লোককবি, কণ্ঠশিল্পী, কবিয়াল ও গীতিকার বিজয় সরকারের জন্ম ও কর্মজীবন।

কবিয়াল বিজয় সরকার। জন্ম ফেব্রুয়ারি ১৬, ১৯০৩ – মৃত্যু ডিসেম্বর ০৪, ১৯৮৫। একজন বাউল কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার এবং সুরকার। তিনি ২০১৩ সালে একুশে পদক পান।

পরিচিতির কারণ: লোক কবি, কবিয়াল, কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার এবং সুরকার ও চারণ কবি। অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন এই কবি আসরে বসে গান রচনা করে সাথে সাথে ওই আসরেই নিজের রচয়িত গান গেয়ে শোনাতেন।

নিজ স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ শুনে এমন রচয়িত গান দুটি হলো: পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে। আর কি দেখা হবে কি তার সাথে, যারে হারাইয়েছি জীবনে।

তার গানগুলি খুব হৃদয়স্পর্শী। আমাদের সবসময় অশ্রুসিক্ত করে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা আসরে তার গানগুলো যখন সুন্দরভাবে গাওয়া হয় তখন মানুষ কাঁদতে কাঁদতে গড়াগড়ি যায়।

এই লোককবি বাংলাদেশের নড়াইলের ডুমদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম বিজয় কৃষ্ণ অধিকারী। কবি তার ভক্ত ও স্থানীয়দের কাছে ‘পাগল বিজয়’ হিসেবে সমধিক পরিচিত।

কবিয়াল বিজয় সরকারের নাম শুনলেই বা তার সম্পকে কথা  উঠলেই যে গানের লাইনগুলি মনে বেজে ওঠে বা মনের অজান্তেই গুন গুন করে গেয়ে উঠি — এ পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে / সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে, পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে”

তুমি জানো না রে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা , ” আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে ” বা আর কি দেখা হবে কি তার সাথে, যারে হারাইয়েছি জীবনে  প্রভৃতি অন্যতম।

তার পিতার নাম নবকৃষ্ণ বৈরাগী ও মাতার নাম হিমালয়া কুমারী। পিতামহের নাম গোপালচন্দ্র বৈররাগী । তিনি স্থানীয় টাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে নেপাল বিশ্বাস নামক একজন শিক্ষকের কাছে যাত্রাগানের উপযোগী নাচ, গান ও অভিনয় শেখেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি স্কুল পাল্টান।

প্রায় সবখানেই তিনি এমন এক বা একাধিক শিক্ষক পান, যাদের কাছে তিনি গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। অল্প বয়সে পিতামাতা হারানোয় তার লেখাপড়া বেশিদূর এগোয়নি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি লেখাপড়া করেন।

তিনি স্থানীয় স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতার কাজ করেন। কিছুদিন করেন নায়েবের কাজ। পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লোক ও আধুনিক গান চর্চা করতেন।

১৯২৫ সালে তিনি গোপালগঞ্জের কবিয়াল মনোহর সরকারের কাছে কবিগান শেখেন। কিছুদিন পর তিনি রাজেন্দ্রনাথ সরকারের সংস্পর্শে আসেন এবং তার কাছেও কবিগানের তালিম নেন।

১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজের একটি গানের দল করেন এবং কবিয়াল হিসেবে পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি গানের কথা এবং সুর করতেন।

ভাটিয়ালী সুরের উপর ভিত্তি করে তার ধুয়া গানের জন্য তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পান। তিনি রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, আব্বাসউদ্দীন আহমদ প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন।

বিজয় সরকার প্রায় ৪০০ সখি সংবাদ এবং ধুয়া গান রচনা করেন। এর মধ্যে কিছু কাজ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, এবং রেডিও-টেলিভিশনেও কবিগান পরিবেশন করেন।

বাংলাদেশ ও ভারতে তিনি আনুমানিক ৪০০০ আসরে কবিগান পারিবেশন করেন। এছাড়া তিনি রামায়ণ গানও পরিবেশন করতেন।

বিজয় সরকার-এর পারিবারিক উপাধি ছিল বৈরাগী। তিনি নিজে বৈরাগী উপাধি ত্যাগ করে অধিকারী উপাধি গ্রহণ করেন। কবিয়াল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করার পর তিনি অবশ্য বিজয় সরকার নামে পরিচিত হয়ে পড়েন।

সূত্র:

wiki