চালের গুড়া ত্বকের দাগ দূর করতে, ব্রণ সারাতে ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি সুন্দর, ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে চান তাহলে তার একমাত্র সমাধান হলো চালের গুড়া। চালের গুঁড়া ত্বকে প্রাকৃতিক স্ক্রাবারের কাজ করে। এটি ত্বককে নরম ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া এই উপাদান ত্বকের কালচে দাগ দূর করে ত্বক ফর্সা করে তোলে।
দিন শেষে বাসায় ফিরে আয়নার দিকে তাকালে আমাদের সবার মনই কম বেশি খারাপ হয়ে যায়। পরিবেশ দুষণের প্রভাব, ঘাম, তেল মিলে মুখের অবস্থা একদম নাজেহাল। এই অবস্থা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে আমরা চালের গুঁড়া ব্যবহার করতে পারি।
চালের গুঁড়া ব্যবহারে খুবই সহজেই স্কিন হবে ফর্সা, দাগমুক্ত এবং লাবণ্যময়। চালের গুড়াতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি ত্বকের বার্ধক্যতা দূর করতে, ইউভি ক্ষতি কমাতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান সহ পূর্ব পূর্ব এশিয়া জুড়ে প্রসাধনী পণ্যগুলির একটি জনপ্রিয় উপাদান
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ত্বকের যত্নে বা রূপচর্চায় চালের গুড়া ব্যবহার-
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে:
ত্বককে স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখতে চালের গুঁড়া এক জাদুকরী উপাদান। এছাড়াও লেবু ও হলুদে থাকা অ্যান্টি আক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে ত্বক উজ্জ্বল করে।
এজন্য একটি পরিষ্কার শুকনো বাটিতে ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে সমপরিমাণ লেবুর রস এবং সামান্য হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে নিন। ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। হালকা ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের কালচে দাগ দূর করতে:
চালের গুঁড়ার সঙ্গে মধু ও টকদই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক পুরো মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের কালচে দাগ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতে:
মুখ ছাড়াও আমাদের হাত পায়ের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করবে চালের গুঁড়া। চালের গুঁড়াতে থাকা ফেরুলিক অ্যাসিড এবং পিএবিএ ত্বকে সূর্যের ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষায় দিতে পারে। রোদে পোড়া ত্বক ঠিক করে ও ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক রিপেয়ার করতে সাহায্য করে। চালের গুঁড়ার মধ্যে প্যারা-অ্যামিনোবেঞ্জোইক অ্যাসিড থাকে (পিএবিএ বা ভিটামিন বি-10) যা কোষের পুনঃবৃদ্ধি করে।
শসার রস ও লেবুর রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ভিজিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণ সারাতে:
ত্বকের খুব সাধারণ এবং ক্ষতিকর সমস্যা ব্রণ। চালের গুঁড়া ব্যবহারে সহজেই রেহাই পেতে পারেন ব্রণের সমস্যা থেকে। কারণ চালের গুঁড়াতে রয়েছে ফাইটিক অ্যাসিড এর এক্সফোলাইটিং প্রভাব রয়েছে। ফাইটিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষকে সরিয়ে ফেলতে সহায়তা করে তাই এটি বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।
১ চামচ চালের গুঁড়া, ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। ব্রণ আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে:
চালের গুঁড়ায় থাকে অতি উচ্চমানের ভিটামিন “বি” যা ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ নতুন করে উৎপাদন করে এবং ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। অনেক সময় মৃত কোষের কারণে ত্বক মলিন হয়ে যায়।
সেক্ষেত্রে, মধু অথবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এভাবে ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়ে ত্বক নরম ও মসৃণ হবে।
বয়সের ছাপ দূর করতে:
ত্বকের সঠিক পরিচর্যা না নিলে খুব দ্রুতই বয়সের ছাপ পড়ে যেতে পারে। এজন্য নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন চালের গুঁড়ার প্যাক। ১দিন পর পর ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে সমপরিমাণ কর্নফ্লাওয়ার, গোলাপজল, কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন।
মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কুসুম গরম পানি দিয়ে প্রথমে ধুয়ে নিন। এরপরই স্বাভাবিক ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করতে:
তৈলাক্ত ত্বক চেহারার সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। তবে চালের গুঁড়ার রয়েছে অসাধারণ সমাধান। ১ চামচ চালের গুঁড়া, আধা চামচ মুলতানি মাটি, অর্ধেকটা টমেটোর রস একসাথে সব উপাদান ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মুখ ধুয়ে মাস্কটা মুখে ও গলায় লাগাতে হবে।
২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি আপনার স্কিনের অতিরিক্ত তেল দূর করবে আর স্কিন উজ্জ্বল করে তুলবে।
শুষ্ক ত্বকের যত্নে:
ত্বক শুষ্ক অথবা শীতে শুষ্ক হওয়ার প্রবনতা থাকলে সেক্ষেত্রে এক চামচ চালের গুঁড়া এর সঙ্গে সমপরিমাণ লেবুর রস এবং পানি মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ডার্ক সার্কেল দূর করতে:
বিভিন্ন কারণে চোখের চারপাশে কালো দাগ পড়ে ব্যবহার করুন চালের গুঁড়ার প্যাক। এরজন্য ১ চামচ চালের গুঁড়া, অর্ধেক পাকা কলা এবং ১ চামচ ক্যাস্টর তেল নিয়ে মিশিয়ে নিন। চোখের চারপাশে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। আলতো হাতে ঘষে ধুয়ে ফেলুন।
যে কোন হোমমেড মাস্কে সাধারণত কেমিক্যাল ফ্রি হয়। কেমিক্যাল ফ্রি হোমমেড মাস্কগুলোই স্কিনের জন্যে ব্যবহার করা ভালো। এতে স্কিনের ক্ষতি তো হয়ই না বরং নিয়মিত ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদী ফল পাওয়া যায়।