শহরের ইঁদুর ও গ্রামের ইঁদুরের গল্প।
সে অনেক কাল আগের কথা, সে সময় দুটি ইঁদুর খুব ভালো বন্ধু ছিল। একটি শহরে এবং অন্যটি গ্রামে বাস করতো। দু’জনেই তাদের এলাকায় ভ্রমণকারী অন্য ইঁদুরদের মাধ্যমে নিজেদের খবর বিনিময় করতো।
একবার শহুরে ইঁদুরটির ইচ্ছা হলো তার গ্রামের বন্ধুটির সঙ্গে দেখা করবে। সে গ্রামের কিছু ইঁদুরের মাধ্যমে বার্তাটি পাঠালো। গ্রামের বন্ধুটি তার বন্ধুর দেখা পাওয়ার জন্য উচ্ছ্বসিত ছিল। অবশেষে সেই দিনটি এলো। সে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ছিল। বন্ধুকে বরণ করতে সে ধুতি, কুর্তা এবং ক্যাপের মতো পোশাক পড়ে হাতে মালা নিয়ে গ্রামের সীমানায় গেলো।
এদিকে, তার শহুরে বন্ধুটি স্যুট, বুট ও গলায় টাই পরেছিল। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা বিনিময় করলো। গ্রামের ইঁদুর তাকে স্বাগত জানালো, এবং
তারা প্রচুর গল্প ও বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত বিনিময় করে খেতে বসলো। গ্রামের ইঁদুর বন্ধুকে ফল এবং গমের দানা সেদ্ধ করে দিয়েছিল।
খাবার খেয়ে তারা গ্রামের বাইরে বেড়াতে গেলো। ক্ষেতগুলি সবুজ এবং জঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শহুরে বন্ধুকে আকর্ষণ করলো। গ্রামের ইঁদুর বললো,শহরে কি এমন সুন্দর দৃশ্য আছে? শহরের ইঁদুর কিছুই বললো না। গ্রামের ইঁদুরকে শহরের আরামদায়ক জীবনযাত্রা দেখার জন্য একবার শহরে আসতে আমন্ত্রণ জানালো।
গ্রামের ইঁদুর বললো যে সে নিশ্চয়ই একদিন শহরে যাবে। শহুরে ইঁদুরটি বললো, তুমি এবারই আমার সঙ্গে চলো। গ্রামের ইঁদুর প্রস্তাবটি বিবেচনা করবে বলে জানালো।
রাতের খাবার খেয়ে তারা নরম ঘাসের উপর শুয়ে পড়লো। পরের দিন, প্রাতঃরাশের জন্য গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুকে তাজা ফল এবং সিরিয়াল পরিবেশন করলো। শহুরে ইঁদুর বিরক্তির সুরে গ্রামের ইঁদুরকে বললো, চলো এখনই শহরে যাই। আমাকে তোমার সেবা করার সুযোগ দাও।
গ্রামের ইঁদুর প্রস্তাবটি গ্রহণ করে এবং শহরে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। শহরের ইঁদুর একটি বড় বাড়িতে থাকে। রাতের বেলায় গ্রামের ইঁদুরটি খাবারের টেবিলে বিভিন্ন ধরনের খাবার ডেকে অবাক হয়ে গেলো। কারণ গ্রামের ইঁদুর এর আগে এতো খাবার একসঙ্গে কখনো দেখেনি। শহুরে ইঁদুর গ্রামের ইঁদুরটিকে এইসব খাবার উপভোগ করতে বলে এবং তারপর তারা একসঙ্গে খাওয়া শুরু করে।
পনির গ্রামের ইঁদুরের খুব পছন্দ ছিল এবং সে তাড়াতাড়ি পনির গুলো টুকরো টুকরো করছিলো। এমন সময় তারা একটি বিড়ালের আওয়াজ শুনতে পেলো। শহুরে ইঁদুরটি বললো, দ্রুত নিজেকে আলমিরার নিচে লুকিয়ে ফেলো, না হলে বিড়ালটি আমাদের খেয়ে ফেলবে।
তখন দু’জনেই ছুটে গেয়ে আলমিরার নিচে নিজেদের লুকিয়ে রাখলো। কিছুক্ষণ পরে বিড়ালটি চলে গেলে দু’জনেই বেরিয়ে এলো। গ্রামের ইঁদুরটি তখনও ভয়ে কাঁপছিল। শহুরে ইঁদুর আবার খেতে শুরু করে এবং তার বন্ধুকেও পরামর্শ দেয়, ভয় পেও না, এটি নগর জীবনের একটি অঙ্গ।
গ্রামের ইঁদুর সাহস জোগাড় করে আবার খাবার টেবিলে গেলো। এবার সে তার পছন্দের কেকটি দ্রুত শেষ করলো। সেই মুহূর্তে একটি ছেলে কুকুর নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো।
কুকুরের ভয়ে গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলো, ছেলেটি কে বন্ধু? শহরের ইঁদুরটি বলল, সে জিমি, এই বাড়ির কর্তার পুত্র। তাড়াতাড়ি আগের জায়গায় নিজেকে লুকিয়ে ফেলো। তাদের চলে যাওয়ার পরে, উভয় ইঁদুর বেরিয়ে আসে। গ্রামের ইঁদুরটি তখনো খুব ভয় পেয়ে আছে।
সে বললো, বন্ধু, আমার মনে হয় আমার এখনই ফিরে যাওয়া উচিত। সুস্বাদু খাবারের জন্য তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। তবে অনেকগুলি ঝুঁকির মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। তোমাকে আবারও ধন্যবাদ।
এই বলে গ্রামের ইঁদুর গ্রামের পথে যাত্রা শুরু করলো। গ্রামে পৌঁছে সে স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ওহ! জীবন মূল্যবান। ঝুঁকিবিহীন গ্রামের সরল জীবনই আমার পছন্দ।