রোগীর পিঠ, কোমর এবং পায়ে চাপজনিত ক্ষত বা বেডসোর দেখা গেলে করণীয় কি?

রোগীর পিঠ, কোমর এবং পায়ে চাপজনিত ক্ষত (বেডসোর) দেখা দেয়, তবে দ্রুত সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। নিচে এই সমস্যার সমাধানের জন্য ধাপে ধাপে নির্দেশিকা দেওয়া হলো:


চাপজনিত ক্ষতের যত্ন ও সমাধান

১. ক্ষত পরিষ্কার এবং শুকনো রাখা

  • ক্ষতকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে এটি পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পদ্ধতি:

  • পরিষ্কার পানি বা লবণাক্ত পানি (স্যালাইন) দিয়ে ক্ষত ধুয়ে নিন। সাবান বা হানিকিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না।
  • ধোয়ার পর, ক্ষতকে আলতোভাবে শুকিয়ে নিন। ঘষা থেকে বিরত থাকুন।

২. ড্রেসিং ব্যবহার

  • ক্ষতকে ঢেকে রাখা এবং নিরাময়ের জন্য সঠিক ড্রেসিং ব্যবহার করুন।

পদ্ধতি:

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আধুনিক ড্রেসিং ব্যবহার করুন, যেমন হাইড্রোকলয়েড, ফোম ড্রেসিং বা অ্যালগিনেট ড্রেসিং।
  • ড্রেসিং নিয়মিত পরিবর্তন করুন এবং প্রতিবার ক্ষত পরীক্ষা করুন।

৩. অবস্থান পরিবর্তন

  • রোগীর দেহের নির্দিষ্ট অংশে দীর্ঘক্ষণ চাপ না পড়ার জন্য অবস্থান পরিবর্তন করা জরুরি।

পদ্ধতি:

  • রোগীকে প্রতি ১-২ ঘণ্টা পর পর আলতো করে পাশ ফেরান।
  • বিভিন্ন অবস্থানে রাখতে চাপমুক্ত বালিশ বা কুশন ব্যবহার করুন (যেমন পিঠের নীচে বা পায়ের নিচে)।

৪. প্রেসার রিলিফ ম্যাট্রেস ব্যবহার

  • বেডসোরের চাপে ক্ষতকে কমানোর জন্য বিশেষ ম্যাট্রেস প্রয়োজন।

পদ্ধতি:

  • এয়ার-ফ্লো ম্যাট্রেস বা জেল ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন, যা চাপ ভাগাভাগি করে দেয়।
  • চাপ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

৫. সংক্রমণ প্রতিরোধ

  • বেডসোর দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে, যা সঠিক যত্ন না নিলে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

পদ্ধতি:

  • ক্ষত থেকে পুঁজ, লালচে ভাব বা তীব্র ব্যথা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • প্রয়োজন হলে, চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বা মলম ব্যবহার করুন।

৬. পুষ্টি নিশ্চিত করা

  • ক্ষত সেরে ওঠার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পদ্ধতি:

  • প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডাল, ডিম, মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
  • ভিটামিন সি এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার (যেমন লেবু জাতীয় ফল, বাদাম, এবং বীজ) রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে নিশ্চিত করুন।

৭. ফিজিওথেরাপি এবং হালকা ব্যায়াম

  • আক্রান্ত অংশ বাদ দিয়ে দেহের অন্য অংশ সক্রিয় রাখা প্রয়োজন।

পদ্ধতি:

  • কেয়ারগিভার বা থেরাপিস্টের সাহায্যে রোগীর হাত এবং পায়ের হালকা নড়াচড়া করান।
  • রক্ত চলাচল উন্নত করার জন্য ছোটখাটো শরীরচর্চা করতে উৎসাহিত করুন।

৮. চিকিৎসকের পরামর্শ

  • যদি ক্ষত গুরুতর হয়ে যায় বা নিরাময় ধীর হয়, তবে চিকিৎসকের বিশেষ পরামর্শ গ্রহণ করুন।

পদ্ধতি:

  • সম্ভব হলে একটি ডার্মাটোলজিস্ট বা ওয়াউন্ড কেয়ারের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
  • প্রয়োজনে ডি-ব্রাইডমেন্ট (ক্ষতের মৃত টিস্যু অপসারণ) বা অন্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করুন।

অতিরিক্ত টিপস

  • রোগীর ত্বক সবসময় পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখুন।
  • ক্ষত থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হচ্ছে কিনা প্রতিদিন পরীক্ষা করুন।
  • রোগীকে মানসিকভাবে শক্তি জোগান এবং ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ দিন।

এই পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে বেডসোরের নিরাময় ত্বরান্বিত হবে এবং রোগী আরও ভালো অনুভব করবেন।