কাক ও সাপের গল্প।

তরুলতায় ভরা ঘন এক বন। বনের বিরাট একটি গাছের মগডালে ছিল একটি কাকের বাসা। কাকটির মনে খুব কষ্ট ছিল। নিজের পালকগুলো দেখে তার মনে হতো এই রঙ তার মনের ভেতরে জমাট বাঁধা বেদনার। কিন্তু কেন? এমন কী ঘটেছে কাকের জীবনে? কেন তার জীবনের থরে থরে কষ্টের এতো কালো আঁধার?

এর কারণ কাক যে গাছটিতে বাসা বেঁধেছিল ওই গাছের কাছে বিরাট একটা সাপের বাসাও ছিল। সাপটা যেমন ছিল বড়োসড়ো তেমনি দেখতেও ছিল ভীষণ কুৎসিত। বলা যায় কাকের পুরোণো প্রতিবেশি এই সাপ। কিন্তু কাজে সাপটা একেবারেই প্রতিবেশিসুলভ ছিল না।

কাক যখন তার বাসায় ডিম পাড়তো এবং ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটাতো, সাপটা তখন সুযোগের অপেক্ষায় থাকতো বাচ্চাগুলোকে খাওয়ার জন্য। যখনি কাক বাচ্চাদের জন্য খাবার আনতে যেত সেই সুযোগে সাপটা কাকের বাচ্চাগুলোকে খেয়ে ফেলতো।

পরপর অনেকবার এভাবে সন্তানদের হারিয়ে কাক কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল।

কাকের বাসায় এখনো বেশ কটি ছানা আছে। কিন্তু কাক কিছুতেই বাচ্চাগুলোকে বাসায় রেখে বাইরে যেতে চাচ্ছে না। আবার না গিয়েও উপায় নেই। বাচ্চাদেরকে তো খাওয়াতে হবে। কী করা যায়…ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল কাক।

পাশেই ছিল আরেক প্রতিবেশী শেয়াল। অনেকদিন ধরেই এখানে শেয়ালের বাস। কাক ভাবলো শেয়ালের কাছে বাচ্চাগুলোকে রেখে গেলে কেমন হয়। সাথে সাথেই কাক বাচ্চাগুলোকে পায়ের নখে আটকে নিয়ে চলে গেল শেয়ালের কাছে।

কাকের অবস্থা দেখে শেয়াল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে কাক! এরকম বিমর্ষ লাগছে কেন তোমাকে?

কাক বললো, আমার এক প্রতিবেশী সাপ আমার বহু বাচ্চাকে খেয়েছে।

শেয়াল বললো, এটা তো কোনো ব্যাপারই না। তুমি বাসা পাল্টাও, অন্য কোনো গাছে গিয়ে বাসা বানাও, তাইলেই তো আর সমস্যা থাকে না।

কাক বললো, হ্যাঁ ঠিকই বলেছো, এছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখছি না। কিন্তু এখান থেকে অন্য কোথাও যাবার আগে চাচ্ছি প্রতিশোধ নিতে।

শেয়াল বললো, কিন্তু এটা তো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হলো না। কেননা তুমি রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়েছো। রাগের মাথায় কোনো কাজ করার সিদ্ধান্তত নিলে সে কাজের পরিণতি ভালো হয় না। সাপের সাথে তো তুমি পারবে না।

কাক বললো, ঠিক বলেছো, কিন্তু কী করবো তাহলে?

শেয়াল খানিক চুপ থেকে কী যেন বুদ্ধি আঁটলো। কাককে সে বললো। মনে হলো যেন সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি কাক তার বাচ্চাগুলোকে শেয়ালের কাছে রেখে বিদায় নিয়ে উড়াল দিলো।

উড়তে উড়তে কাক গিয়ে পৌঁছলো এক গ্রামের কাছে। সেখানে একটি বাড়ির উঠোনে এক মহিলাকে দেখলো পানির হাউজের পাশে বসে জামা কাপড় ধুচ্ছে।

তার সোনার আংটিটা আঙুল থেকে খুলে পাশেই রেখে দিয়েছে। কাক ওই ঘরটির ছাদের ওপরে নেমে বসলো। তেমন একটা নড়াচড়া করলো না। মহিলা তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে শেষ করে যখন রোদে শুকাতে দিতে গেল কাক তখন আংটিটা দুই ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আস্তে আস্তে উড়াল দিলো।

মহিলা দেখেই চিৎকার চেঁচামেচি করে মানুষ জড়ো করে ফেললো। লাঠিসোটা যে যা পেয়েছে হাতের কাছে তাই নিয়েই তারা কাকের পেছনে পেছনে দৌড়তে লাগলো। কাক উড়তে উড়তে গিয়ে পৌঁছলো তার বাসার কাছে সাপের গর্তের ঠিক উপরে। লোকজনও দৌড়তে দৌড়তে সাপের গর্তের কাছে গেল। অমনি কাক সোনার আংটিটা নীচে ফেললো। আংটি গিয়ে পড়লো ঠিক সাপের গর্তের মুখে।

সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে এলো। আংটিটার কাছে যেতেই লোকজন ভালো করে লাঠিপেটা করলো সাপটাকে। কাক উড়াল দিয়ে সোজা চলে গেল শেয়ালের কাছে। শেয়ালকে সব ঘটনা খুলে বললো এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালো।