মশা ও মশারির গল্প।
একটা ক্ষুধার্ত মশা। উড়তে উড়তে এক ঘরে ঢুকে পড়ল। ঢুকেই ঘরের ভেতরে টাঙানো একটা ছোট্ট মশারি দেখতে পেল। টাঙানো ছোট্ট মশারি দেখে, মনে মনে খুব খুশি হলো মশাটা। ভাবল, যেহেতু ছোট্ট মশারি টাঙানো আছে।
সেহেতু তার ভেতরে ছোট্ট শিশু ঘুমিয়ে থাকার কথা। যে কৌশলে হোক মশারির ভেতরে ঢুকতে হবে। ঢুকতে পারলে পেটপুরে কচি দেহের রক্ত খাওয়া যাবে।
আহা! কচি রক্তে কতই না স্বাদ! খাওয়ার সময় পিচ্চিটা আক্রমণও করতে পারবে না। একনাগাড়ে চুষে চুষে খেতে পারব। ভাবতেই জিভে জল টসটস করতে লাগল মশাটার।
তড়িঘড়ি করে উড়ে গেল মশারির কাছে। তার পর মশারির মাঝ বরাবর দাঁড় করানো শিকের ওপর গিয়ে বসল। শিকের ওপরে বসে এদিক-ওদিক দেখে নিলো মশাটা। আশেপাশে কোনো বড় মানুষ আছে কি না। অন্য কাউকে ঘরের ভেতরে না দেখতে পেয়ে মনে খুশির বান এলো।
পাখা মেলে, লম্বা লম্বা ঠ্যাং দোলাতে দোলাতে মশারির চার দিকে ঘুরতে লাগল মশাটা। মশারিতে কোনো বড় ফাঁকফোকর আছে কি না খুঁজতে লাগল। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। আর ধার দিতে লাগল তার সূচালো হুলে। যে হুল দিয়ে মজা করে রক্ত খাবে সে।
মশাটার এমন ঘোরাঘুরি দেখে, মশারি তার সন্তানতুল্য ছোটো ছোটো ছিদ্রগুলোকে কানে কানে বলল, তোরা আরো ছোট হয়ে যা। যাতে কোনোভাবেই দুষ্টু মশাটা ভেতরে ঢুকতে না পারে। আর পিচ্চি বাবুকে হুল ফুটিয়ে রক্ত না খেতে পারে।
একটা নিষ্পাপ শিশু আমাদের মাঝে শুয়ে আছে। তার যেন চুল পরিমাণ ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে। বাবুটা আমাদের কাছে আমানত। তাই এর খেয়ানত না করা খুবই নিকৃষ্ট কাজ। মশারির এমন হুকুম পেয়ে ছিদ্রগুলো আরো ছোটো হয়ে গেল।
এদিকে মশাটা পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে লাগল মশারিকে ঘিরে। আর ভেতরে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগল। কিন্তু কোনোভাবেই ঢুকতে পারছে না। ঢোকার কোনো পথ না পেয়ে করজোড়ে আবেদন করে মশাটা বলল, মশারি ভাই, আমাকে একটু তোমার ভেতরে ঢোকার সুযোগ দাও। ওই পিচ্চিটার একটু রক্ত খেয়ে খিদা নিবারণ করি।
মশারি বলল, না ভাই। এটা আমি করতে দিতে পারি না। পিচ্চিটাকে তার মা আমার কাছে আমানত রেখে গেছে। তুমি অন্য কোথাও চেষ্টা করো। আবর্জনা, ময়লাস্তূপ, পচা, স্যাঁতসেঁতে এমন জায়গায় গেলেই তুমি অনেক খাবার পাবে। সেখানে গিয়ে খাও।
এবার মশা রাগে গদগদ করতে করতে জোর দিয়ে বলল, না এরই রক্ত খাবো। অন্য কোথাও যাবো না। বলেই জোরে জোরে মশারির গায়ে হুল দিয়ে আঘাত করতে লাগল মশাটা।
তখন মশারি তার ছিদ্রগুলোকে বললো, তোরা মশার হুল ঢোকার সমান ফাঁকা হ। যেমনি গুঁতা মেরে ঢুকতে চাইবে, তেমনি শক্ত করে তার হুল চেপে ধরবি। তখন হুল ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য টানাটানি করবে। তাতেই তার হুল ভেঙে যাবে। তখন কাঁদতে কাঁদতে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালাবে।
যেই কথা সেই কাজ। মশারির ছিদ্রগুলো সামান্য ফাঁকা হলো। মশা জোর করে গুঁতা মেরে ভেতরে ঢুকতে গেল। আর অমনি মশার হুল গেল আটকে। এবার মশা তার সবটুকু শক্তি দিয়ে হুলে টান দিলো। তাতেই হুলটা গেল ভেঙে। তখন মশা ভাঙা হুল ধরে কাঁদতে কাঁদতে পালাল। আর মশারি তার ছিদ্রগুলোকে নিয়ে আনন্দ করতে লাগল।