পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হলে কি খাবেন?
বিকেল বা সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুসকা, চটপটি বা ঝালমুড়ি মজা করে খাওয়া। তারপর রাতে হঠাৎ পেট ব্যথা। পাকস্থলিতে ঘটেছে ব্যঘাত। এই সময় কী করবেন? রাস্তার ধুলাবালি, জীবাণু— খাবার অস্বাস্থ্যকর করে তোলে।
তাছাড়া অস্বাস্থ্যকর ও বাসি খাবার খেলে বদ হজমসহ পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি বমিভাব বা বমি, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা এবং ডায়রিয়া থেকে পানিশূন্যতা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
ডায়রিয়া হলে অনেকেই খাবারদাবার একেবারে বন্ধ করে দেন। আবার কেউ কেউ তখন শুকনো খাবার খাওয়াটা উচিত বলে মনে করেন। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার জন্য দায়ী কিছু জীবাণু রয়েছে। মূলত দূষিত পানি ও খাবারের সঙ্গে এসব জীবাণু পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে পেটের স্বাভাবিক নিয়মে গোলযোগ ঘটায়। এতে ঘন ঘন পায়খানা হয়।
শরীর থেকে বেরিয়ে যায় প্রচুর পানি, ইলেকট্রলাইট। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ডায়রিয়া হলে প্রথমেই একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে সেটি হচ্ছে শরীর যেন প্রয়োজনীয় পানি ও ইলেকট্রলাইট পায়।
এজন্য ডায়রিয়া রোগীকে শুকনো খাবারের পরিবর্তে জলীয় খাবার, শুধু পানি, ডাবের পানি, শরবত, বিশেষ করে ওরাল স্যালাইন পানের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হলে কোন খাবার গুলো খাবেন বা খাওয়া জরুরি-
মৌরি:
পেট ঠাণ্ডা করতে অনেকেই নিয়মিত মৌরি খান। তবে হয়তো জানেন না, নিয়মিত মৌরি খেলে পেট খারাপের মতো রোগের প্রকোপ কম থাকে। মৌরিতে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গ্যাসের সমস্যায়ও দারুন উপকারী।
এক্ষেত্রে প্রথমে এক কাপ গরম পানিতে দুই চামচ মৌরি মিশিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর পানিটি ছেঁকে আলাদা করুন। এই মিশ্রণটি দিনে ২-৩ বার খেলেই দেখবেন সমস্যা কমতে শুরু হয়েছে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিক বা ডায়রিয়ার সমস্যায় মৌরি চা বা মৌরি খেতে পারেন।
কাঁচা পেঁপে:
পেট ঠিক রাখতে অনেকেই কাঁচা পেঁপে খান। এটা অনেকটাই ঔষুধের মতো কাজ করে। পেঁপেতে থাকা পাইবার অ্যাসিডিটি বা অম্লতা, পাইলস ও ডায়রিয়া দূর করতে পারে।
কাঁচকলা:
শুধু পেট খারাপই নয়, যেকোনো ধরনের পেটের রোগ সারাতেই এই ফলটি দারুণ কাজে আসে। কাঁচ কলাতে থাকা প্রতিরোধী স্টার্চ এবং পেকটিন অন্ত্রের ভালো ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া পেটের ভিতরের খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করে দেয় যা ডায়ারিয়া বা পেট খারাপের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।
ডাবের পানি:
পেট খারাপের সময় আমাদের শরীরে পানিশূন্যতার পাশাপাশি পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। ইলেকট্রোলাইটের (পুষ্টির) ভারসাম্য দূর করতে এবং পানির চাহিদা মেটাতে ডাবের পানির বিকল্প হয় না বললেই চলে।
শুধু তাই নয়, প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি দূর করে পেটের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পেট খারাপের মোকাবিলা করতে দিনে কম করে ২ গ্লাস ডাবের পানি খেতেই হবে। স্যালাইনের সুবিধা নেই এমন এলাকায় ডাবের পানিকে চিকিৎসকরা স্যালাইন হিসাবে ব্যাবহার করে থাকে।
দই:
পেট খারাপ হলেই এক বাটি তাজা টক দই খেয়ে নেবেন। তাহলেই বারে বারে আর বাথরুমে ছুটতে হবে না। আসলে টক দইয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক অর্থাৎ উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি ডায়ারিয়া কমাতে দারুন উপকারে লাগে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার:
পেট খারাপের প্রকোপ কমাতে এই উপাদানটি দারুণ কাজে আসে। আসলে এতে থাকা প্যাকটিন নামে একটি উপাদান পেটের যন্ত্রণা কমানোর পাশাপাশি পেটকে একেবারে চাঙ্গা করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। প্রতিবার খাবার খাওয়ার পরে ১ গ্লাস করে এই পানীয় খেলে দারুন উপকার পাবেন।
মেথি বীজ:
মেথি পেট খারাপ হওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে আনে। দিনে এক চামচ দইয়ের সঙ্গে এক চামচ মেথি বীজ মিশিয়ে ২-৩ বার খেলে পেটের সমস্যা কমে যাবে। এতে পায়খানা পরিষ্কার হতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে পেটের যন্ত্রণা এবং বদ হজমও কমে যাবে।
দারুচিনি:
এতে রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যা চোখের নিমেষে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। সেই সঙ্গে পেট খারাপের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে দিনে ৪ বার দারুচিনি পাউডার দিয়ে তৈরি চা খেলেই উপকার মিলতে শুরু করবে।
এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ দারুচিনি পাউডার মিশিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিন। তারপর তা পান করুন। দেখবেন পেটের রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না।
জিরা পানি:
বহু দিন ধরে জিরা পানি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি হজম এনজাইমগুলির ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি করে হজমের গতি বাড়িয়ে তোলে। হজমে সমস্যা আছে ৫৭ জন রোগীর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে ঘন ঘন জিরা পানি গ্রহণের ফলে হজমে উন্নতি হয়েছে।
জিরা পানি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত জিরা পানি পান করতে পারেন।
থানকুনি পাতা:
নিয়মিত থানকুনি পাতা রান্না করে খেলে হজম শক্তি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। থানকুনি পাতা সকল ধরনের পেটের রোগের মহৌষধ। থানকুনি পাতা বেটে খাওয়া সবথেকে ভালো। পাতা বেটে মিহি করে একটু লবন ও সর্ষের তেল সহযোগে গরম ভাতের সঙ্গে খান।
এছাড়া থানকুনি পাতা কাচ কলা বা দয়া কলা ও আলু দিয়ে ঝোল রেঁধেও খেতে পারেন। এভাবে খেলে বদহজম, ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটব্যথা সেরে যায়। মুখে রুচি আনে।