কানামাছি ভোঁ ভোঁ গল্প।
পাখিদের কথা
—————————
গ্রামের নাম শীতলপুর। তপুর মামাবাড়ি। গ্রামখানি ছবির মতো সুন্দর। প্রতিবছর গ্রীষ্মের ছুটিতে তপু মামাবাড়ি যায়। সাথে মা-বাবা আর বড় বোন কান্তা। শহর ছেড়ে দূরে কয়েকটা দিন খুব আনন্দে সময় কাটে।
গ্রামে তপু আর কান্তার অনেক বন্ধু। মামাতো ভাইবোন রিতু, সোমা আর জিশান তো আছেই। আরও আছে পাশের বাড়ির কেয়া, কনক, শিহাব, সুবিমল, রাতুল এবং আরও অনেকে। সবাই একসাথে হইচই আর আনন্দে সময় কাটায়। দুপুরে বাগানে মিছামিছি বনভোজন হয়। বিকেলে হয় খেলা। আর রাতে উঠানে মাদুর পেতে গল্প।
এবার গ্রামে তপু একটা নতুন খেলা শিখল। নাম কানামাছি। কি যে মজার খেলা! অনেকে মিলে একসাথে খেলা যায়। সেদিন খেলার শুরুতে রাতুলের দুই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল সোমা। এমনই নিয়ম। তবে প্রথমে কার চোখ বাঁধা হবে সেটা নিজেদেরই ঠিক করে নিতে হবে। পলাশ পাশ থেকে বলল, রাতুল সব দেখতে পাচ্ছে। সোমা আপু, তুমি শক্ত করে বাঁধো নি।
সোমা রাতুলের চোখের সামনে একটা আঙ্গুল উঁচিয়ে ধরে বলল, কয়টা আঙ্গুল বলো তো? রাতুল বলল, পাঁচটা।
সবাই একচোট হেসে উঠল। বোঝা গেল, রাতুল কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।
এরপর শুরু হলো আসল খেলা। রাতুলের চারদিকে ঘুরতে লাগলো সবাই। একঝাঁক মাছির মতো। কেউ তাকে হালকাভাবে ধাক্কা দিচ্ছে, কেউ দিচ্ছে গায়ে টোকা। আর মুখে কাটছে মজার ছড়া-
কানামাছি ভোঁ ভোঁ
যাকে পাবি তাকে ছোঁ।
খেলার নিয়মমতো রাতুল এদিক ওদিক হাত বাড়িয়ে কাউকে ধরার চেষ্টা করছে। সেও ছড়া কাটছে-
আনি মানি জানি না
পরের ছেলে মানি না।
আনি মানি জানি না
পরের মেয়ে মানি না।
এমনি চলতে চলতে হটাৎ করে রাতুল কান্তাকে ধরে ফেলল। বলল, এটা কান্তা আপু। ব্যাস, রাতুলের মুক্তি। চোখ বাঁধা হলো কান্তার। এবার সবাই চোখ বাঁধা কান্তাকে ঘিরে ঘুরতে শুরু করল। মুখে সেই ছড়া। কান্তাও খুব অল্প সময়ে ছড়া শিখে নিয়েছে।
বাড়ির পিছনে ছোট্ট মাঠে খেলা চলছিল। এমন সময় মামা এলেন। বললেন, আমায় নেবে তোমাদের সঙ্গে? সবাই আনন্দে হইচই জুড়ে দিল। মামাও ছোটদের সঙ্গে তাঁর শৈশবে ফিরে গেলেন যেন। খেলা শেষে মামাকে ঘিরে গোল হয়ে বসল সবাই। তপু অবাক চোখে জিজ্ঞেস করল, মামা তুমিও এ খেলা জানো?
মামা হেসে উঠলেন। বললেন, জানি মানে? এ তো অনেক পুরানো খেলা।