চাহিদা কম ও মনে ভালোবাসা থাকলে পাঁচতলা নয়, গাছতলাতেও সুখে থাকা যায়।
চাহিদা কম মানে আপনার কষ্ট কম, চাহিদা কম মানে আপনার টেনশন কম। নিশ্চিন্তে সুখী জীবন। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? হ্যা, এটাই পরীক্ষিত সত্য। চাহিদা কম ও মনে ভালোবাসা থাকলে পাঁচতলা নয়, একতলা বা কুঁড়ে ঘরে থেকেও পাঁচতলার মানুষের থেকেও সুখে থাকা যায়।
টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ নিয়ে এতো ভাবার কি দরকার আছে? এই অর্থই কি আমাদের জীবনে সব সুখ এনে দিতে পারে? বিপুল সম্পদের মালিক হলেই কি সব সুখ মেলে? নাকি অন্য কিছুর প্রয়োজন আছে জীবনে? অর্থ ক্ষণিকের সুখ দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু সব সময় সবকিছু অর্থ দিয়ে বিবেচনা করা কি সম্ভব? সুখ আপেক্ষিক ও মনের ব্যাপার। আসলে এর সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই।
গবেষকেরা মনে করেন, আমরা কীভাবে আমাদের অর্থ ব্যয় করব বা করছি, তা সুখের ধারণার ওপর একটা বড় প্রভাব ফেলে। মার্কিন লেখিকা গ্রেটচেন রুবিন তাঁর ‘দ্য হ্যাপিনেস প্রজেক্ট’ বইতে লিখেছেন, অর্থ সুখ কিনতে পারে না। তবে অর্থ ব্যয় করে আপনি যে অসংখ্য জিনিস কেনেন, তা আপনার সুখের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ও ‘হ্যাপি মানি: দ্য সায়েন্স অব স্মার্টার স্পেনডিং’ বইয়ের সহলেখক মাইকেল নরটনও অনেকটা এমনই ভাবেন। তিনি তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘আসলে সুখকে পাশে রেখে আমরা অর্থ দিয়ে কিছু কিনি না। বরং আমরা আমাদের সুখকে পণ্যের মধ্যে স্থানান্তর করতেই অর্থ ব্যয় করি।’
টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না। জীবন নিয়ে বিরক্তি, একাকিত্ব আর একঘেয়েমি এমন বিচ্ছিন্ন আর একাকী কখনোই বোধ করিনি। বিশ্বের একজন সেরা ধনীর কথা।
বাফেট অনেক টাকা দিয়ে একটি বাড়ি কিনেও সুখী নন। তার ভাষ্য, যেখানে আমি ১৯৫৮ সাল থেকে থাকছি। কারণ এটাতে জড়িত সব স্মৃতি।’ কেনার সামর্থ্য থাকলেও স্মৃতিময় পুরোনো বাড়িই বাফেটের পছন্দ।
বিত্তশালী ব্যক্তিরা হয়তো অসম্ভব বিলাসী জীবনযাপন করতে পেরে সুখী থাকেন। এ ধারণাকে পাল্টে দেন ওয়ারেন বাফেট। প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের মালিক এবং বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী বাফেট সাধারণ জীবনযাপন করতে ভালোবাসেন। সকালে খুব সাধারণ মানের নাশতা করেন তিনি। বিলাসী জীবনযাপন খুব একটা টানে না তাঁকে।
শুধু তাই নয়, সুখ শান্তি ও নিশ্চিন্তে থাকার জন্য তারা যে বিষয়গুলোর সাথে একমত হয়েছেন বা মনোবিজ্ঞানীরা যে বিষয়গুলো বা নিয়ামকগুলো সুখী হতে সাহায্য করে বলে উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো:
ভালো ঘুম:
আরো বেশি করে ও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চেষ্টা করুন। এই কাজটা করা সবচেয়ে সহজ বলে মনে হয় কিন্তু আসলে এই কাজটা করা খুব কঠিন, বলেন তিনি।এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতি রাতে আট ঘন্টা করে ঘুমানো। এবং এই কাজটা করতে হবে এক সপ্তাহ ধরে।
ধ্যান করুন:
আপনার কাজ হবে প্রত্যেকদিন ১০ মিনিট করে মেডিটেট বা ধ্যান করা। অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, তিনি যখন ছাত্রী ছিলেন তখন তিনি নিয়মিত ধ্যান করতেন এবং দেখেছেন সেটা করলে মন ভালো থাকে।
এখন তিনি একজন অধ্যাপক, এখন তিনি তার শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন কিভাবে ধ্যান করতে হয়। তিনি বলেন, এধরনের কাজে পূর্ন মনোযোগ দিতে হয় যা মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করতে পারে।
পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আরো সময় কাটান:
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেছেন, গবেষণায় পরিষ্কার একটি বিষয় দেখা গেছে- পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটালে আপনি সুখী হবেন। আপনার যদি ভালো বন্ধুত্ব থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগ থাকে এবং তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয় তখন তারা উল্লেখযোগ্য রকমের ভালো বোধ করেন।
এজন্যে যে খুব বেশি কিছু করতে হবে তা নয়, স্যান্টোস বলেন, “শুধু এটা নিশ্চিত করুন যে আপনি এই সময়ে বেঁচে আছে, মনে করুন যে আপনারা একসাথে বর্তমান সময় কাটাচ্ছেন এবং আপনি কিভাবে আপনার সময় কাটাচ্ছেন সে বিষয়ে একটু সচেতন থাকুন।”
সোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগের পরিবর্তে বাস্তবে এই যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন:
সোশাল মিডিয়া থেকে সুখের বিষয়ে মিথ্যা যেসব ধারণা পাওয়া যায় সেসবে ভেসে যাওয়া উচিত নয়।
সবশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা, যারা এটা খুব বেশি ব্যবহার করেন না তাদের চাইতে কম সুখী।
তো, এখন তো বিষয়টা অনেক পরিষ্কার হয়ে গেলো।
আপনি যদি সত্যিই জীবনে সুখী হতে চান, চাহিদা কম রাখুন। ভালোবাসতে শিখুন। কৃতজ্ঞ হতে শুরু করুন। পরিবারের সাথে আরো বেশি সময় কাটান, বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করুন, দিনের একটা সময়ে কিছুক্ষণের জন্যে নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে ধ্যানে মগ্ন হউন, সোশাল মিডিয়া থেকে দূরে সরে এসে আরো একটু বেশি ঘুমাতে চেষ্টা করুন।