টুনটুনি ও নাপিত।
একটি বেগুন গাছে বাস করতো ছোট্ট একটা টুনটুনি পাখি। একদিন সে মনের খুশিতে সেই বেগুন গাছের পাতায় বসে নাচতে লাগলো। হঠাৎ নাচতে-নাচতে খেল বেগুন কাঁটার খোঁচা। তাই থেকে তার হল মস্ত বড় ফোড়া।
ও মা, কি হবে? এত বড় ফোড়া কি করে সারবে? এই বলে সে শুধু চিৎকার করতে লাগলো।
টুনটুনি একে জিগগেস করে, তাকে জিগগেস করে। সবাই বলল, ওটা নাপিত দিয়ে কাটিয়ে ফেল। এই শুনে টুনটুনির সে কি ভয় কিন্তু কি আর করার ফোড়াতো কাটাতে হবেই। তাই টুনটুনি নাপিতের কাছে গিয়ে বলল, নাপিতদাদা, নাপিতদাদা, আমার ফোড়াটা কেটে দাও না।
নাপিত তার কথা শুনে ঘাড় বেঁকিয়ে নাক সিঁটিকিয়ে বলল, ঈস্! আমি রাজাকে কামাই, আমি তোর ফোড়া কাটতে পারবো না।
টুনটুনি বলল, আচ্ছা দেখতে পাবে ফোড়া কাটতে যাও কিনা? বলে সে রাজার কাছে গিয়ে নালিশ করল রাজামশাই আপনার নাপিত কেন আমার ফোড়া কেটে দিচ্ছে না?
ওকে সাজা দিতে হবে। এই কথা শুনে রাজামশাই হো-হো করে হাসলেন, বিছানায় গড়াগড়ি দিলেন, নাপিতকে কিছু বললেন না। তাতে টুনটুনির ভারী রাগ হল।
সে ইঁদুরের কাছে গিয়ে বলল, ইঁদুরভাই, ইদুরভাই, বাড়ি আছ?
ইঁদুর বলল, কে ভাই? টুনিভাই! এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?
টুনটুনি বলল, খাব তবে একটি কাজ করতে হবে।
ইঁদুর বলল, কি কাজ?
টুনটুনি বলল, রাজামশাই যখন ঘুমিয়ে থাকবেন, তখন গিয়ে তাঁর ভুঁড়িটা কেটে ফুটো করে দিতে হবে।
তা শুনে ইঁদুর জিভ কেটে কানে হাত দিয়ে বলল, ওরে বাপরে! আমি তা পারব না। তাতে টুনটুনির রাগ হলো। সে বিড়ালের কাছে গেল আর তাকে বলল, বিড়াল ভাই, বিড়ালভাই, বাড়ি আছ?
বিড়াল বলল, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
টুনটুনি বলল, এক শর্তে ভাত খেতে পারি যদি ইঁদুর মার।
বিড়াল বলল, এখন আমি ইঁদুর-টিদুর মারতে যেতে পারব না, আমার বড্ড ঘুম পেয়েছে। শুনে টুনটুনি রাগের ভরে লাঠির কাছে গিয়ে বলল, লাঠিভাই, লাঠিভাই, বাড়ি আছ?
লাঠি বলল, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?
এখানেও টুনটুনি সেই একই কথাই বলল, যদি বিড়ালকে ঠেঙাও।
লাঠি বলল, বিড়াল আমার কি করেছে যে আমি তাকে ঠেঙাতে যাব? আমি তা পারব না। তারপর টুনটুনি আগুনের আছে গিয়ে বলল, আগুনভাই, আগুনভাই, বাড়ি আছ?
আগুন বলল, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?
টুনটুনি বলল, ভাত খাব, যদি তুমি লাঠি পোড়াও।
আগুন বলল, আজ ঢের জিনিস পুড়িয়েছি আজ আর কিছু পোড়াতে পারব না। তাতে টুনটুনি তাকে খুব করে বকে আর সাগরের কাছে গিয়ে বলে সাগরভাই, সাগরভাই, বাড়ি আছ?
সাগর বলল, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?
টুনটুনি বলল, খাব যদি তুমি আগুন নিবাও।
এই শুনে সাগর বলল, আমি তা পারব না। তখন টুনটুনি হাতির কাছে গিয়ে বলল, হাতিভাই, হাতিভাই, বাড়ি আছ?
হাতি বলল, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?
টুনটুনি বললে, খাব যদি সাগরের জল সব খেয়ে ফেল।
হাতি বলল, অত জল আমি খেতে পারব না, আমার পেট ফেটে যাবে।
কেউ তার কথা শুনল না দেখে টুনটুনি শেষে মশার কাছে গেল। মশা দূর থেকে তাকে দেখেই বলল, কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?
টুনটুনি বলল, খাব যদি হাতিকে কামড়াও।
মশা বলল, এটা কোনো ব্যাপার না কি দেখ আমি এখুনি যাচ্ছি। দেখব হাতি বেটার কত শক্ত চামড়া। বলে, সে সকল দেশের সকল মশাকে এক জায়গায় ডেকে বলল, তোরা আয় তো রে ভাই, দেখি হাতি বেটার কত শক্ত চামড়া। অমনি পীন্-পীন্-পীন্-পীন্ করে যত রাজ্যের মশা, বাপ বেটা ভাই বন্ধু মিলে হাতিকে কামড়াতে চলল।
মশায় আকাশ ছেয়ে গেল, সূর্য ঢেকে গেল। তাদের পাখার হাওয়ায় ঝড় বইতে লাগল। পীন্-পীন্-পীন্-পীন্ ভয়ানক শব্দ শুনে সকলের প্রাণ কেঁপে উঠল। তখন—
হাতি বলে, সাগর শুষি!
সাগর বলে, আগুন নেবাই!
আগুন বলে, লাঠি পোড়াই!
লাঠি বলে, বিড়াল ঠেঙাই!
বিড়াল বলে, ইঁদুর মারি!
ইঁদুর বলে, রাজার ভুঁড়ি কাটি!
রাজা বলে, নাপতে বেটার মাথা কাটি!
নাপিত হাত জোড় করে কাঁপতে-কাঁপতে বলল, রক্ষে কর টুনিদাদা। এস তোমার ফোড় কাটি। তারপর টুনটুনির ফোড়া সেরে গেল আর সে ভারী খুশী হয়ে আবার গিয়ে নাচতে আর গাইতে লাগল— টুনটুনা টুন্ টুন্ টুন্! ধেই ধেই!