বাতের ব্যথা দূর করতে কোন খাবারগুলো কার্যকরী?

সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের মুখে শুনা যায় উঠতে গেলে ব্যথা, বসতে গেলে ব্যথা গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা। বাতের প্রধান লক্ষণ হল জয়েন্ট জয়েন্ট ব্যথা, যা সাধারণত বয়সের সাথে আরও খারাপ হয়।

বাত বা আর্থ্রাইটিস বিভিন্ন ধরণের রয়েছে এগুলোর মধ্যে অস্টিওআর্থারাইটিস এবং রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস সবচেয়ে সাধারণ আর্থ্রাইটিস।

বাতের ব্যথা কি?

অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমা হয়ে এ রোগের উৎপত্তি হয়। মূত্রের মাধ্যমে যে পরিমাণ স্বাভাবিক ইউরিক এসিড বেরিয়ে যায়, তার থেকে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড যখন আমাদের যকৃত তৈরি করে অথবা খাবারের মাধ্যমে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড গ্রহণ করলে এবং কিডনি রক্ত থেকে যথেষ্ট পরিমাণে তা ফিল্টার করতে না পারলে বাতের উপসর্গগুলো দেখা দেয়।

বাত বা আর্থ্রাইটিস কেন হয় ও কাদের ঝুঁকি বেশি

অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমার কারণেই বাত হয়ে থাকে। শতকরা ২০ ভাগেরও বেশি রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাতরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে।

যেসব কারণে বাতরোগের ঝুঁকি বাড়ে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ডায়াবেটিস, কিডনির রোগে আক্রান্ত ও স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বাত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়, অন্যদিকে বাত বা অন্য ধরণের আর্থ্রাইটিস পুরুষদের বেশি হয় পুরুষ।

বাতের লক্ষণ

বাতের প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে— প্রদাহ, অস্থিসন্ধি লাল হয়ে যাওয়া, অস্থিসন্ধি ফুলে যাওয়া ও পায়ের আঙুল নাড়াতে তীব্র ব্যথা হয়।

কিছু প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে যেগুলো একটু হলেও বাতের লক্ষণগুলি কমাতে পারে। নিচে এমন কয়েকটি খাবার দেওয়া হলো যে খাবার গুলো বাতের ব্যথা কমাতে পারে —

আদা:

আর্থ্রাইটিস বা বাত একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। হাঁটুর অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ২৪৭ জনের একটি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায়, যারা আদা খেয়েছিল তাদের ব্যথা কম ছিল এবং ব্যথার ঔষুধও কম প্রয়োজন ছিল।

এক্ষেত্রে আদা দিয়ে চা খেতে পারেন। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে জিঞ্জার অয়েলও উপকারী। এক্ষেত্রে আদা দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারে।

গ্রিন টি:

গ্রিন টি একটি জনপ্রিয় পানীয়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। দিনে চার কাপ গ্রিন টি বাতের ব্যথা কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

চায়ের মধ্যে রয়েছে, পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ব্যথা ও পেশি বাত, অস্টিওআর্থারাইটিস কমাতে সাহায্য করে।

হলুদ:

হলুদ দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক এবং চীনা ঔষধে ভূমিকা পালন করেছে। আর্থ্রাইটিস (জয়েন্টে ব্যথা) পশ্চিমা দেশগুলিতে একটি সাধারণ সমস্যা। হলুদে থাকা কারকুমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ।

গবেষণায় প্রমাণিত কারকুমিন বাতের (জয়েন্টে ব্যথা) ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

রিউমাটয়েড (rheumatoid) আর্থ্রাইটিসযুক্ত ব্যক্তিদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কারকুমিন একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (ব্যথা নাশক) ঔষুধ এর থেকে বেশি কার্যকর ছিল।

নিয়মিত গোসল করুন গরম পানি দিয়ে:

বাতের ব্যথা প্রতিরোধে গরম পানি দিয়ে গোসল করার কোনো বিকল্প নেই।

আপনি যদি প্রায়ই বা দীর্ঘদিন ধরে বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে গরম পানি দিয়ে নিয়মিতভাবে গোসল করলে বেশ উপকার পেতে পারেন।

আনারস:

আনারসে ব্রোমেলাইন থাকে, যার মধ্যে ব্যথা বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই এটি আর্থ্রাইটিসযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যথা কমাতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্রোমেলাইন (bromelain) রিউম্যাটয়েড (rheumatoid) আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলি উপশম করতে পারে।

অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্রোমেলাইন সমৃদ্ধ আনারস, আর্থারাইটিস (বাতের) এর ওষুধের মতো কার্যকরভাবে ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করতে পারে।

অ্যালোভেরা:

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী ওষুধের বিকল্প হিসাবে সর্বাধিক ব্যবহৃত ঔষধি। অ্যালোভেরা মুখের ঘা দূর করতে, ব্রণ দূর করতে, ত্বকের ক্ষতি যেমন- রোদে পোড়া পোড়া ক্ষত সারানোর পাশাপাশি এটি জয়েন্টে ব্যথা কমাতেও সহায়তা করতে পারে।

কিছু গবেষকরা বলেছিলেন যে, অ্যালোভেরা খেলে অস্টিওআর্থারাইটিসের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

হরিতকী:

কিছু গবেষণা দেখায় যে হরিতকী খাওয়া হার্টের সমস্যা বা বুকে ব্যথা অনুভবকারীদের জন্য ভালো।

হরিতকীর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি বাত, গাউট এবং জয়েন্টে ব্যথার চিকিৎসার জন্য বেশ কার্যকর।

দারুচিনি:

অনেকেই জয়েন্টের সমস্যায় ভুগছেন। এক্ষেত্রে দারুচিনিকে জয়েন্টের ব্যথা কমানোর ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।

উষ্ণ গরম পানির মধ্যে এক চামচ মধু আর দারচিনি গুড়ো ভালভাবে মিশিয়ে নিন, এরপর শরীরের ব্যথা স্থানে আস্তে আস্তে মালিশ করুন।

২-৩ দিন ভালভাবে মালিশ করুন। কিছুদিন পর দেখবেন ব্যথা কমে যাবে।

এছাড়া রোগীকে প্রচুর পানি খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, সুষম খাবার ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে।
তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, রোগ হলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তার পরামর্শ মতো চলতে হবে।

রেফারেন্স: