ঘনবস্তু কাকে বলে? চিত্রসহ বিভিন্ন প্রকার ঘনবস্তুর বর্ণনা।
ঘনবস্তু কাকে বলে?
যে সকল বস্তু বা পদার্থ কিছুটা স্থান দখল করে থাকে এবং যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা আছে তাকে ঘনবস্তু বলে। অথবা, যে বস্তুর দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা আছে এবং ৬ টি তল বিশিষ্ট তাকে ঘনবস্তু বলে।
অন্যভাবে বললে বলা যায়, ত্রিমাত্রিক বস্তুই ঘনবস্তু। আর ত্রিমাত্রিক বস্তু হলো ত্রিমাত্রিক জগত এর বস্তু। ত্রিমাত্রিক বস্তু বলতে বুঝায় যে বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করার জন্য তিনটি মাত্রা অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার প্রয়োজন হয়। সব ঘনবস্তুই ঘন জ্যামিতির অন্তর্ভুক্ত।
চিত্রসহ বিভিন্ন প্রকার ঘনবস্তুর বর্ণনা:
যে বহুতলক পরস্পর লম্ব ছয়টি আয়তাকার তল দ্বারা গঠিত তাকে আয়তাকার ঘনবস্তু বলে। আয়তাকার তলগুলোকে আয়তাকার ঘনবস্তুর পৃষ্ঠতল বলে।
প্রতিটি আয়তাকার তল ও তার বিপরীত তল দুইটি পরস্পর সর্বসম আয়তক্ষেত্র। অতএব আয়তাকার ঘনবস্তুর তিনজোড়া পরস্পর সর্বসম আয়তাকার পৃষ্ঠতল থাকে। প্রতিটি তল ও তার সন্নিহিত তল পরস্পর লম্ব। তলগুলো মিলিত হওয়ার ফলে কতগুলো ধার ও শীর্ষ উৎপন্ন হয়।
কোনো আয়তাকার ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান হলে তাকে ঘনক বলে। ঘনকের ১২ টি সমান দৈর্ঘ্যের ধার এবং ৮ টি শীর্ষ থাকে। আরও থাকে ৬ টি বর্গাকার সর্বসম পৃষ্ঠতল।
বর্গাকার তলগুলোকে ঘনকের পৃষ্ঠতল বলে। ঘনকের তলগুলো পরস্পর সর্বসম বর্গক্ষেত্র। অতএব, ঘনকের পরস্পর সর্বসম ছয়টি বর্গাকার পৃষ্ঠতল থাকে। প্রতিটি তল ও তার সন্নিহিত তল পরস্পর লম্ব। তলগুলো পরস্পর মিলিত হওয়ার ফলে একাধিক ধার ও শীর্ষ উৎপন্ন হয়। তিনটি ধার পরস্পর যে বিন্দুতে মিলিত হয়, ঐ বিন্দুকে শীর্ষ বলে।
যে ঘনবস্তুর ভূমি তল দুইটি পরস্পর সমান্তরাল ও সর্বসম দুইটি বৃত্ত এবং যার আবদ্ধ বক্রতল বিশিষ্ট গাত্র (body) এমন সকল বিন্দু দিয়ে গঠিত যে সকল বিন্দু একটি নির্দিষ্ট রেখাংশ থেকে সমদূরবর্তী।
সমদূরবর্তী বলতে বুঝায় একটি নির্দিষ্ট রেখাংশ হতে ঐ সকল বিন্দুর দুরত্ব একটি ধ্রূবক। নির্দিষ্ট রেখাংশ হলো ভূমি তল বৃত্ত দুইটির কেন্দ্রদ্বয়ের সংযোজক রেখাংশ। এই রেখাংশকে বেলন বা সিলিন্ডারের অক্ষ-রেখা বলে। আর অক্ষ-রেখার দৈর্ঘ্যকে বেলন বা সিলিন্ডারের উচ্চতা বলে।
কোন সমকোণী ত্রিভুজে সমকোণ সংলগ্ন যে কোন একটি বাহুকে স্থির রেখে ঐ বাহুর চতুর্দিকে ত্রিভুজটিকে ঘুরালে যে ঘনবস্তু উৎপন্ন হয় তাকে সমবৃত্তভুমিক কোণক বলে।
অন্যভাবে বললে বলা যায়, কোণক (cone) হলো বৃত্তাকার ভূমিবিশিষ্ট পিরামিড। পিরামিডের শীর্ষ ও ভূমির কেন্দ্রকে সংযোগকারী রেখা ভূমির উপর লম্ব হলে তাকে সমকোণী কোণক বলে। r ক্ষেত্রফলের ভূমি ও h উচ্চতার কোণকের আয়তনের সূত্র পিরামিডের অনুরূপ: V = rh
একটি বৃত্তের ব্যাসকে স্থির রেখে বৃত্তটিকে এর ব্যাসের চারদিকে ঘুরালে যে ঘনবস্তু উৎপন্ন হয় তাকে গোলক বলে। ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে গোলক হলো সুষম মসৃণ গোলাকার ঘনবস্তু।
অন্যভাবে বললে, ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে গোলক হলো কতকগুলো বিন্দুর সমন্বয়ে গঠিত এমন একটি সুষম গোলাকার মসৃণ ঘনবস্তু যে বিন্দুগুলো একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদুরবর্তী। সমদুরবর্তী বলতে বুঝানো হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হতে সকল বিন্দুর দুরত্ব একটি ধ্রূবক। নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে বলা হয় গোলকের কেন্দ্র। আর ধ্রূবক দুরত্বকে বলা হয় গোলকের ব্যাসার্ধ।
যে বহুতলকের ভূমিতল ও উপরিতল দুইটি পরস্পর সমান্তরাল ও সর্বসম বহুভুজ এবং পার্শ্বতলগুলো সামান্তরিক তাকে প্রিজম বলে। প্রিজম হলো সামান্তরিক পার্শ্বতল বিশিষ্ট এক প্রকার বহুতলক।
যে বহুতলকের ভূমি একটি বহুভুজ এবং ত্রিভুজাকৃতি পার্শ্বতলগুলো অন্য আরেকটি তলের একটি সাধারণ নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয় তাকে পিরামিড বলে। সাধারণ নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে পিরামিডের শীর্ষ বলে। পার্শ্বতলগুলো কমপক্ষে তিনটি বা তার বেশি হয়।
ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে পিরামিড হলো ত্রিভুজাকৃতি পার্শ্বতল ও একটি সাধারণ শীর্ষ সম্বলিত বিশেষ ধরণের বহুতলক।