মমতাজউদ্দীন আহমদের বাংলার খোকা গল্প।
বাংলার খোকা
মমতাজউদ্দীন আহমদ
—————————
১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ। দিনটি ছিল বুধবার। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া। সেই গ্রামের শেখ পরিবারে জন্ম হলো একটি শিশুর। বাবা শেখ লুৎফর রহমান আদর করে শিশুর নাম রাখলেন খোকা। খোকা খুব আদরের নাম। বাংলার প্রায় সব ঘরেই প্রথম পুত্রসন্তানের নাম রাখা হয় খোকা।
দিনে দিনে বড় হয় খোকা। পায়ে হেঁটে স্কুলে যায়। দুচোখ মেলে দেখে বাংলার মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর, সোনালি ধানের খেত। চোখ জুড়িয়ে যায় তার।
যত বড় হয় খোকা, তত তার বন্ধুর সংখ্যা বাড়ে। গাঁয়ের অনেক ছেলের সঙ্গে তার যোগাযোগ নিবিড় হয়। প্রায়ই সে বন্ধুদের বাড়ি নিয়ে আসে। বলে, মা, ওদের খেতে দাও। মা আনন্দের সঙ্গে ছেলের বন্ধুদের খেতে দেন। মা হাসিমুখে ছেলের আবদার পূরণ করেন।
বর্ষাকালে স্কুলে যেতে বাবা খোকাকে ছাতা কিনে দিলেন। খোকা ছাতা নিয়ে স্কুলে যায়। একদিন ছাতা ছাড়া ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরল খোকা।
মা জিজ্ঞেস করলেন, “তোর ছাতা কই বাবা? এমন ভিজেছিস কেন?”
খোকা হাসিমুখে বলল, “মাগো, আমার এক গরিব বন্ধুর ছাতা নেই। আমার ছাতাটা ওকে দিয়েছি।”
মা ছেলের এমন উদারতায় খুশি হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেন। বললেন, “ভালোই করেছিস বাবা! তোর বাবাকে বলব তোকে আর একটা ছাতা কিনে দিতে।”
মা ছেলের কপালে চুমু খেলেন।
শীতের সময় খোকাকে একটা চাদর কিনে দিলেন বাবা। একদিন দেখা গেল চাদর ছাড়াই বাড়ি ফিরে এলো খোকা। মা বললেন, “তোর চাদর কই বাবা?” খোকা বুক ফুলিয়ে বলে, “মাগো, পথের ধারে গাছের নিচে এক বৃদ্ধ মহিলা শীতে খুব কাঁপছিল। আমি তার গায়ে চাঁদরটি জড়িয়ে দিয়ে এসেছি।”
মা অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ভাবেন, গরিব মানুষের জন্য ছেলেটির এত দরদ! ও নিশ্চয় বড় হয়ে মানুষের জন্য অনেক কিছু করবে।
খোকার বন্ধু জেলের ছেলে গোপাল করুণ সুরে বাঁশি বজায়। খোকা বন্ধুকে বলে, “তোর বাঁশির সুরে আনন্দ নেই কেন রে গোপাল?”
গোপাল হতাশ হয়ে বলে, “আমার চারদিকে মানুষের জীবনে আনন্দ নেই রে খোকা।”
খোকা নিশ্চুপ থেকে ভাবে, তাই তো। আমার চারদিকে এমন অবস্থাই তো দেখছি। এই অবস্থা বদলাতে হবে।
দেশের নানা কথা ভাবতে ভাবতে বড় হয় খোকা। স্কুল পার হয়ে কলেজে ঢোকে। বাংলার মানুষের কথা, দেশের কথা তাঁকে নিয়ত ভাবায়। তিনি পার হন কলেজের চৌকাঠ। আরও বড় হন তিনি। যুক্ত হন রাজনীতির সঙ্গে। গরিব মানুষের দুঃখ দূর করার জন্য আন্দোলন করেন। দেশের মুক্তির জন্য ১৯৭১ সালে ডাক দেন স্বাধীনতার।
এই খোকা আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই আমাদের জাতির পিতা।