রূপচর্চায় নারকেল তেল।
যুগ যুগ ধরে চুলের যত্নের পাশাপাশি নারকেল তেল ত্বকের যত্নেও ব্যবহার হয়ে আসছে। নারকেল তেল খুবই ভালো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। এটা ত্বককে ভেজা ভেজা রাখতে সহায়তা করে এবং আবহাওয়ার ক্ষতি থেকে বাঁচায়। ত্বক পরিষ্কার করতেও নারকেল তেল ব্যবহার করুন।
এটা শুধু ত্বক থেকে ক্ষতিকর টক্সিনই দূর করে না; বরং ত্বকের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কার্যকর রাখতে সহায়তা করে। ত্বকের যত্নের ব্যাপারে নারকেল তেল যতটা কাজের তার ধারে কাছে আর কিচ্ছু আসতে পারবে না।
ত্বকের সুস্থতা ও সৌন্দর্যের জন্য আস্থা রাখতে পারেন নারিকলে তেলে। ত্বকের যত্নে সাধারণ নারিকেল তেল না কিনে এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল কিনুন। এই তেল সাধারণ নারিকেল তেলের চেয়ে হালকা, পরিশুদ্ধও বেশি। নিয়মিত নারিকেল তেলের ব্যবহার ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া নষ্ট করে ত্বকে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
ত্বকে কোনোরকম জ্বালাপোড়াভাব হলে তা কমাতেও নারকেল তেল যথেষ্ট কার্যকর। শুষ্ক ত্বকের জন্য নারিকেল তেলের মতো ভালো ময়শ্চারাইজার আর নেই। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, রূপচর্চায় নারকেল তেলের অসাধারণ কিছু ব্যবহার সম্পর্কে-
ঠোঁটের যত্নে:
শীত হোক বা গরম অনেকেই সারা বছর ঠোঁট ফেটে যাওয়া বা নিষ্প্রাণ ঠোঁটের সমস্যায় ভুগে থাকেন। ঠোঁট দুটোকে সুন্দর রাখতে সারা বছর হিমসিম খেতে হয়। তাদের জন্য নারকেল তেল একটি সুন্দর সমাধান হতে পারে কারণ এটি আপনার ঠোঁটকে হাইড্রেট করবে এবং সেই সাথে ময়েশ্চারাইজড করে তুলবে এক নিমেষেই।
প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক-দুই ফোঁটা নারকেল তেল ঠোঁটে অ্যাপ্লাই করে ঘুমিয়ে পরুন। আর সকালে উঠেই পান সুন্দর, কোমল ঠোঁট।
হাত-পা-কনুই-গোড়ালির যত্নে:
ছোটবেলায় কি এটা ভেবে অবাক হয়ে যেতেন যে, কেন নানি-দাদিরা রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাতের তালুতে সামান্য একটু নারকেলের তেল নিয়ে হাত-পায়ে মাখেন। ভালো করে হাত-পা ধুয়ে বিছানায় যাওয়ার আগে একটু নারকেল তেল নিন।
আঙুলের গিঁটগুলোতে, গোড়ালি আর কনুইয়ের শক্ত ত্বকে ঘষে ঘষে তেল মাখুন। এভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন শক্ত হয়ে যাওয়া বা খানিকটা ভাঁজ পড়ে যাওয়া ত্বক কীভাবে মসৃণ আর নরম হয়ে যায়। নানি-দাদির বুদ্ধিটা আপনিও এভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন:
ত্বক রোদে বিশ্রীভাবে পুড়ে গেলে ব্যবহার করুন নারকেল তেল। রোদে পোড়া ত্বক অসম্ভব শুকনো হয়ে যায়, জ্বালা করে। নারকেল তেল ত্বকের সেই হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে এনে জ্বালাভাব কমায় ও ত্বক শীতল করে। রোদ থেকে ফিরে মুখে জলে ভেজানো তোয়ালে চাপা দিয়ে ১০ মিনিট রাখুন।
ত্বক ঠান্ডা হয়ে গেলে নারকেল তেল মেখে নিন উপকার পাবেন।
চোখের নিচের কালি দূর করতে:
চোখের নিচে কালি জমছে, ত্বকে ভাঁজ পড়ছে, বলিরেখার মতো হচ্ছে! বিষয়টা মেনে নিতে পারছেন না আবার বাজারি কোনো ক্রিমও মাখার সাহস পাচ্ছেন না। সামান্য একটু নারকেল তেল আঙুলের ডগায় নিয়ে আলতো করে মাখুন।
নারকেল তেলে সমৃদ্ধ ভিটামিন “ই” চোখের নিচের কালি বা ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করে। আর এই তেল এতটাই হালকা যে শরীরের সবচেয়ে কোমল নরম ও সংবেদনশীল অংশে মেখেও উপকৃত হতে পারবেন।
মেকআপের ফাউন্ডেশন প্রাইমার:
এমনকি মেকআপ আসক্ত ব্যক্তিরাও ব্যবহার করতে পারেন নারকেল তেল। ভালো ফাউন্ডেশনের জন্য এই তেল খুবই ভালো প্রাইমার। কিছুটা তেল নিয়ে মুখে মাখুন, আপনার ত্বককে তেল শুষে নিতে একটু সময় দিন। এবার ময়েশ্চারাইজার বা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
দেখবেন, আপনার মেকআপ কত মসৃণ থাকে এবং কতটা স্থায়ী হয়। চোয়ালের হাড়ে বা থুতনিতে একটু আলো ছড়াতে চাইলে মেকআপের ওপর হালকা একটু নারকেলের তেল লাগিয়ে দিন, রীতিমতো চমক ছড়াবে।
মেকআপ তুলতে:
চড়া, এঁটে বসা মেকআপও নারকেল তেল নিমেষে তুলে দিতে পারে। মুখে ভালোভাবে নারকেল তেল মেখে নিন, আপনার মেকআপ কয়েক সেকেন্ডেই গলে যাবে। এবার তুলো দিয়ে মুছে ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হল।
মুখ পরিষ্কার করতে:
আপনার যদি ড্রাই স্কিন হয়, তা হলে নারকেল তেল দিয়ে দিব্যি ক্লেনজ়িংয়ের কাজ সেরে ফেলতে পারেন। মুখটা প্রথমে জল দিয়ে ধুয়ে নিন তারপর হাতে পরিমাণ মতো নারকেল তেল নিয়ে দু’হাতে ঘষে মুখে মেখে নিন। বৃত্তাকারে মাসাজ করুন। কয়েক মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন অথবা হালকা গরম জলে ভেজানো তুলে দিয়ে মুছে নিন। ত্বক পরিষ্কারতো হবেই সেই সঙ্গে ত্বক আর্দ্রও থাকবে।
নখের যত্নে:
অনেকেই পাতলা এবং ভঙ্গুর নখের সমস্যা ভোগেন। কারো কারো নখ একটু বড় হলেই ভেঙে যায় বা নেইল পলিশ বেশিদিন ইউজ করলে নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দেয় তাদের জন্য নারকেল তেল খুব ভালো একটি সমাধান। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার নখগুলিতে নারকেল তেল ব্যবহার করুন, কারণ সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে এটি সবচেয়ে ভালো সময়। ম্যানিকিওর করার পরেও আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন।