সেমাই সুস্বাদু খাবারটি শক্তিদায়ক, হজমকারক ও মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়।
ঈদুল ফিতরের দিনে পরিবারের সবাই মিলে ও অতিথি আপ্যায়নে উৎসবের অনাবিল আনন্দ বাড়িয়ে তুলতে সেমাই এর অবদান অনস্বীকার্য।
সকল বাঙালিদের প্রিয় সেমাই একটি মিষ্টান্ন জাতীয় খাদ্য। নুডলস্-এর মত অতি চিকন আটার ফালিকে দুধ, চিনি এবং গরম মশলা ও বাদাম, কিসমিস সহকারে রান্না করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে এটি খুবই জনপ্রিয় খাবার, বিশেষ করে ঈদুল ফিতর উৎসবের এটি একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও এই উৎসব সেমাই ঈদ নামেও পরিচিত।
সেমাই কমবেশি সারাবছরই খাওয়া হয়ে থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে, সেমাই কেনার সময় ভাজা সেমাই না কিনে কাঁচা সেমাই কিনুন। এরপর ঘরে নিয়ে ভেজে নিন। কারণ অধিকাংশ সেমাই তৈরির কারখানায় অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি হয়ে থাকে।
তৈরির প্রক্রিয়া ছাড়াও বিশেষ করে এগুলো শুকানোর পরিবেশ ও পদ্ধতি অস্বাস্থ্যকর। সেমাই মূলতঃ দুই প্রকার: সাধারণ সেমাই ও লাচ্ছা সেমাই। সেমাই ময়দা দিয়ে তৈরি হওয়ায় পুষ্টি রয়েছে এতে। তবে ঘি দিয়ে ভাজা হয় বলে লাচ্ছা সেমাইতে পুষ্টির পরিমাণটা বেশি থাকে।
প্রস্তুতপ্রণালী:
সেমাই দুই প্রকার। যথা:
- হাতে তৈরী সেমাই
- ও মেশিনে তৈরী সেমাই।
সেমাই আটার মণ্ডকে সরু ও দীর্ঘ ফালিতে ভাগ করে প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে সেমাই মূলত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মেশিনে তৈরি করা হয়, যা বাজারে প্যাকেটজাত করে বিক্রয় করা হয়। তবে পূর্বে ঘরে সেমাই তৈরির চল ছিল, যা মূলতঃ বাড়ির মেয়েরা হাতে কেটে তৈরি করতেন এবং এটি বেশ সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া।
সেমাইয়ের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা:
আমরা জানি, সেমাই তৈরি হয় পুরো শস্য বা Whole Grain নামে পরিচিত গম থেকে। গমে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার রয়েছে। সাথে তেল বা ঘি ও চিনি, কিসমিস ও বাদাম।
দ্রুত শক্তি যোগায়:
সেমাই বা গমের কার্বোহাইড্রেট দ্রুত শক্তি যোগায় এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। চিনিতেও কার্বোহাইড্রেট যা দ্রুত শক্তি যোগায়। পরিশোধিত গমে বা ময়দায় অর্থাৎ ব্রান বা খোসা ফেলে দেওয়া হয় বলে ফাইবার কম থাকলেও এন্ডোস্পার্ম বা মাঝেরস্তর সর্বদা অটুট থাকে।
গম মূলত শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট দিয়ে গঠিত তবে এতে মাঝারি পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। ১০০ গ্রাম গমে প্রায় ৭৬g কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। দুধেও প্রচুর প্রোটিন রয়েছে।
ওজন ঠিক রাখে:
আপনি হয়তো হাসবেন বা বলবেন সেমাই আবার ওজন কমায় কিভাবে। আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রণ তো আপনার হাতে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার। পেট ভরিয়ে রাখে। ক্ষুধা কমায়। ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু এতে তো দুধ ও চিনি রয়েছে। তাহলেতো ওজন আরো বেড়ে যাবে। পরিমাণমতো খেতে সব ঠিক। তাছাড়া সবার তো আর ওজন বাড়া সমস্যা না। অনেকের তো ওজন বাড়ানোর দরকারও আছে।
হজম ঠিক রাখে:
আমরা জানি, Whole Grain বা পুরো শস্য হজম ঠিক ঠাক রাখে। এতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলো হজমের জন্য ভালো।
রুচি বাড়ায়:
সেমাই সেটা লাচ্ছা হোক বা সাধারণ দেখলেই জিভে জল চলে আসে। পুরো শস্য বা গমের উপকারিতা আমরা জানি এবং এটি অনেক সুস্বাদু। মন ভালো করে দেয়। বাচ্চারা খুব আনন্দ করে খায়।
রন্ধনপ্রণালী:
সেমাই প্রথমে তেল ছাড়া বা তেল (বা ঘি) দিয়ে বাদামী বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত ভেজে নিতে হয়। এরপর দুধ আগুনে জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। এ পর্যায়ে দুধে পরিমাণ মতো এলাচ, দারুচিনি ইত্যাদি গরম মশলা মেশানো হয়।
এর পর তাতে রুচি মাফিক চিনি মেশানো হয়। অতঃপর মশলা ও চিনি মেশানো ঘন দুধে ভাজা সেমাই মিশিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে রান্না করা হয়। অতঃপর কিসমিস দেয়া হয় এবং আরো কিছুক্ষণ আগুনে রাখা হয়।
সেমাই পরিবেশন করা হয় ছোট বাটিতে। কখনও কখনও পেস্তা বাদাম ছিটিয়ে পরিবেশন করা হয়
সতর্কতাঃ
মধ্যস্ততাই সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি অর্থাৎ পরিমিত পরিমানে খাওয়া সুস্থ্যতার চাবিকাঠি। কোনো কিছু মোটেও খাবো না সেটা যেমন ঠিক নয় আবার কোনো কিছু অতিরিক্ত পরিমানে খাবো সেটাও ঠিক নয়।
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো ওষুধ সেবন করে থাকেন তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না।
ড্রায়ারের পরিবর্তে খোলা আকাশের নিচে রোদে শুকানো এসব সেমাইয়ে মাছি বসে প্রচুর, পড়ে ধুলাবালিও। তাই এসব সেমাইতে বিভিন্ন জীবাণু বাসা বাঁধে। সেমাই রান্নার পদ্ধতিতে জীবাণুগুলো সব মরে না, কিন্তু কাঁচা সেমাই কিনে ঘরে ভেজে নিলে ভাজার তাপে জীবাণুগুলো নিশ্চিতভাবে মারা যায়।
সূত্রঃ
উইকিপিডিয়া, প্রথম আলো