হাট্টিমাটিম টিম

আমরা ছোট বেলা থেকে শুনতে শুনতে বড় হয়েছি হাট্টিমাটিম টিম তারা মাঠে পাড়ে ডিম। মোটামুটি কথা ফুটলেই বাঙালি শিশুদের যে কয়েকটি ছড়া শোনানো হয়, তার মধ্যে এটি একটি।

কবি পরিচিতি

রোকনুজ্জামান খানের লেখা হাট্টিমাটিম টিম শিশুদের জন্য উপযোগী একটি বাংলা ছড়া। বাংলাদেশে দাদাভাই নামে পরিচিত ছিলেন রোকনুজ্জামান খান। আমরা বেশিরভাগ সবাই জানি ছড়াটি চার লাইনের। প্রকৃতপক্ষে এটি দাদাভাই রচিত ৫২ লাইনের একটি ছড়া।

১৯৬২ সালে রচিত হয় ছড়াটি। ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমিতে সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয় ছড়াকার রোকনুজ্জামানকে। তার জন্ম অবিভক্ত বঙ্গের ফরিদপুর জেলায় ১৯২৫ সালের ৯ এপ্রিল। তার রচনার বেশিরভাগই শিশু কিশোরদের জন্য। হাট্টিমাটিম তার সেসব রচনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

হাট্টিমাটিম টিম

রোকনুজ্জামান খান

———————————-

টাটুটকে আজ আনতে দিলাম
বাজার থেকে শিম
মনের ভুলে আনল কিনে
মস্ত একটা ডিম।

বলল এটা ফ্রী পেয়েছে
নেয়নি কোনো দাম
ফুটলে বাঘের ছা বেরোবে
করবে ঘরের কাম।

সন্ধ্যা সকাল যখন দেখো
দিচ্ছে ডিমে তা
ডিম ফুটে আজ বের হয়েছে
লম্বা দুটো পা।

উল্টে দিয়ে পানির কলস
উল্টে দিয়ে হাড়ি
আজব দু’পা বেড়ায় ঘুরে
গাঁয়ের যত বাড়ী।

সপ্তা বাদে ডিমের থেকে
বের হলো দুই হাত
কুপি জ্বালায় দিনের শেষে
যখন নামে রাত।

উঠোন ঝাড়ে বাসন মাজে
করে ঘরের কাম
দেখলে সবাই রেগে মরে
বলে এবার থাম।

চোখ না থাকায় এ দুর্গতি
ডিমের কি দোষ ভাই
উঠোন ঝেড়ে ময়লা ধুলোয়
ঘর করে বোঝাই।

বাসন মেজে সামলে রাখে
ময়লা ফেলার ভাঁড়ে
কাণ্ড দেখে টাটুট বারি
নিজের মাথায় মারে।

শিঙের দেখা মিলল ডিমে
মাস খানেকের মাঝে
কেমনতর ডিম তা নিয়ে
বসল বিচার সাঁঝে।

গাঁয়ের মোড়ল পান চিবিয়ে
বলল বিচার শেষ
এই গাঁয়ে ডিম আর রবে না
তবেই হবে বেশ।

মনের দুঃখে ঘর ছেড়ে ডিম
চললো একা হেঁটে
গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে
ডিম গেল হায় ফেটে।

গাঁয়ের মানুষ একসাথে সব
সবাই ভয়ে হিম
ডিম ফেটে যা বের হলো তা
হাট্টিমাটিম টিম।

হাট্টিমাটিম টিম
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম।