সুগার নিয়ন্ত্রণে জামরুল। জামরুলের রস ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন।
এখন গ্রীষ্মকাল। দেশে এখন চলছে ফলের মৌসুম। মধুমাসে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকম ফল। এ সময় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে জামরুলও। জামরুল সাদা, লাল দুই রকমের হয়ে থাকে। সবুজ পাতার ভেতরে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে।
জামরুল বা Water Apple (Syzygium aqueum)-আমাদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত কারণ অনেকেরই বাড়িতে হয়তো এই গাছটি আছে। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় এই ফল পাওয়া যায়। এটি মূলত দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব মালয়েশিয়ার ফল। তবে এটি বাংলাদেশ-ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় চাষাবাদ হয়।
বাংলায় জামরুল, ইংরেজিতে Java Apple, Java Rose Apple, Wax Apple ইত্যাদি নাম পরিচিত। জামরুল মালয়েশিয়ায় খুব পরিচিত। তারা এটিকে ওষধি গুন্ আছে বলে মনে করে।
গবেষকদের পরামর্শ, জামরুল যা স্থানীয়ভাবে যেমন “জল জাম্বু” বা ‘জল আপেল’ নামে পরিচিত। এগুলি জৈব কার্যকরী গুণাবলী সরবরাহ করতে পারে যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষকে সহায়তা করে।
গবেষণা অনুসারে প্রকাশিত, জামরুল ও জামরুলের পাতায় ফ্ল্যাভোনয়েড থাকতে পারে যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাখে – এন্টি-হাইপোগ্লাইসেমিক ক্রিয়াকলাপ হিসাবে পরিচিত।
ডাঃ উমা প্যালানিসামির নেতৃত্বে এবং মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত গবেষণা দলটি ব্যাখ্যা করেছে যে, জামরুলের রসের নিস্কাসনে ছয়টি ফ্ল্যাওনয়েড যৌগ রয়েছে যা কার্বোহাইড্রেটকে বাধা দেওয়ার জন্য অ্যান্টি-ডায়াবেটিসের ওষুধের চেয়ে কার্যকর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
হাইড্রোলাইজিং এনজাইম (যা রক্তে শর্করার পরিচালনার মূল চাবিকাঠি)। টাইপ -2 ডায়াবেটিসের সাথে সংযুক্ত হাইপারগ্লাইকাইমিয়া পরিচালনার জন্য ডায়েট্রি সাপোর্টের অংশ হিসাবে এর জৈব কার্যকারিতা গুরুত্বপূর্ণ।
জামরুল ডায়াবেটিসের রোগীদের কিভাবে সাহায্য করে:
আমেরিকান এগ্রিকালচারাল ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, ১০০ গ্রাম জামরুলে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান থাকে—
পানি ৯৩.০০, প্রোটিন ০.৬, কার্বোহাইড্রেট ৫.৭, ডায়েটারি ফাইবার ১.৫, স্টার্চ ০.০, সুগার ০.০, চর্বি ০.৩, কোলেস্টেরল ০.৩ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৫৬.০, ভিটামিন এ ২২.০, ভিটামিন বি১ ১০.০০, ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) ৫৭.০, ক্যালসিয়াম ২৯, আয়রন ০.১, ম্যাগনেসিয়াম ৫.০, ফসফরাস ৮.০, পটাশিয়াম ১২৩.০, সোডিয়াম ০.০, সালফার ১৩.০ মিলিগ্রাম।
ডায়াবেটিস রোগীর পানিশুন্যতা দূর করে:
জামরুল বা ওয়াটার আপেল নামের মধ্যেই সমাধান লুকিয়ে রয়েছে। রসে ভরা জামরুলের বেশিরভাগ অংশ জল বা পানিতে পূর্ণ থাকে এজন্য সুস্বাদু এই ফলটি গরমে তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে। একেবারে গরমের শান্তি।
প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বা পানি বের হয়ে যায়। জামরুলে প্রায় ৯০% পানি রয়েছে। তাই জামরুল খেলে শরীরের পানিশুন্যতা দূর হয় এবং শরীর সুস্থ্য ও সতেজ থাকে। এখন তো সবার ঘরে ঘরে ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার, হ্যান্ড ব্লেন্ডার, জুসার মেশিন। জুস বা রস করা খুব সহজ। তাই জামরুল দিয়ে জুস করে খান।
ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের শর্করা কমায়:
জামরুলে শক্তিশালী অ্যান্টিহাইপারগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার অর্থ এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। এতে গ্লাইসেমিক লোড এর মান কম থাকে। জামরুলে জাম্বোসিন নামক একটি ক্রিয়াশীল যৌগ রয়েছে যা স্টার্চকে সুগারে পরিণত হতে বাঁধা দেয়। ফলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুতরাং, জামরুল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
ডায়াবেটিস রোগীর দেহকে শীতল করে:
গরমে উপাদেয় ফল জামরুল আজ যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু আমরা এটাকে হারাতে চাই না কারণ জামরুল একটি প্রাকৃতিক শীতলকারক। গরমে শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে জামরুল। এটি কেবল শরীরকে হাইড্রেট করে না, অতিরিক্ত ঘামের কারণে নষ্ট হওয়া পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলি পূরণে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস রোগীর কিডনি ভালো রাখে:
দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস থাকলে কিডনি দুর্বল হয়ে যায় এটা আমরা অনেকেই জানি। ডায়াবেটিস-এর কারণে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারায় দিনে দিনে। ডায়াবেটিস একটি সারাজীবনের রোগ।
জামরুলে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এটা আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ধুয়ে বের করে দিতে কাযর্কারী ভূমিকা পালন করে। আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে গেলে লিভার আর কিডনি দুটোই ভালো থাকে।
সতর্কতা:
জামরুলের খারাপ দিক খুবই কম। নেই বললেই চলে। তবে জামরুলের বীজ না খাওয়াই ভালো। এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।