বাওয়ালিদের গল্প।

বাওয়ালিদের গল্প

—————————

আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। এর প্রায় পুরোটাই সমতলভূমি। আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, বঙ্গোপসাগরের তীরে সুন্দরবন। এই বনের সব গাছই বঙ্গোপসাগরের নোনা পানিতে বেঁচে আছে। এই বন নানা ধরনের হাজার রকমের পশু ও পাখিতে পূর্ণ। সুন্দরবনের কোনো কোনো জায়গায় গাছপালা এত ঘন যে, সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছায় না।

সুন্দরবনের তিনপাশে ছড়িয়ে আছে অনেক গ্রাম। গ্রামের মানুষ কৃষিকাজ করেন। গ্রামের অনেক মানুষ বন থেকে গোলপাতা ও মধু সংগ্রহ করে। মৌমাছিরা গাছে গাছে তাদের মৌচাক বানান। যারা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন, তাদের বলে মৌয়াল।

সুন্দরবনে বিভিন্ন ধরণের হাজার হাজার গাছ আছে। এই সব গাছ উপকূলীয় এলাকার জন্য প্রাকৃতিক ঢাল হিসাবে কাজ করে। এই জন্য ১৯৮৯ সাল থেকে সরকার সুন্দরবন থেকে কাঠ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহ করা যায়। যারা এ কাজ করেন তাদেরকে বলা হয় বাওয়ালী।

বাওয়ালীদের কাজ খুবই কষ্টের। শুধু তাই নয়, এই বনে আছে অনেক ভয়ঙ্কর প্রাণী, যেমন বাঘ। বাঘ মাংসাশী প্রাণী। সে অন্য প্রাণী খেয়ে বাঁচে। যেমনঃ হরিণ, বুনোশুয়োর, বানর ইত্যাদি। বাঘ মানুষকেও আক্রমণ করে। তাই সুন্দরবনে বাঘই মানুষের সবচেয়ে ভয়ের বিষয়। তাছাড়াও এই বনে বনবিড়াল, বুনোশুয়োর, বানর, সাপ আছে। আর পানিতে আছে মাছ, কুমির ও হাঙ্গর।

বাওয়ালি আর মৌয়ালরা সুন্দরবন থেকে অনেক দূরের গ্রামে থাকেন। রোজ রোজ বাড়ি ফিরে যাওয়ার সম্ভব হয় না। তাহলে কোথাও তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয়। রাতের বেলায় হিংস্র জন্তুরা তাদের আক্রমণ করতে পারে। তাই তারা নদীর মাঝখানে নৌকার মধ্যে রাত কাটান।

বাওয়ালিদের অন্য বিপদও আছে। সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে লবণাক্ত পানির নদী আর ছোট খাল বয়ে চলেছে। মানুষ লবণাক্ত পানি খেতে পারে না। সেজন্য বাওয়ালিরা তাদের সাথে পানির ছোট ছোট পাত্র রাখেন। তারা এই পানি খুবই সাবধানে ব্যবহার করেন। একটুও অপচয় করেন না। পানি শেষ হয়ে গেলে সহজেই খাওয়ার পানি পাওয়া যাবে না সুন্দরবনে। সেজন্য সুন্দরবন থেকে নানাকিছু সংগ্রহ করার জন্য যারা বনে যান তাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।