সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করবেন কিভাবে?

প্রত্যেক বাবা-মা চান তার সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে একজন ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে। কিন্তু সেই সন্তান যদি পড়াশোনায় অমনোযোগী হয় তাহলে তা নিয়ে বাবা-মার আর চিন্তার শেষ থাকে না। অনেক অভিভাবকেরই অভিযোগ, সন্তান একদমই অমনযোগী।

বাবা সোনা একটু পড়াশুনায় মনোযোগী হও একথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন অনেকেই। আসলে শিশু মাত্রেই চঞ্চল। তাদের এক জায়গায় বসানোই মুশকিল। তারা শুধু খেলা করতে চাই। যেহেতু এ বয়সে শিশুরা খেলতে বেশি পছন্দ করে। তাই তাদেরকে খেলার ছলে পড়াতে হবে।

পড়াশোনায় অমনোযোগী এসমস্যা আজকাল ঘরে ঘরে। এর জন্য দরকার কিছু জরুরি কৌশল। আপনার শিশুর মধ্যে হয়তো সৃজনশীল অনেক মেধা লুকিয়ে আছে। সন্তানের সৃজনশীল মেধাকে বিকাশিত করার জন্য অভিভাবকদের সৃজনশীল বিভিন্ন কৌশল খুঁজে বের করতে হয়।

চলুন তবে জেনে নেয়া যাক, কীভাবে সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তোলা যায়-

সঠিক উপায় বেছে নিন:

বাচ্চারা মনে করে, লেখাপড়া একটি কষ্টকর কাজ। তারা তো বোঝে না যে, বড় হয়ে কিছু করতে গেলে লেখা পড়া করতে হবে। তাই আপনি যদি শিক্ষা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে লেকচার শুরু করেন, তবে তারা একে আরো বিরক্তিকর মনে করবে। তাদের জিজ্ঞাসা করুন, তাদের কী করতে ভালো লাগে? সেই ভালো লাগার সঙ্গে লেখাপড়াকে যোগ করে বোঝানোর চেষ্টা করুন।

টাইম ঠিক করে নিন:

সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলতে হলে পড়াশুনার জন্য একটি নিদির্ষ্ট টাইম ঠিক করুন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি রাতে হোম ওয়ার্কের জন্য ৪৫ মিনিট সময় যথেষ্ট। শিশুকে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে বলুন, অ্যালার্ম বেজে গেলে তুমি উঠে যাবে।

আনন্দময় করে:

যেহেতু শিশুদের কাছে লেখাপড়া করা একটি কষ্টকর কাজ। তাই পড়াশোনা যদি আনন্দময় হয়ে ওঠে তবে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হবে আপনার সন্তান। এ কাজটি করার সময় আপনার আচরণই আসল ভূমিকা পালন করে। লেখাপড়া মজাদারভাবে উপস্থাপন করুন। যেমন- গল্পের মাধ্যমে, খেলার মাধ্যমে দেখবেন মজা করতে করতে পড়ার কাজটি হয়ে যাবে।

পুরস্কার:

পড়ার জন্য পুরস্কৃত করুন। ঠিকমতো পড়লে দুটো চকোলেট বা খেলনা। অথবা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পড়লে পাঁচ মিনিট খেলার সুযোগ। আর এসবের লোভে ঝটপট পড়ার কাজটা সেরে নেবে বাচ্চারা। এছাড়া আপনি বলতে পারেন তোমাকে নাম্বার দেবো।

রঙিন ব্যাগ, খাতা ও নতুন রং পেনসিল বক্স কিনে দিন:

শিশুরা সাধারণ বিভিন্ন জিনিস আকতে ও রং করতে পছন্দ করে। শিশুদের কাছে স্কুলে যাওয়া-আসা ও পড়ায় মনোযোগ বাড়তে নতুন ও রঙিন সব নতুন ব্যাগ, খাতা আর নতুন রং পেনসিল বক্স উপহার দিন। তাকে বিভিন্ন জিনিস এঁকে দিন এবং রং করতে সাহায্য করুন।

খেলাধুলা বা ছুটাছুটি:

শিশুরা দুরন্ত হয় ওদের আটকে রাখবেন না ছুটতে দিন খেলতে দিন। দিনে অন্তত একটা ঘণ্টা শিশুকে ছুটাছুটি করতে দিন। এতে তার শরীর থেকে এনডরফিন হরমোন বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হবে। ফলে ঘামও ঝরবে।

শরীর থেকে ঘাম ঝরার পর শিশুকে পড়াতে বসালে অনেকটা লাভ হয়। কারণ এনডরফিন হরমোন নিঃসরণের ফলে অন্তত এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা শিশুর মনোযোগ ঠিক থাকবে।

প্রশংসা করুন:

পড়াশোনা পারুক বা নাই পারুক প্রশংসা করুন দেখবেন নিজেই উৎসাহিত হয়ে অনেক কিছু করছে। শিশুরা প্রশংসা বা উৎসাহ পেতে দারুণ ভালোবাসে। কাজেই পড়াশোনার কারণে যদি এই প্রশংসা পাওয়া যায়, তবে তা করতে পিছপা হয় না তারা।

ইন্ডোর গেমস

এখন প্রচুর ইন্ডোর গেমস, বই পাওয়া যায়, যা বাচ্চার কগনিটিভ স্কিল বাড়ায়- যেমন নানা ধরনের অ্যাকটিভিটি বুক, বিল্ডিং ব্লকস, পাজলস ইত্যাদি। স্মার্টফোনের বদলে এই ধরনের খেলা বা বই ওর হাতে তুলে দিলে মনোযোগের সমস্যা অনেকটাই কমে।

নিজেও পড়ুন:

শিশুদের পড়াতে গেলে দেখা যায়, তাদের পড়ে পড়ে পড়ানো হচ্ছে। তা না করে, নিজে বরং অন্যকিছু পড়ুন। আপনার পড়া দেখে শিশুটিও তার পড়া পড়তে উৎসাহ বোধ করবে। কারণ, তার নিজের পড়াটা নিজের করাই উত্তম।

শিশুকে মোবাইল, ল্যাপটপ এসব থেকে যত দূরে রাখবেন ততই ভালো। কারণ ছোট বয়সে মানুষের মস্তিষ্কে এগুলোর প্রভাব পড়ে মনোযোগ নষ্ট হয়। নিজেরা বাড়িতে সারাক্ষণ টিভি দেখবেন না। তাহলে শিশুদের ওপরও এর প্রভাব পড়বে।

শিশুকে খোলা আকাশের নিচে ছেড়ে দিন। খেলতে দিন। ছোট বেলাটা ছোট বেলার মতো কাটতে দিন।