মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়।
আপনি কি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার আপনার ফোনটি চেক করেন কিংবা প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একবার? প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন মোবাইল পেছনে?
ঘুমানোর সময় বালিশের পাশে ফোন রেখে ঘুমাচ্ছেন? আপনি অন্যান্য কাজ, এমনকি খাবার খাওয়ার সময়ও মোবাইল ব্যবহার করেন?
যদি এসব অভ্যাস আপনার মধ্যে থাকে তাহলে আপনি মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। বর্তমান সময়ের মোবাইল আসক্তি মানসিক অসুস্থতার একটি বিশেষ রূপ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে মোবাইল আসক্তি।
এছাড়া সামাজিকতা, অসুস্থতা সহ অনেক সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে মোবাইল আসক্তি।
ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইলে প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘন্টা সময় ইন্টারনেট ব্রাউজ এবং মেসেজ আদান প্রদান করে ব্যয় করে। আমেরিকার ৮২% মানুষ বিশ্বাস করে যে, তাদের মধ্যে মোবাইলের আসক্তি বিদ্যমান।
আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় মোবাইল ছাড়া যেন একদিনও চলা সম্ভব নয়। রাত জেগে ইন্টারনেট ব্যবহার, গেমসখেলা, চ্যাট করা ইত্যাদি।
এসব যেন আমাদের পরিবার-আত্মীয় স্বজন থেকে আমাদের একটা দূরত্ব তৈরি করে দেয়। এই আসক্তি আমাদের শরীর ও মনে ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
রাতের ঘুমের ব্যাঘাত যেমন নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি টানাপড়েন শুরু হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পর্কেও। সবথেকে বেশি প্রভাব পরে আমাদের ব্রেনে।
তাই আমাদের উচিত মোবাইলের আসক্তি বা মোবাইলের ব্যবহার কমানো। আসুন জেনে নিন কিভাবে আপনি আপনার মোবাইলের আসক্তি কমাবেন –
কিছু নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন:
আপনি আপনার ফোনটি অবশ্যই কম ব্যবহার করবেন। তবে এটি নির্দিষ্ট সময় থাকবে যে সময় ফোন ব্যবহার করবেন না।
যেমন খাবার খাওয়ার সময়, পড়ার সময় বা কাজের সময়, বিশ্রামের সময়, পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সময় ইত্যাদি।
নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন:
অনেকেই ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে নোটিফিকেশন দিয়ে রাখেন। প্রতিমিনিটে নোটিফিকেশন আসার ফলে আপনি চেক করেন। এতে মোবাইল আসক্তি আরও বেরে যায়।
তাই ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সেটিংস অপশন থেকে নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন।
‘না’ বলার উপর জোর দিন:
নিজের মনকে স্থির করতে হবে এবং বলতে হবে ‘আমি আমার মোবাইল ফোনটি প্রতিদিন এক ঘন্টার বেশি ব্যবহার করবো না’ এবং কোনোভাবেই এই চিন্তার বাইরে যাওয়া যাবে না।
ফোনের থেকে দূরত্ব সৃষ্টি করুন:
খুব বেশি জরুরি প্রয়োজন না হলে মোবাইল ফোনটি একেবারে কাছে রাখার দরকার নেই।
শুয়ে-বসে হাত বাড়ালেই ফোনটি পাবেন, আসক্তি দূর করতে চাইলে এমন নৈকট্য পরিহার করুন।
অ্যালার্ম ঘড়ি হিসাবে আপনার ফোন ব্যবহার করবেন না:
অ্যালার্ম হিসাবে ঘড়ি ব্যবহার করুন, মোবাইল নয়। অনেকেই অ্যালার্ম এর অযুহাতে মোবাইল এর ব্যবহার আরও বেশি বেড়ে যায়।
হাত ঘড়ি ব্যবহার করুন:
এক সময় টাইম দেখার জন্য যেন ঘড়ি ব্যবহার ছিল। কিন্তু স্মার্ট ফোন আসার পর যেন টাইম দেখার অজুহাতে মোবাইল টা যেন কাছ ছাড়া করতে চাই না।
তাই সময় জানার জন্য হাত ঘড়ি ব্যবহার করুন।
‘লুডিক লুপ’ থামিয়ে দিন:
‘লুডিক লুপ’ কী? একই কাজ বারবার করতে থাকার ধারণাকেই গবেষকেরা নাম দিয়েছেন ‘লুডিক লুপ’। এটা মোবাইলের ক্ষেত্রে বেশি হয়।
কখনো কি এমন হয়েছে যে আপনি ভেবেছেন চটজলদি ফোনটা একনজরে দেখেই রেখে দেবেন? এবং তারপর ঘন্টার পর ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এমনটা করা থেকে বিরত থাকুন।
ফোন রেখে, বই ধরুন:
ফোন দূরে সরিয়ে রেখে আপনার প্রিয় বইটি কাছে রাখুন। হাত বাড়ালেই হয়তো ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু বইটি যেন পাওয়া যায়।
এভাবেই আপনি আপনার মোবাইলের আসক্তি কমাতে পারেন এবং বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
হতেই পারে বই আপনার পছন্দের নয়। কিন্তু এমন অনেক জিনিস আছে আপনার পছন্দের, মোবাইল ফোনটি দূরে সরিয়ে এবার তাদের সঙ্গে সময় কাটান।
ফোন ব্যবহার করার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় সেট করুন:
নিজের সাথে চুক্তি করুন। নিজেকে দঢ়ভাবে বলুন আমি শুধু দিনের ভিতর নির্দিষ্ট সময়ে আমার ফোনটি ব্যবহার করবো। সেটা যেকারণেই হোক না কেন একটি নির্দিষ্ট সময় পরে ফোনটি আর ব্যবহার করবো না।
নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ ডিলিট করে রাখুন:
গেমিং, টেস্টিং অ্যাপ্লিকেশনের পাশাপাশি সামাজিক সোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপ্লিকেশন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর। তাই মোবাইল এর প্রতি আসক্তি কমাতে এই অ্যাপ ডিলিট করে রাখুন।
বিছানায় যাওয়ার আগে ফোন দূরে রাখুন:
ঘুমানোর সময় বালিশের পাশে মুঠোফোন নিয়ে ঘুমাবেন না। আমরা বিছানায় শুয়ে সব থেকে বেশি ফোন ব্যবহার করি। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয় একটু মোবাইলটা চেক করে যায়।
একটু থেকে ১০ মিনিট ১ ঘন্টা পার হয়ে যায় ফোন আর রাখতে ইচ্ছে করে না। তাই বিছনায় যাওয়ার আগে ফোন বিছানা থেকে দূরে রাখুন।
গ্রুপ চ্যাট গুলো মিউট করে রাখুন:
মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় নষ্টের সব চেয়ে বড় মাধ্যম হলো গ্রুপ চ্যাট। তাই গ্রুপ চ্যাট গুলো মিউট করে রাখুন।
এছাড়া খাওয়ার সময় কখনোই ফোনের পর্দায় চোখ রাখবেন না। খাওয়া উপভোগ করার জন্য ফোন থেকে দূরে থাকুন।
প্রতিদিন সকালে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ও রাতে বই পড়ার অভ্যাস স্মার্টফোনে আসক্তি অনেকটা কমিয়ে আনে।
দৈনন্দিন কাজের হিসাব, মিটিং কখন, কোথায় তা লেখার জন্য মুঠোফোনের অ্যাপ ব্যবহারের চেয়ে কিছুদিন ডায়েরিতে হাতে-কলমে লেখার অভ্যাস করুন।
কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে সেলফি কিংবা ফোনে ছবি তোলার বদলে অনুষ্ঠানের অতিথিদের সঙ্গে পরিচিতি বাড়ান আর গল্প করার অভ্যাস করুন।