেমে আসে নানা বিপর্যয়-বন্যা, খরা, ঝড় ইত্যাদি।

পশুপাখি ও জীবজন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। প্রকৃতিতে যদি বিপর্যয় ঘটে তবে এদের জীবনও বিপন্ন হয়। সুন্দরবনের অনেক প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেসব প্রাণী আছে তাদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে হবে।