সবথেকে সেরা ঔষধ বা মেডিসিন সম্পর্কে জেনে নিন। প্রতিক্রিয়া ছাড়াই কাজ করে।
সবথেকে সেরা ঔষধ বা মেডিসিন কোনটি? একের পর এক দেখুন ও মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ঔষধ বা মেডিসিন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। জীবন বাঁচাতে আমাদের প্রায়শ ছুটে যেতে হয় ওষুধের কাছে। কিছু ওষুধের এতো মূল্য যে গরিব মানুষেরা কিনতে পারে না। এছাড়া মানুষের বানানো এই সকল ওষুধ আমাদের জীবন বাঁচায় ঠিকই কিন্তু এর পার্শপ্রতিক্রিয়াও অনেক বা অনেক সময় জীবনও কেড়ে নেয়।
ওষুধ আমরা খাবো এ বিষয়ে কোনো দ্বিধা নেই। কিন্তু আসুননা আমরা অন্যরকম কিছু ওষুধ সম্পর্কে জানি যেটি সম্পর্কে জানলে আপনিও উপকৃত হবেন।
আজকের এই পোস্টে আমরা প্রকৃতি প্রদত্ত কিছু সেরা ঔষধ বা মেডিসিন সম্পর্কে জানবো যেগুলো অনুসরণ করলে আমরা বিনা বা সামান্য খরচে, প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সুস্থ্য থাকতে পারবো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, সর্বোপরি আমাদের আয়ু বৃদ্ধি পাবে।
বিশুদ্ধ জল বা পানি:
বিশুদ্ধ জল হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও প্রধানতম ঔষধ। আমরা সারাদিন কত শত পুষ্টিকর খাবার খাই। কিন্তু জল না থাকলে বা জল না খেলে ঐ পুষ্টি শরীরে শোষিত হবে না বা শরীরের কাজে লাগবে না।
ছোটোখাটো অনেক অসুস্থ্যতায় জল বা পানি ওষুধ হিসাবে কাজ করে অর্থাৎ ডাক্তারেরা বেশি বেশি জল খাওয়ার পরামর্শ দেন? আপনার তরল ধরে রাখুন(যেমনঃ ডায়রিয়া) এবং প্রচুর বিশ্রাম নিন। প্রচন্ড জ্বরে প্রচুর পানি পানের পাশাপাশি পানি দিয়ে গা মোছা, কপালে জল পটি ও জল দিয়ে মাথা ধোয়া জরুরি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলুন বা প্রচন্ড গরমে ঘেঁমে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পরে মনটা একমাত্র জল বা পানির জন্য হাহাকার করে। আর পেটে পড়তেই ওষুধের মতো কাজ করে, শক্তি যোগায়, ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা, হজম শক্তি বাড়ানো, ওজন কমানো থেকে শুরু করে জয়েন্ট-এর ব্যথা, মুখের দুর্গন্ধ সর্বোপরি মন ভালো রাখে এই প্রকৃতি প্রদত্ত জল বা পানি। এটি সর্বাধিক অবমূল্যায়িত ওষুধগুলির মধ্যে একটি এবং এটি একেবারে বিনামূল্যে। কোনও স্বাস্থ্য বীমা প্রয়োজন নেই।
প্রকৃতি ও বুক ভরে নিঃশ্বাস বা বায়ু গ্রহণ:
সুস্থ্য, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রকৃতির থেকে ভালো ওষুধ আর নেই। এর জন্য ব্যাখার দরকার নেই কারণ আমরা যখন বেড়াতে যাই পাহাড়ের কোলে বা সাগরের গর্জনের মাঝে অথবা ঘন সবুজ অরণ্যে, তখন আমাদের মন ভালো হয়ে যায়?
প্রকৃতি মানে শান্তির পরশ দুঃখ বেদনা ভুলে গিয়ে মনটা আনন্দে ভরে উঠা। প্রকৃতি মানে এক বুক ভরে সতেজ নিঃশ্বাস। প্রকৃতির মাঝে গেলে মনে হয় পুরো পৃথিবীটাকে ভুলে গিয়ে নিজেকে প্রকৃতির মাঝে উজাড় করে দি।
বেশি বেশি সবুজ দেখুন, সবুজের মাঝে থাকুন, মাঝে মধ্যে হারিয়ে যান সবুজ প্রকৃতির মাঝে, তাহলেই বিষণ্নতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন- বিশ্বাস হয়? হ্যাঁ প্রকৃতি পারে আপনার বিষণ্নতা কাটায়ে আয়ুটা বাড়িয়ে দিতে।
মানসিক চাপ কমাতে ও মনযোগ বাড়াতে চাই প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য। বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় প্রমাণ দিয়েছেন, মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতার মতো মানসিক ব্যাপারগুলোর সবচাইতে বড় ওষুধ হচ্ছে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা ও বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া।
গবেষকদের পরামর্শ অনুযায়ী, মানসিক চাপগ্রস্ত ব্যক্তি চরম হতাশ মুহূর্তে মাত্র ১০ মিনিটের জন্যেও যদি কোনো পার্ক বা খোলামেলা হাওয়াযুক্ত সবুজ পরিবেশ থেকে হেঁটে আসেন, তাহলেও তার মানসিক বিকারগ্রস্ততা কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও উপশম হয়। কারণ, এতে মস্তিষ্কে তৈরি হয় কিছু ভালো লাগার হরমোন যা মানসিক চাপ উপশমে অসাধারণ কাজ দেয়।
সূর্যের আলো বা রোদ:
প্রতিদিন অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও সকালের রোদে(সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা)একটু হাঁটাহাঁটি করুন বা সকালের রোদ গায়ে লাগান। সূর্যের আলো বা রোদে ভিটামিন ডি থাকে।
ভিটামিন “ডি” আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন “ডি” এর মাত্রা হ্রাস পাচ্ছে এবং অভাব বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু রাজ্য কার্যকর ভিটামিন “ডি” সংশ্লেষণের জন্য শীতের মাসে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায় না।
সূর্যের আলোর সংস্পর্শের মাধ্যমে শুধু মাত্র ভিটামিন “ডি” আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেই উপকারী তা নয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি ব্যথার প্রকোপ কমাতেও সহায়তা করে।
পুষ্টিকর খাবার:
পুষ্টিকর খাবার এই গ্রহের সবথেকে সেরা ওষুধ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে মনে ফূর্তি আনায়ন করে পুষ্টিকর খাবার। ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, তেল, ঘি, মাখন, চাল, ডাল, আটা খাবারের তালিকায় রাখুন।
ব্যায়াম:
ব্যায়াম বা যোগ ধ্যান অনুশীলন মনের শান্ত ও নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন। এটি সত্যিকারের আত্ন অনুসন্ধান এবং শান্তিপূর্ণ ও সুখী জীবনযাপন করার একটি কার্যকর উপায়। এতো কিছু চিন্তা না করে, এতো না ছুটাছুটি করে, চোখ বন্ধ করে আপনি একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর মনোযোগ দিন। কয়েক মিনিটের ধ্যান আপনার বিরক্তিকর চিন্তাগুলিকে দূর করে।
উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, হতাশা যাই বলুন যেগুলি আপনাকে সুখী হতে বাধা দেয়, আপনার শান্তিকে কেড়ে নিয়েছে, সেগুলি নাশ করে। আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তৃষ্ক সুস্থ্য ও সক্রিয় রাখতে এটি সবচেয়ে কার্যকরী প্রাকৃতিক ঔষধগুলির মধ্যে একটি।
ব্যায়ামের উপকারিতা বলে শেষ করা কঠিন। নিয়মিত কিছুদিন ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ শক্তি বাড়ে। স্নায়ু সতেজ ও মাংসপেশী সবল হয় এবং কোষ্টবদ্ধতা , বহুমূত্র, অর্শ ও শুক্রতারল্য প্রভৃতি দূরারোগ্য ব্যাধি সেরে যায়। যৌগিক আসন অভ্যাসে শক্তিক্ষয় কম হয় ও শক্তিবৃদ্ধি পায়, দেহ রোগমুক্ত হয়, যৌবন ও সৌন্দর্য দীর্ঘ্যস্থায়ী হয়, স্বাস্থ্য, বীর্য এবং দীর্ঘজীবন লাভ হয়। এছাড়া মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ও একাগ্রতা বৃদ্ধিতে যোগব্যায়াম অদ্বিতীয়।
যোগব্যায়াম মানুষের মন, হৃদয় এবং আত্মার শান্তি বাড়ায়। এছাড়াও শরীরকে সুস্থ্য রাখতে যোগব্যায়াম বিশ্ব নন্দিত ও সায়েন্টিফিকালি প্রমাণিত। তাই, প্রত্যেকের জীবনে যোগব্যায়াম দরকার।
রেস্ট বা বিশ্রাম বা ঘুম:
রেস্ট বা বিশ্রাম বা “ঘুম” বা “ভালো ঘুম” একটা ওষুধের নাম। কি অবাক হচ্ছেন? নাকি বলবেন আরে মশায় মসকরা করছেন কেনো। না ভাই সত্যি কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে ঘুম দামি ওষুধের মতো কাজ করে। রোগবালাইয়ের জন্য শুধু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরিবেশ দায়ী নয়। নিজের বদ অভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনব্যাবস্থা অনেকাংশে দায়ী।
ভালো ঘুম = ভালো স্বাস্থ্য
“Sleeping well makes us feel better, energetic, more alert” অর্থাৎ ভালো ঘুম আমাদের সজীব, প্রানোচ্ছল রাখে।
কর্মময় জীবনের জন্য দুটো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো–
মনোযোগ ও
কর্মস্পৃহা।
ভালো ঘুম এই দুয়ের জন্মদাতা।