লেবু চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও মানসিক চাপ কমায়।
লেবু ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ থাকে। লেবু বহু শতাব্দী ধরে ঔষধি এবং সৌন্দর্য সুবিধার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিডও রয়েছে, এটি একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক, মূত্রনালীর স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করতে পারে।
অন্যান্য চায়ের পাশাপাশি লেবু চা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পাওয়া যায় লেবু চা পান করার মাধ্যমে। এটি শরীরকে হাইড্রেট করে এবং এই চায়ে ক্যালরি এবং চিনির পরিমাণও কম।
ঘর কিংবা অফিসের বাইরে কোথাও চা খেতে গেলেই প্রশ্ন আসে, লাল চা নাকি দুধ চা? চিনি কম নাকি বেশি? চা যদি খেতেই হয় তবে লেবু দিয়ে লাল চা বা লিকার চা খান।
লেবু চা এর স্বাস্থ্য উপকারিতা
নিচে লেবু চা এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
লেবু ভিটামিন “সি” এর প্রস্তাবিত দৈনিক মানের প্রায় অর্ধেকটা পূরণ করতে পারে। ভিটামিন “সি” আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
এছাড়া লেবুতে সাইট্রাস ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির সাথে লড়াই করে, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব ফেলে এবং মস্তিষ্কের রোগ এবং অন্যান্য অবক্ষয়জনিত রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
রক্তচাপ কমায়:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে, হার্টকে শক্তিশালী করতে এবং চাপ কমাতে সহায়তা করে লেবু চা। গবেষণায় দেখা গেছে যে, লেবুতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড রক্তচাপকে হ্রাস করতে সহায়তা করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লেবু চা খেতে পারেন।
ক্যান্সার বিরোধী:
লেবু চাতে ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কারণ লেবুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে কাজ করে যা ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণ হতে পারে। লেবুতে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গলার ক্যান্সার, অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং কিডনি ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
ওজন কমাতে:
যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য লেবুর শরবত আদর্শ। লেবুতে থাকা ভিটামিন “সি” শরীরের বাড়তি চর্বি কমাতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থকে বের করে এবং বিপাকিয় শক্তি বাড়ায়।
প্রতিদিন সকালে লেবু চা খেতে পারেন মধু দিয়ে। পেকটিন ফাইবার নামক এই উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করার পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। যার ফলে ওজন কমতে শুরু করবে।
হজমে সহায়তা করে:
লেবু ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পরিচিত, যা দেহে ফ্যাটের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। কিছু অসুস্থতার কারণে যদি কেউ বমি বমি ভাব বা বমি বমি ভাব অনুভব করে তবে আদা সহ লেবু চা এই লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি পেতে একটি অলৌকিক কাজ করে এবং হজমে সহায়তা করার সাথে সাথে তাৎক্ষণিক স্বস্তি দেয়।
কোলেস্টেরল কমায়:
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে উল্লেখযোগ্য কাজ করে লেবু চা। এটি শরীরের উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা যেমন বাড়িয়ে দেয়, তেমনি ক্ষতিকর কোলেস্টেরল রাখে নিয়ন্ত্রণে।
গলাব্যথা ও মুখের ঘা কমায়:
লেবুর রসে আছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। যার ফলে গলাব্যথা, মুখের ঘা আর টনসিলের সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে লেবু চা।
ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে:
লেবু চা পান করলে ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ত্বক আরও উজ্জ্বল হয়। লেবু আমাদের ত্বকের পোড়াভাব যেমন দূর করতে পারে, তেমনি চোখের চারপাশের কালো দাগও মিলিয়ে দিতে পারে।
মানসিক চাপ কমায়:
লেবু চা খেলে মানসিক চাপ কমে। শুনে অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ শরীরের রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদান বের করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে লেবু। দেহে টক্সিনের মাত্রা যতো কমতে থাকে, মস্তিষ্ক ততো চনমনে হয়ে ওঠে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্ট্রেস লেভেল কমতে শুরু করে।
যেভাবে লেবু চা তৈরি করবেন
একটি সসপেনে পানি নিন এবং তা ফুটান। এবার এতে চা পাতা যোগ করুন এবং পানির রং পরিবর্তন হতে দিন। এবার আপনার প্রিয় কাপে এটি ঢেলে দিন। এবার এতে লেবু চিপে দিন। আপনি চাইলে এতে মধু ও আদাও দিতে পারেন। এ ছাড়া এর সঙ্গে পুদিনা পাতা মেশানো যেতে পারে। গরমে লেবু চা বেশ উপকারী।
- কমলালেবুর রস বয়স বা তারুণ্য ধরে রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- সাইট্রাস ফল বা লেবু জাতীয় ফল কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায় ও হার্ট সুস্থ্য রাখে।
- ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ কমলালেবু স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় ও কিডনিতে পাথর হওয়া রোধ করে।
- লেবু বা লেবুর শরবত কিডনি পাথর প্রতিরোধে, ত্বকের সৌন্দর্যে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুণ কার্যকরী।
- লেবুর খোসা ত্বকের যত্নে, হার্ট ভালো রাখতে ও পিত্তথলির পাথর নিরাময়ে কার্যকরী।