ভোম্বল রাজার গল্প।
অনেক দিন আগের কথা। এক দ্বীপে গড়ে উঠেছিলো এক রাজ্য। সে রাজ্যের নাম ভোম্বল রাজ্য। এই রাজ্যের রাজা ছিলেন ভোম্বল সেন। অনেক সৈন্য সামন্ত ছিলো তার। ধন সম্পদেও পরিপূর্ণ ছিলো সে রাজ্যের কোষাগার। রাজা ছিলেন খুব অহংকারী আর দাম্ভিক।
রাজ্যের সকল মানুষ রাজার অহংকারের কারণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলো। রাজার ছিলো তিনটি কন্যা ও একটি পুত্র। রাণী সুন্দরী না হলেও তিনটি কন্যাই ছিলো ভীষণ সুন্দরী। বড় কন্যার যখন জন্ম হয়েছিলো তখন পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত ছিলো ধরণী।
মেঝ কন্যার জন্মের সময় ছিলো দীপাবলি। আর ছোট মেয়ের জন্ম হয় লক্ষী পূজোর সময়। রাজার একমাত্র পুত্র গৌরব যখন জন্ম নেয় তখন ছিলো অমাবস্যা। হয়তো সে কারণেই রাজার পুত্রের গাত্র বর্ণ ঘোলাটে।
তিন কন্যা ও এক পুত্রকে নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিলো রাজার দিনকাল। অহংকারী রাজা একদিন ঘোড়ার গাড়ি করে দেশভ্রমণে বের হয়েছেন। কিছু পথ যেতে তিনি জয়শ্রী নামক এক নগরে প্রবেশ করলেন।
সেখানে এক রূপবতী মৎস্য কন্যাকে দেখে তার পছন্দ হয়ে যায়। সাথে সাথে বিয়ে করে নিয়ে আসেন রাজমহলে। এই দেখে বড় রাণীতো রেগে আগুন। তিনি রাজার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন।
এদিকে রাজা তার ছোট রাণীকে অধিক সময় দেন। বড় রাণী তার সাথে কথা না বলায় রাজা বলেন, ‘ছোট রাণী খুব সুন্দরী। তাই তোমার এখানে না থাকলেও চলবে।’ বড় রাণী রাগ করে তার তিন কন্যা ও পুত্রকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান।
ছোট রাণীকে নিয়ে রাজা বেশ সুখেই ছিলেন। দুই বছর পর ছোট রাণীর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। খুব সুন্দর এই রাজপুত্রকেই রাজা তার সিংহাসনে বসাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। সন্তান বড় হতে থাকে। রাজপুত্র হলেও এই কুমারের মধ্যে মৎস্য শিকারের প্রতি ছিলো অত্যধিক আকর্ষণ।
কয়েক বছর পর এই রাজকুমার সমুদ্রে মৎস্য শিকারের উদ্দেশ্যে বের হয়। শিকার শেষে ফেরার পথে সামুদ্রিক ঝড়ে হারিয়ে যায় এই রাজপুত্র। রাজার কাছে খবর আসে রাজপুত্র সমুদ্রের জলে ডুবে গেছে। রাজা ভেঙ্গে পড়লেন। ছোট রাণী কাঁদতে কাঁদতে বুক ভাসালেন।
এদিকে সমুদ্রের ঢেউয়ে সাঁতার কেটে কেটে কোনো রকম ভাবে রাজপুত্র এক নগরের কিনারায় এসে পৌঁছায়। প্রাণে বেঁচে যায় সে। আশ্রয় নেয় এই নগরের রাজা ধনেশ চন্দ্র সেন এর গোয়াল ঘরের রক্ষক হিসেবে। প্রাচুর্যের মাঝে বেড়ে ওঠা রাজকুমার কি পারে এসব কাজ করতে? ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। বাধ্য হয়েই করতে হয় এসব কাজ।
ভোম্বল রাজার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ধনেশ রাজার কন্যা। বড় রাণী ও তার সন্তানেরা এই রাজ্যেই ছিলেন। হঠাৎ একদিন খবর আসে ভোম্বল রাজ্যে বহিঃশুত্রু আক্রমণ করেছে। অহংকারী রাজার রাজ্যের অবস্থা ভয়াবহ।
এই খবর শুনে রাণী তার পিতা ধনেশ চন্দ্রের সহায়তায় সৈন্য সামন্ত নিয়ে ভোম্বল রাজ্য রক্ষা করতে যান। প্রচন্ড যুদ্ধ হয় বহিঃশত্রুর সাথে। শেষে রক্ষা পায় ভোম্বল রাজ্য। বড় রাণীর পুত্র গৌরবের হাতেই পরাজিত হয় বহিঃশত্রু।
সেই সময় ভোম্বল রাজা বন্দি ছিলেন জেলখানায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে আনে বীর গৌরব। এই দেখে রাজার অহংকার চূর্ণ বিচূর্ণ হয়। যে রাণীকে অবহেলা করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো অবশেষে সেই রাণী ও তার পুত্রই তাকে প্রাণে বাঁচায়।
পরে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা তার বড় পুত্রকেই যুবরাজ পদে অধিষ্ঠিত করেন। পরিশেষে রাজা ভাবেন, মানুষের অহংকারই তার দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়