প্রাণের নদী ভৈরব একেবারে যেনো মায়ের মমতা দিয়ে আঁকড়ে রেখেছে খুলনা ও যশোর জেলাকে।
অপরূপা, নবযৌবনা, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা ভৈরব যেনো খুলনার প্রাণ। একেবারে যেনো মায়ের মমতা দিয়ে আঁকড়ে রেখেছে মেহেরপুর, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট বিশেষতঃ খুলনা জেলাকে। হিন্দুদের কাছে নদটি পবিত্র হিসাবে সমাদৃত।
নদীটির দৈর্ঘ্য ২৪২ কিলোমিটার অর্থাৎ ১৫০ মাইল এবং প্রস্থ ৬০ মিটার। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। ভৈরব বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি নদী। ভৈরব নদীর শাখানদী হলো কপোতাক্ষ ও পশুর নদী।
ভৈরব শব্দের অর্থ “ভয়াবহ”। একসময় গঙ্গা পদ্মা নদীর মূল প্রবাহ এই নদীটিকে প্রমত্তা রূপ দিয়েছিলো। সেই থেকেই এই নামের উৎপত্তি। শিবের অপর নাম ভৈরবী বা ভৈরব। শিব রুদ্র মূর্তি ধারণ করলে তখন তাকে বলে ভৈরবী।
ভৈরব নদ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একটি আন্তঃসীমান্ত নদ। ভৈরব নদটি মুর্শিদাবাদ জেলার চরকুশবাড়িয়ার কাছে জলাঙ্গী নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর নদীটি মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বর্ষাকালে নদটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির প্রবাহ অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। এ সময় নদীর তীরবর্তী অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। নদীটি জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত। পদ্মা নদীর শাখানদীর মধ্যে একটি হলো ভৈরব।
বর্তমানে নওয়াপাড়া থেকে খুলনার দিকে ভৈরবে এখনও বড় বড় কয়লা ও পাথর বহনকারী লঞ্চ, স্টীমার চলাচল করে নিয়মিত কিন্তু নওয়াপাড়ার এপাশে যশোরের দিকের ভৈরব নদী শুকিয়ে যেতে যেতে ক্ষীনকায় লতার আকার ধারন করেছে।
যদিও এর পেছনে শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই দায়ী, তাই নয়, মনে করা হয়, মানুষের দখল ও মাছ চাষ নামক অবৈধ লিজিং সহ বহু লোভ-লালসার, কামনা-বাসনার করাল গ্রাসে আজ মৃতপ্রায় ভৈরব নদ।
যদিও খুলনা নগরীর অবস্থান বলতে ভৈরব নদীকে ব্যবহার করা হয় কিন্তু সেটা শেষের অংশ আর প্রকৃত ভৈরবের উৎপত্তি কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীর উপশাখা নদী গড়াইয়ের উপনদী নবগঙ্গা যেটা মাগুরাকে ঘিরে বয়ে চলেছে তারই হাত ধরে যশোরে পদার্পণ করেছে।
তাই বলা যায় ভৈরবের প্রকৃত অবস্থান যশোর। ভৈরব যশোরের নদী। আমরা যশোরের মানচিত্রে নদীর অবস্থান দেখলে দেখবো যশোরকে চতুর্দিক দিয়ে অক্টোপাসের মত জড়িয়ে ধরে আছে।
যদিও সবাই যশোর বলতে বোঝে কপোতাক্ষ নদের কথা। কিন্তু কপোতাক্ষ নদ এক দিকের একটি অংশ মাত্র, যেমন মানুষের ডানহাত মানে পুরো মানুষ নয়, তেমনই কপোতাক্ষ মানে যশোর নয়, কিন্তু ভৈরব হলো হৃদয়, যশোরের প্রতিটি উপজেলায় যার সদা পদচারনা বর্তমান (পূর্বে আরো ভালো স্বাস্থ্যবান ছিল)।
মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত ‘কপোতাক্ষ নদ’ নামক বিখ্যাত সনেট রচনা করার কারণে, আজ সারা বিশ্বে যশোর কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত বলে সুপরিচিত। বাংলাদেশের সমস্ত নদীই উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত।
দখল-দূষণের ফলে নদীর গভীরতা কমে যায়। এর ফলে নদীতে বসবাস করা জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব হারানোর আশঙ্কা থাকে। নদী সরু ও গভীরতা কমে যাওয়ায় আশপাশের এলাকা বর্ষাকাল ছাড়াও জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।
ভৈরব নদকে ঘিরে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট শহরের গোড়াপত্তন হলেও তাকে হত্যার কার্যক্রম চলছেই। কখনও ময়লা ফেলে, কখনও স্থাপনা গড়ে চলছে এই কার্যক্রম। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে বাগেরহাট শহর।
নদীর পাড়ে বসার জায়গার বেশিরভাগই দোকানিদের দখলে। পাবলিক টয়লেটগুলো বন্ধ থাকায় নদী ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে পয়ঃনিষ্কাশনের স্থান। দখল আর দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে নদী।
ময়লা-আবর্জনা ফেলেন নদে। বাজারের ব্যবসায়ীরাও ময়লার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করেন নদীকে। পৌরসভার অসংখ্য ময়লার ভাগাড় রয়েছে নদীর পাড়জুড়ে। এছাড়া কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, জবাইকৃত পশুর বর্জ্য, নষ্ট মোবাইলের যন্ত্রাংশসহ নানা ময়লা-আবর্জনা দেখা যায় নদ ও নদীর তীরে।’
ভৈরব নদী বাগেরহাট শহরের উত্তর দিক থেকে এসে সুপারিপট্টি খেয়াঘাটের কাছ দিয়ে পূর্ব দিকে চলে গেছে। দক্ষিণে প্রবাহিত ভৈরব ‘দড়াটানা’ নদী নামে পরিচিত। নদীর পশ্চিম তীরে বাগেরহাট শহর ও জেলার প্রধান বাজার। এখান থেকে তীর ধরে গেলে উত্তর-দক্ষিণ দুই দিকেই কয়েকটি ময়লার স্তূপ চোখে পড়ে।