মুদ্রাদোষ কী? মুদ্রাদোষ কেন হয়?
মুদ্রাদোষ কী?
মুদ্রাদোষএকটি বিশিষ্টার্থক শব্দ বা বাগধারা। বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধান অনুযায়ী ‘মুদ্রা’ শব্দের প্রাথমিক অর্থ হচ্ছে, টাকা-পয়সা। কয়েন কে মূলত আমরা মুদ্রা বলে থাকি। সেই অনুযায়ী মুদ্রাদোষ বাগধারাটির অর্থ হওয়া উচিৎ ছিল ‘অর্থের কুপ্রভাব’ বা এই জাতীয় কিছু।
কিন্তু মুদ্রাদোষ বলতে মূলত মানুষের এমন সব কাজকর্ম, কথা বা আচরণ কে বুঝায় — যা মানুষ অবচেতন মনে বারবার করতে থাকে। সোজা বাংলায় একে ‘বদঅভ্যাস’ বলতে পারেন। কয়েনের বাইরেও মুদ্রার আরেকটি অর্থ আছে, যার অর্থ হচ্ছে “ভঙ্গিমা”।
যেমন, একজন নৃত্যশিল্পী নাচের কতগুলো ‘মুদ্রা’ আয়ত্ত্ব করেছেন, তার উপর ভিত্তি করে তার দক্ষতা বিচার করা হয়। সেই জন্য দেহের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কথা বলার সময় বার বার ব্যবহার করা হলে, অথবা কোন শব্দ কথা বলার সময় অহেতুক বার বার ব্যবহার করা হলে, আমরা তাকে -“মুদ্রাদোষ” বলি।
প্রায় সব মানুষেরই কিছু না কিছু মুদ্রাদোষ আছে। রোজকার কথা বলা, হাঁটা-চলায় অস্বাভাবিকতা অনেকেরই প্রকাশ পায়। সে না বুঝলেও অন্যের চোখে ধরা পড়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে এসব মুদ্রাদোষ এতটাই প্রবল হয়ে উঠে যে, একসময় মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মুদ্রাদোষের চিকিৎসা আছে। তবে সচেতন হতে হবে শুরুতেই।
মুদ্রাদোষ কেন হয়?
কোনো রকম দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, গ্লানি, উত্তেজনা বা উচ্ছ্বাস হলে মুদ্রাদোষ বেড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ ১৮ বছর বয়সের আগেই আরম্ভ হয়। তবে সতর্ক হলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এগুলি সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়। খুব অল্প ক্ষেত্রেই মুদ্রাদোষ প্রাপ্তবয়স্কদের দেখা যায়।
মুদ্রাদোষ থাকলে এটির উপর রোগীর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না, শরীর নিজে নিজেই এমন সব অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া করে।
মুদ্রাদোষের কয়েকটি লক্ষণ:
তোতলামি :
কথা আটকে যায় ও তার সঙ্গে রোগী একটা নির্দিষ্ট অক্ষর বা স্বরবর্ণ বার বার উচ্চারণ করতে থাকে। দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, গ্লানি, উত্তেজনা, রাগ বা উচ্ছ্বাস হলে বেড়ে যায় তোতলামি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে এই রোগ প্রকাশ পায়, যখন তারা অনেক বেশি মাত্রায় বিভিন্ন শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে।
অবসেশনাল ফোবিয়া :
অবসেশনাল ফোবিয়া বলতে বোঝানো হয়েছে, রোগীর সামনে ছুরি থাকলে তা দিয়ে খুন করে ফেলবে এমন একটা ভয় তার মধ্যে কাজ করে। কোনো খারাপ কিছু ঘটিয়ে ফেলার চিন্তা মাথায় সবসময় ঘুরপাক খায়।
অবসেশনাল ডাউটস :
একটা কাজ করে বারবার চিন্তা করে যে কাজটা করেছে কি না, যেমন- তালা লাগিয়ে বার বার তালাটা টেনে দেখে যে তালা ঠিক মতো লাগানো হয়েছে কিনা।
অবসেশনাল ইম্পালস :
গাড়িতে চড়লেই রোগীর মনে হয়ে যে, সে চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে দেবে। কোনো সামাজিক বা ধার্মিক অনুষ্ঠানে গেলে তার মনে হতে পারে যে সে কাউকে গালাগালি দিয়ে ফেলবে। রাস্তায় চলার সময় লাইট পোস্ট ছুঁতে ছুঁতে যায়। এমন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়।