সুগার কমাতে জাম বা জাম ফলের বীজ। ডায়াবেটিস রোগীদের অব্যর্থ এই টোটকা সম্পর্কে জেনে নিন।

ডায়াবেটিস রোগটি বা রক্তে সুগার সমস্যা বর্তমান সময়ে একটি খুব সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগে সমগ্র বিশ্বজুড়ে ৪২২ মিলিয়ন বা ৪২ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর আপনি যদি নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন না করেন তবে ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি বা এই রোগের কঠিন প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।

এমন পরিস্থিতিতে যদি আপনি ডায়াবেটিস রোগী হন তবে আপনার ডায়েটে এমন কিছু খাবার রাখা উচিত যা আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণকে বাড়তে বাঁধা দেবে।

আয়ুর্বেদ মতে জাম হল অ্যাসট্রিনজেন্ট অ্যান্টি-ডিউরেটিক, যা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ কমাতে সাহায্য করে, হাইপোগ্লাইসেমিক গুণ আছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ যা ডায়াবেটিসে উপকারী। জাম ফল ও বীজ উভয়েই এই গুণগুলি উপস্থিত।

পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ কালোজাম গ্রীষ্মের একটি প্রিয় ফল। ছোট বড় সকলের প্রিয় রসালো স্বাদের এই মিষ্টি ফল ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের উপকার থাকলেও, জামের বীজও কিন্তু কোনও অংশে কম নয়।

জাম সাধারণত মালাবার প্লাম, জাভা প্লাম(Java plum), কালো বরই, জামুন বা জাম্বোলান নামে পরিচিত। Syzygium cumini-জাম এর বৈজ্ঞানিক নাম। জাম Myrtaceae (মিরটাসিয়া)-পরিবারের একটি চিরসবুজ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছ। যার উৎস ভারত, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া।

কি নেই জামে? প্রোটিন, ফাইবার, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি সিক্স, ভিটামিন সি। সব পাবেন এতে। আবার ক্যালোরিও খুব কম । এজন্য একে সুপার ফুড বলা হয়? জামের মৌসুমে নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন।

বাংলায় জাম, ইংরেজিতে Black berry এবং জামের সংস্কৃত নাম জাম্বু।  আয়ুর্বেদসহ বিভিন্ন আদি শাস্ত্রে এর উল্লেখ আছে। ভারতে এর আর এক নাম জাম্বুদ্বীপ বা অনেক জাম্বু (জাম) বা ভারতীয় ব্ল্যাকবেরি গাছের দেশ।

কিন্তু শুধু স্বাদ নয়, আমাদের শরীরের জন্য কত গুন, ভাবা যায় না। নিয়মিত খেলে আমাদের চেহারাতেও আসে জেল্লা।

সুগার কমাতে জাম বা জাম ফলের বীজের ভূমিকা বা উপকারীতা:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বীজ খুবই উপকারী। ফল ও বীজ উভয়েই উপস্থিত জাম্বোলাইন ও জাম্বোসাইন নামক পদার্থ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জামের বীজও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বীজগুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্রত্যেকদিন খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”

এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, জামের বীজ হাইপারগ্লাইসেমিক ইঁদুরের শরীরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই উপকারী। আরও জানা যায়, জামের বীজের উপকারী প্রোফাইল্যাকটিক ক্ষমতা যা হাইপারগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে রোগীদের রোজের খাদ্যতালিকায় জামের বীজ রাখা দরকার।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়:

ঐতিহ্যগতভাবেই জাম ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জামের গ্লিসামিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো বলে
বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। কমপ্লিমেন্ট থার মেড এ প্রকাশিত একটি গবেষণা পর্যালোচনায় জানা যায় যে, জামের ডায়াবেটিক বিরোধী গুণ আছে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, জামের বীচি রক্তের সুগার লেভেল ৩০% পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে। এই ফলটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

 

ডায়বেটিস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

জামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জাম অতুলনীয়ভাবে কাজ করে। এছাড়াও শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে জাম।

ডায়াবেটিস রোগীর হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:

জামে এলাজিক এসিড বা এলাজিটেনিন্স, এন্থোসায়ানিন এবং এন্থোসায়ানিডিন্স থাকে যা প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। এই উপাদানগুলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে বলে কোলেস্টেরলের জারণ রোধ করে এবং হৃদরোগ সৃষ্টিকারী প্লাক গঠনে বাধা দেয়। এছাড়াও হাইপারটেনশন প্রতিরোধেও সাহায্য করে জাম। কারণ এতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম জামে ৫৫ গ্রাম পটাসিয়াম থাকে।

পেট ও দাঁতঃ

হজমের সমস্যা সমাধানে জামের বীজ বিকল্প রোগ উপশমকারী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় যেমন আয়ুর্বেদ, ইউনানী ও চাইনিজ ওষুধ ইত্যাদিতে।
কালো জাম হজম করতে সাহায্য করে। হজমের কারণে হওয়া অ্যালসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও দাঁত ভালো রাখে।

ডায়াবেটিস রোগীর ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ

আমাদের অনিয়মিত লাইফস্টাইল, বাজে খাদ্য অভ্যাস-এর ফলে আজ ক্যান্সারের ঝুঁকি ভীষণভাবে বেড়ে গাছে।  কালো জাম হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। অন্যান্য যেকোনো ফল বা সব্জি যেগুলি সাধারণত আমরা রোজ খেয়ে থাকি সেগুলির থেকে কালো জামে সবথেকে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

আর আমাদের রোজকার জীবনে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই প্রয়োজনীয়। কারন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে ফিট রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

কালো জাম অনেকদিন ধরেই ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটা হয়তো আমরা জানিনা। কালো জামের মধ্যে আছে এমন কিছু উপাদান যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। বিশেষ করে এর বীজ রক্তের সুগার লেবেল কমাতে একটি প্রমাণিত সমাধান। কালো জামকে ডায়াবেটিস বিরোধী বলা হয়।

জাম ফল ও বীজ উভয়েই এই গুণগুলি রয়েছে। আয়ুর্বেদের ঔষুধি হিসেবে ডায়াবেটিস রোগে কীভাবে জামের বীজ ব্যবহার করবেন, জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমেই জামের বীজ খুব ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। এরপর এক সপ্তাহ রোদে খুব ভালো করে শুকিয়ে নিন। বীজের খোসা ছাড়িয়ে সবুজ অংশ বের করে নিন। সবুজ অংশগুলি ভেঙ্গে আবারও রোদে ৩ থেকে ৪ দিন শুকিয়ে নিন। এরপর মিক্সিতে খুব ভালো করে গুঁড়ো করে নিন। গুঁড়ো করার পর চালনিতে চেলে তার থেকে বড় দানাগুলো বের করে নিন।

এরপর একটি এয়ারটাইট কন্টেনারে এই গুড়ো সংরক্ষণ করুন। একগ্লাস জলে এক চা চামচ জামের বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে পান করুন। আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়াবেটিস।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

সূত্রঃ

https://food.ndtv.com/health/jamun-seeds-for-diabetics-heres-how-you-can-use-them-in-your-diet-1877262

https://www.business-standard.com/article/news-ani/how-eating-jamun-can-be-beneficial-for-diabetics-113110800671_1.html#:~:text=Diabetic%20patients%20can%20consume%20jamun,dependent%20or%20non%2Dinsulin%20dependent.