কম্পিউটার কাকে বলে? কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?

কম্পিউটার কাকে বলে?


গণনাযন্ত্র, সংগনক বা কম্পিউটার (ইংরেজি: Computer) হলো এমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে।

কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রিক “কম্পিউট” (compute) শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (Computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র।

Computer

কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব।

কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?


গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কম্পিউটার ৩ প্রকার। যথাঃ

১. অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog computer)
২. ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital computer)
৩. হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid computer)

অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog computer):



Analog computer

অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog computer) হলো এমন কম্পিউটার যা কোনো কম্পিউটিং সমস্যাকে ভৌত বৈশিষ্ট্য যেমন বৈদ্যুতিক, যান্ত্রিক, বা জলবাহী -এর ভৌত এবং চলমান পরিমাপে মডেল হিসেবে রূপ দেয়া হয়।

এক কথায়, যে কম্পিউটার পরিমাপ ও পরিমানের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়, তাকে অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog computer) বলে।

ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital computer):



Digital computer

ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital computer) হলো এমন একটি কম্পিউটার মেশিন যেটা যেকোনো ধরণের information গুলোকে process করতে সাহায্য করে থাকে। এই ডিভাইস গুলো এতটাই দ্রুত কাজ করে থাকে যে সেকেন্ডের থেকেও কম সময়ের মধ্যে আউটপুট প্রদান করতে পারে।

মূলত ডিজিটাল কম্পিউটারগুলি সংখ্যা প্রক্রিয়াজাতকরণের ভিত্তিতে কাজ করে। এক কথায়, একটি কম্পিউটার যা বাইনারি সিস্টেমে প্রক্রিয়া করে অর্থাৎ ০ ও ১ এর উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে প্রক্রিয়াকরণের কাজ করে তাকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলা হয়।

হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid computer):



Hybrid computer

হাইব্রিড কম্পিউটার এমন একটি কম্পিউটার যা এনালগ এবং ডিজিটাল কম্পিউটারগুলির সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যগুলিকে একত্রিত করে। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও ব্যবহৃত হয়। সুতরাং, এটি বলা যেতে পারে যে হাইব্রিড কম্পিউটার প্রযুক্তি এবং মৌলিক দিকগুলির ক্ষেত্রে এনালগ এবং ডিজিটাল কম্পিউটারের একটি আংশিক সংমিশ্রণ।

সাধারণত হাইব্রিড কম্পিউটারে তথ্য সংগ্রহ করা হয় অ্যানালগ পদ্ধতিতে এবং গণনা করা হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। যেমন আবহাওয়া দপ্তরে ব্যবহৃত হাইব্রিড কম্পিউটার অ্যানালগ পদ্ধতিতে বায়ুচাপ,তাপ ইত্যাদি পরিমাপ করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গণনা করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।

আকার-আয়তন ও ব্যহারের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটার ৪ প্রকার। যথা:


১। সুপার কম্পিউটার
২। মেইনফ্রেম কম্পিউটার
৩। মিনি কম্পিউটার
৪। মাইক্রো কম্পিউটার

সুপার কম্পিউটার:



Super computer

সর্বাধিক শক্তিশালী এবং দ্রুততম কম্পিউটার হলো সুপার কম্পিউটার। এই কম্পিউটারটিতে অনেকগুলি জটিল এবং সূক্ষ্ম কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা রয়েছে। আকার এবং ক্ষমতার দিক থেকে সুপার কম্পিউটারটি বৃহত্তম কম্পিউটার। কম্পিউটারগুলি মহাকাশ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মহাকাশযান, যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।

মেইনফ্রেম কম্পিউটার:



mainframe-computer

সুপার কম্পিউটার থেকে তুলনামূলক কম শক্তিশালী হচ্ছে মেইনফ্রেম কম্পিউটার। সাধারণ কম্পিউটার থেকে মেইনফ্রেম কম্পিউটার আকারে বড় এবং অনেক শক্তিশালী। এই কম্পিউটারকে বাণিজ্যিক কাজে বেশী ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ ব্যাংক, বীমা, বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে তথ্য আদান-প্রদান, সংরক্ষণ এবং গবেষণা কাজে মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।

মিনি কম্পিউটার:



Mini computer

মিনি কম্পিউটার (Mini computer) হচ্ছে এক ধরনের ছোট আকারের কম্পিউটার। একে মিনিফ্রেম কম্পিউটারও বলা হয়। মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট আকারের এ কম্পিউটার টার্মিনালের মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারে।

বড় বড় শিল্প এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিনি কম্পিউটারের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকিং কাজকর্মে এ ধরনের কম্পিউটারের সচরাচর লক্ষ্য করা যায়।

মাইক্রো কম্পিউটার:



Microcomputer

মাইক্রো (micro) শব্দটির অর্থ হল ক্ষুদ্র। মূলত মাইক্রো কম্পিউটার বলতে কম্পিউটারের ছোট বা ক্ষুদ্রাকৃতির কম্পিউটারগুলোকেই বোঝায়। এই কম্পিউটারগুলো ক্ষুদ্রাকৃতির মাইক্রো প্রসেসর চিপ দিয়ে তৈরি বলে একে মাইক্রো কম্পিউটার বলা হয়।

মাইক্রো কম্পিউটারের অন্য আরেকটি নাম পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি। মাইক্রো কম্পিউটারে থাকে মাদারবোর্ড যাতে মাইক্রোপ্রসেসর, র‍্যাম, রম, ইত্যাদ। এছাড়াও হার্ডডিস্ক, সিডি ড্রাইভ সহ অনেক কিছু থাকে।

মাইক্রো কম্পিউটারকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:


১। ডেস্কটপ কম্পিউটার
২। ল্যাপটপ কম্পিউটার

ডেস্কটপ কম্পিউটার:



Desktop computer

ডেস্ক বা টেবিলের উপর রেখে যে মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহার করা যায় তাকে ডেস্কটপ কম্পিউটার (Desktop Computer) বলে। ডেস্কটপ কম্পিউটার হচ্ছে একটি পার্সোনাল কম্পিউটার। ডেস্কটপ কম্পিউটারে সাধারনত মনিটর, কিবোর্ড, মাউস এবং একটি বাক্স থাকে। বাক্সে কম্পিউটারের মূল অংশগুলো থাকে যেমন: পাওয়ার সাপ্লাই, মাদারবোর্ড, হার্ডডিস্ক, অপটিক্যাল ড্রাইভ, ফ্লপি ড্রাইভ ইত্যাদি।

ল্যাপটপ কম্পিউটার:



Laptop computer

ল্যাপটপ অর্থ কোলের উপর। এই কম্পিউটার কোলর উপর রেখে ব্যবহার করা হয় বলে একে ল্যাপটপ কম্পিউটার বলে। তাছাড়া এই কম্পিউটার সহজে বহন করা যায় বলে খুব জনপ্রিয়। আরেকটি সুবিধা হলো এতে ব্যাটারি থাকায় বিদ্যুৎ না থাকালেও দীর্ঘসময় ব্যবহার করা যায়।