শিয়াল ও হরিণের গল্প।

একটা বিশাল বনে বাস করতো এক শিয়াল। সে ছিলো ভীষণ দুষ্টু। সে সবসময় ফন্দি আঁটতো কখন কাকে কীভাবে বিপদে ফেলা যায়। হঠাৎ একদিন শিয়াল বানরকে গোপনে খবর পাঠিয়ে তার আস্তানায় ডাকলো।

বানর খবর পেয়ে শিয়ালের আস্তানায় গেলো। শিয়াল বানরকে দেখে বলল, ভায়া তুমি আমার একটা কাজ করে দিতে পারবা? বানর বলে, কাজটা কী বলে ফেলো ভায়া। শিয়াল বলল, ভায়া তুমি তো জানই, আমি যে বিলাতে গিয়ে পড়ালেখা করে এসেছিলাম।

এখন ঠিক করেছি বনের সব পশুপাখির বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুল খুলব। সেখানে পশুপাখির বাচ্চাদের পড়ালেখা শেখানো হবে। যদি বনের পশুপাখি পড়ালেখা না করে তাহলে সবাই অশিক্ষিত হবে এবং ভালো মন্দ বিচার করতে পারবে না। আর পড়ালেখা করলে নম্র ভদ্র ও বিনয়ী হতে শিখবে।

শিয়ালের এমন কথা শুনে বানর খুব খুশি। বানর শিয়ালকে বলল, ভায়া আমার ছেলেপুলেদের ও কী তুমি পড়ালেখা করাতে পারবে? শিয়াল বানরের কথা শুনে বলে, তোমার ছেলেপুলে পড়ালেখা করে কী করবে? তোমরা এগাছ থেকে ওগাছে লাফালাফি করতে পছন্দ করো।

বরং তাদের লাফালাফি কীভাবে করতে হয়। সেটা শেখাও কাজে আসবে। বানর বলে, ভায়া আমিও চাই আমার ছেলেপুলেরা অন্য বাচ্চাদের মতো তোমার স্কুলে পড়তে আসুক। বানরের অনেক অনুরোধে শিয়াল রাজি হলো। বানর খুশিতে বলে, ভায়া এবার বলো, তোমাকে কীভাবে সহযোগিতা করব।

শিয়াল বলল, তুমি জঙ্গলের ভেতর গিয়ে আমার স্কুলের সম্পর্কে ঢোলপিঠিয়ে আসো। বানর শিয়ালের কথামতো জঙ্গলে ঢোল পিঠাতে গেলো। শিয়ালের নতুন স্কুলের কথা জঙ্গলের আনাচে-কানাচেতে একমুহূর্তে ছড়িয়ে গেলো। পরেরদিন সকালে বনের সব পশুপাখি এলো তাদের নাদুসনুদুস বাচ্চাদের নিয়ে শিয়ালের স্কুলে ভর্তি করতে।

সবার বাচ্চাদের ভর্তি করলেও হরিণের বাচ্চাদের ভর্তি করলো না শিয়াল। মা হরিণ কারণ জানতে চাইলে শিয়াল বলে, তোর বাচ্চাদের পড়ালেখা করিয়ে কোনো লাভ হবে না। সারাদিন ঘাস খাবে, না পড়বে? আর হরিণের বাচ্চাদের পড়ানোর আমার স্কুলে কোনো জায়গা নেই।

এইসব বলে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। মা হরিণ ও তার বাচ্চারা কাঁদতে কাঁদতে শিয়ালের স্কুল থেকে চলে আসে।

রাস্তায় ময়না পাখির সাথে মা হরিণ ও তার বাচ্চাদের সাথে দেখা। ময়না মা হরিণসহ বাচ্চাদের কান্না দেখে কাছে এসে জানতে চাইল। মা হরিণ সব খুলে বলল, ময়না সবকিছু শুনে হরিণকে সান্তনা দিয়ে বলল, তুমি চিন্তা করো না।

আমি তোমার বাচ্চাদের পড়াবো। হরিণ বলে সত্যি বলছো ভায়া? ময়না বলে হ্যাঁ সত্যিই বলছি। ময়না পাখি নিজের দেওয়া কথামতো হরিণের বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করলে। একসময় বনের সব পশুপাখির বাচ্চাদের মধ্যে একটা পরীক্ষার আয়োজন করা হল। সেই পরীক্ষার শিয়ালের সব ছাত্র-ছাত্রী অংশ গ্রহণ করে। মা হরিণ তার বাচ্চাদের পরীক্ষা দেওয়াতে নিয়ে গেলো প্রথমে সবাই বাঁধা দেয়।

সবাই বলতে লাগলো, হরিণের বাচ্চারা তো স্কুলেই ভর্তি হয়নি তাহলে পরীক্ষায় কী ব্যাঙের মাথা লিখবে? যেহেতু সবার অংশ গ্রহণ করার নিয়ম আছে তাই পরে কেউ আর বাঁধা দেয়নি। পরীক্ষা শেষে হরিণের বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে সবাই বলতে লাগলো হরিণের বাচ্চারা কী আর পরীক্ষায় পাস করবে।

একজন আরেকজনকে বলছে দেখিস হরিণের বাচ্চারা একশোর মধ্যে শূন্য পাবে। এরপরও মা হরিণ কারো কথায় প্রতিবাদ করেনি। চুপচাপ সবার কথা শুনেছে। পরিশেষে ফলাফল প্রকাশ হলো। দেখা গেলো হরিণের দুটো বাচ্চার মধ্যেই এক আর দুই হয়ে গেলো।

এবং শিয়ালের ছাত্রছাত্রী বেশির ভাগ ফেইল করলো। হরিণের বাচ্চাদের ফলাফল দেখে বনের পশুপাখি সবাই বিস্মিত হয়ে গেলো। তখন ময়না পাখি এগিয়ে বলল, কাউকে ছোট করে দেখতে নেই। প্রত্যেকের মধ্যেই বিশেষ কিছু না কিছু গুণ রয়েছে।

ময়নার কথা শুনে শিয়ালসহ বনের পশুপাখিরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে হরিণের কাছে ক্ষমা চাইলো। এই দেখে, ময়না পাখি সুরেলা ভাবে বলতে লাগলো-

কাউকে আমরা ছোট করে

দেখবো না আর কভু,

যতই বিপদ আসুক রে ভাই

থাকবো পাশে তবু।