কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর জীবনী।
“কী মাধুর্য জন্মভূমি জননি, হেরিব কি তোমারে মা নয়নে আবার।” এই রকম আরাে অনেক অমর কবিতার স্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় সংক্ষেপে ডি. এল. রায়। পাশাপাশি গানের সুরও তিনি নিজেই সৃষ্টি করে গেছেন।
বাংলা সাহিত্যের অমর গীতিকার ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হলো। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি, নাট্যকার ও সংগীতস্রষ্টা। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১২৭০ বঙ্গাব্দের ৪ঠা শ্রাবণ (ইংরেজি ১৮৬৩ খ্রি: ১৯ শে জুলাই) কৃষ্ণনগরের একব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম কার্তিকেয় চন্দ্র রায় এবং তার মায়ের নাম প্রসন্নময়ী দেবী। সাতভাইয়ের মধ্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন সবার ছােট। ছােটবেলা থেকেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন খুবই শান্ত ও ভাবুক প্রকৃতির। স্মরণশক্তি ছিলাে প্রখর।
১৮৭৮ সালে প্রবেশিকা পাস করে তিনি হুগলি কলেজে ভর্তি হন। অসুস্থতার কারণে পড়াশুনায় তেমন মনােযােগ দিতে পারেন নি। ১৮৮৪ সালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এম.এ পাস করেন। এরপর দ্বিজেন্দ্রলাল রায় সরকারী বৃত্তি পেয়ে কৃষিবিদ্যায় লন্ডনে পড়াশুনা করতে যান। দেশে ফিরে এসে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি পেলেন।
তিনি প্রায় ৫০০ গান রচনা করেন। এই গানগুলি বাংলা সংগীত জগতে দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত গান “ধনধান্যে পুষ্পে ভরা”, “বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ” ইত্যাদি।
দ্বিজেন্দ্রলাল সর্বমােট ১৬ টি নাটক রচনা করেন। হাস্যরসের সঙ্গীত রচনায় দ্বিজেন্দ্রলাল নিজস্ব একটি রীতি সৃষ্টি করেছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলালের উল্লেখযােগ্য রচনার মধ্যে আষাড়ে, হাসির গান, মন্ত্র, আলেখ্য প্রভৃতি। উল্লেখযােগ্য নাটকঃ সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, নুরজাহান মেবারপতন, দুর্গাদাস, প্রতাপসিংহ ও সীতা প্রভৃতি।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৩২০ বঙ্গাব্দের ৩ রা জ্যৈষ্ঠ (ইং- ১৯১৩ খ্রি: ১৭ মে) তারিখে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে পঞ্চাশ বছর বয়সে তিনি পরলােক গমন করেন। তিনি নেই, কিন্তু তার সৃষ্টিঅমর অক্ষয় হয়ে আছে দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে।