রঙ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? আমরা কেন কোনো বস্তুকে রঙ্গিন দেখি?

প্রতিফলন, প্রতিসরণ বা শোষণের পরে কোন পদার্থ হতে যে বর্ণের আলো আমাদের চোখে পতিত হয় তাই রঙ বা বর্ণ। রঙ বা রং বা বর্ণ (ইংরেজি: Colour) হল মানুষের দৃষ্টি-সংক্রান্ত একটি চিরন্তন ধর্ম।

দৃশ্যমান আলোর কম্পাঙ্ক থেকে রং উৎপত্তি লাভ করে। বিভিন্ন কারণে মানুষের কাছে রঙের পার্থক্য হয়ে থাকে। একটা বস্তু, আলোক তরঙ্গ, আমাদের চোখ এগুলোর সমন্বয়ে ঠিক হয় আমরা বস্তুটিকে কি রংয়ের দেখবো।

রঙ বা বর্ণ হচ্ছে কোনো বস্তুর উপরে আলো পড়লে যদি বস্তুটি আলোর সব তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করে কোন একটা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য-এর তরঙ্গ শোষণ করতে না পারে এবং তাকে প্রতিফলিত করে দেয়, তাহলে আমরা বস্তুটিকে সেই নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য-এর তরঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট রঙের দেখি।

সাধারণত বলা হয়ে থাকে মৌলিক রং তিনটি, যথা – লাল, সবুজ ও নীল। তবে এর মাঝে কিছু পার্থক্যও আছে, কারণ কোন কিছু মুদ্রণ করার ক্ষেত্রে মৌলিক রং হিসেবে লাল, হলুদ ও নীল রঙ-কে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

রঙের এই যাদুকরী বিষয় আসলেই জটিল যদি আমরা রঙের বিজ্ঞানটাকে ভালোভাবে না জানি। কেন আমরা কোনো বস্তুকে লাল, নীল, কালো বা সাদা দেখি?

এটা সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানের ব্যাপার। এই রঙ দেখার সঙ্গে বেশ কিছু ব্যাপার একটার সঙ্গে একটা জড়িয়ে আছে।

রঙ বা বর্ণ প্রধানতঃ দুই প্রকার যথা-

১. মৌলিক রঙ এবং ২. যৌগিক রঙ

মৌলিক রঙ:

যে রঙ ছাড়া কোনো রঙ তৈরি করা যায় না তাকে মৌলিক রঙ বা প্রাথমিক রঙ বলে। যেমনঃ লাল, নীল ও হলুদ।

যৌগিক রঙ:

দুটি প্রাথমিক রঙয়ের মিশ্রণের ফলে বা দুই বা ততোধিক রঙ মিলে যে নতুন রঙ তৈরি হয় তাকে মাধ্যমিক রঙ বা যৌগিক রঙ বলে।

যেমনঃ লাল + হলুদ = কমলা

নীল + সাদা = আকাশি।

এরমধ্যে কোনো একটা যদি গণ্ডগোল করে তবে আর বস্তুটিকে সেই রঙে দেখা যাবে না। যেমন, আলো না থাকলে যে কোনো বস্তুকেই সাধারণত ধূসর দেখায়। আবার অতিরিক্ত আলোতে বস্তুটির রঙ যেন জ্বলে যায়।

একই ভাবে বস্তুটির ধর্ম ঠিক করে দেয় সে কোন রঙের দেখাবে। কিন্তু তারপরেও থাকে আমাদের চোখ। তা নইলে রঙ-কানা শব্দটাই তো হত না। অনেকে ঠিকঠাক রঙটাই চিনতে পারে না। সবুজকে দেখে নীল!

তবে এই তিনটি — আলো, বস্তু এবং চোখ যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলেও বা রঙকে ঠিক কিভাবে আমরা দেখি? সেটা জানতে গেলে আলো, বস্তু এবং চোখ — এই তিনটের সম্পর্কেই কিছু মূল জিনিস জেনে নিতে হবে।

আলো আসলে কিছু তরঙ্গের মিশ্রণ। প্রতিটি তরঙ্গের রঙ আলাদা আলাদা। Rainbow সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে বহু বছর আগে নিউটন প্রমাণ করেছেন আলো আসলে সাতটি রঙের সমষ্টি।

বলা ভালো, আলোর সাতটি রঙকে আমাদের চোখ দেখতে পায়। সাতটি রঙ এক হয়ে সাদা হয়ে আলো আমাদের চোখে ধরা দেয়। সেটাই দৃশ্যমান আলো।

এই আলোই কোনো বস্তুর উপর প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে সেই বস্তুকে দেখতে সাহায্য করে। আর ঠিক সেই কারণেই অন্ধকারে, একদম নিকষ কালো অন্ধকারে আমরা কোনো বস্তুকে দেখতে পাইনা।

আলোর মধ্যে যে সাতটি রঙ থাকে সেগুলিই আমরা বর্ষাকালে রামধনুতে দেখি — বেগুনি, নীল, আকাশী, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। মনে রাখার জন্য এই সাতরঙের নাম হয়েছে ‘বেনীআসহকলা’।

আমরা খালি চোখে এই সাতটি রঙই দেখতে পাই। আবার এই সাতরঙের মিশ্রণে যে রঙগুলো হয় সেগুলোও আমরা দেখতে পাই।

কোনো বস্তুর কি রঙ দেখাবে সেটা বস্তুর একটি বিশেষ ধর্মের উপর নির্ভর করে। প্রতিটি বস্তুর একটি বিশেষ ধর্ম আছে।

বস্তুর উপর আলো পড়ে যখন সেটা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে তখন সেই বস্তুটি আলোর তরঙ্গ-মিশ্রণের থেকে বেশ কিছু বা প্রায় সব তরঙ্গই শোষণ করে নিতে পারে।

কখনও কখনও আবার শোষণ না করে সমস্ত রঙের তরঙ্গগুলিকেই প্রতিফলিত করে দিতে পারে। বস্তু থেকে প্রতিফলিত ঐ আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে। আমরা তখন সেই বস্তুটিকে দেখতে পাই।

কিন্তু বস্তুটিকে কি রঙে দেখব? সেটা ঠিক হয়ে যায় বস্তুটির উপর আলো পড়ার সময়েই। আলো পড়লে বস্তুটি বেশ কিছু রঙের তরঙ্গকে শোষণ করে নিয়ে একটি বা মিশ্রিত কিছু তরঙ্গকে প্রতিফলিত করে। বোঝার সুবিধার জন্য ধরে নিই বস্তুটির রঙ লাল।

তার মানে বস্তুটি লাল রঙের তরঙ্গটি বাদ দিয়ে বাকি তরঙ্গগুলিকে শোষণ করে নেয়। লাল তরঙ্গের আলোক রশ্মিটি প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পৌঁছায়।

আমরা সেই বস্তুটিকে লাল দেখি। আবার সবুজ বস্তু থেকে সবুজ তরঙ্গটি প্রতিফলিত হয়, বাকি সব রঙের তরঙ্গগুলি বস্তুটিতে শোষিত হয়ে যায়।

কিন্তু নানা ধরণের সবুজ তো রয়েছে। গাঢ় সবুজ, হাল্কা সবুজ, কলাপাতা সবুজ। আসলে সেই বস্তুগুলি থেকে সবুজ তরঙ্গের সঙ্গে হলুদ রঙের তরঙ্গও প্রতিফলিত হয়। কখনও কখনও রঙের তরঙ্গগুলির মাপও পাল্টে যায় একটু একটু।

আর কোনো বস্তু যখন কোনো তরঙ্গকেই প্রতিফলিত করে না, সবটাই শোষণ করে নেয় তখন? তখন আমরা সেই বস্তুটিকে কালো দেখি। উল্টোদিকে যদি কোনো বস্তু আলোর সবটাই প্রতিফলিত করে দেয়, একটুও শোষণ করতে না পারে তখন আমরা সেই বস্তুটিকে সাদা দেখি।

সাদা অর্থাৎ সব রঙগুলোকেই একসঙ্গে দেখা। আর কালো মানে আসলে কোনো রঙের অনুভূতিই তৈরি হল না।

বিজ্ঞান বলছে, কালো আসলে কোনো রঙই নয়। এখানে আর একটা জিনিস জানা দরকার, সেটি হলো কোনো লাল রঙের বস্তুকে যদি নীল আলোতে রাখা হয় তখন সেই বস্তুটি ঐ নীল রঙকে শোষণ করে নেবে।

কিন্তু প্রতিফলিত করার জন্য কোনো লাল তরঙ্গ সেখানে থাকবে না। ফলে আমাদের চোখে কোনো রঙের অনুভূতি তৈরি হবে না। আমরা ঐ লাল বস্তুটিকে কালো দেখব।