ভাট ফুল বা বনজুঁই পাতার রস জ্বর সারায়, কৃমি নাশ করে ও ত্বকের জন্য ভালো।

বসন্ত ঋতুতে(ফাল্গুন-চৈত্র মাসে) বনে-বাদাড়ে, বাগানে, মাঠে প্রান্তরে অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে ওঠা যে ফুল সবার নজর কেড়ে নেয় সেটি আমরা অনেকেই জানি। বাংলায় ভাট ফুল, ইংরেজিতে Clerodendrum, হিন্দিতে Bhant, Bhates, সাঁওতালিতে খারবারি নামে পরিচিত গুল্ম জাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ।

শীতের ছুটি শেষে প্রকৃতিতে বসন্ত তার আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। নতুন রূপে সেজেছে প্রকৃতি। বসন্তের মাঠে ঘাটে যে ফুলগুলো সহজেই মানুষকে কাছে টানে তার অন্যতম একটি ভাট ফুল।

কেউবা একে আবার বনজুঁই বা ঘেঁটু ফুলও বলে। এই ফুল বনজুঁই বা ভাট ফুল বা পাহাড়ি গ্লোরি bower, bag flower, এবং bleeding-heart ইত্যাদি নামে পরিচিত।

চাষ নয়, কিংবা শখের বশেও কেউ লাগান না। ঝোপ-ঝাড়ে, বনে-জঙ্গলে, গ্রামের রাস্তার পাশে অযত্ন আর অবহেলায় জন্মালেও এ ফুল নজর কাড়েই। নিজের সৌন্দর্য ছড়িয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নেয়। খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরাসহ দেশের প্রায় অধিকংশ জেলায় এ ফুল দেখা যায়।

ভাটফুলের ইংরেজি নাম বা সাধারণ নাম Clerodendrum. এর বোটানিক্যাল বা বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম (Clerodendrum viscosum), Clerodendrum Infortunatum.

Clerodendrum-হলো ফুল গাছের একটি Genus বা বর্গ বা মহাজাতি এবং পরিবার Lamiaceae (Verbenaceae)।এটি ইনফরচুনাটাম (Infortunatum) প্রজাতির এবং বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এবং শ্রীলঙ্কা সহ এশিয়ার ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশীয়।

ভাট গাছের প্রধান কান্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। দেখতে কিছুটা পান পাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে।

পাপড়ির রঙ সাদা এবং এতে বেগুনি রং এর মিশেল আছে। সাধারণত মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ ফুল গ্রামের মেঠো পথের দু’ধারে ফুটে থাকতে দেখা যায়। এ ফুল রাতে বেশ মিষ্টি সৌরভ ছড়ায়।

ভাট ফুল বা ভাট গাছের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা:

ফাগুন সংক্রান্তিতে গ্রামের বাচ্চা ছেলে মেয়েরা প্রতিযোগিতা করে ভাট ফুল সংগ্রহ করে মন্ত্রের মতো গান গেয়ে সকালে ভোরবেলা উঠে পুজো দিয়ে থাকে। সে এক অন্য রকম ভালোলাগা। পুরান অনুসারে, ঘেঁটু বা ঘন্টাকর্ণর সাথে শিব ঠাকুরের সম্পর্ক।

এই ভেষজ উদ্ভিদটি বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে দেখা যায়। তেতো স্বাদের এই উদ্ভিদের রয়েছে অসাধারণ ঔষধি গুণাগুণ-

শ্বাসযন্ত্রের রোগ নিরাময়েঃ

ক্লেরোডেনড্রাম গাছের ছাল এবং শিকড় দিয়ে একটি decoction তৈরি করুন। এটির ৫0 মিলি দিনে দুইবার নিন। এটি কাশি এবং জ্বর নিরাময় করে।

ক্ষত সারায়:

ভাট গাছের পাতা পিষে নিন। এটি ক্ষত জায়গায় লাগান। এই প্রতিকারটি ম্যাচুরেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটি আলসার নিরাময়ে সাহায্য করে। এটি ফোলা ভাব কমাতেও সহায়তা করে।

ত্বকের যত্নে:

ক্লেরোডেনড্রাম উদ্ভিদের শিকড় এবং পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করুন। এটি ত্বকের সংক্রামিত জায়গায় প্রয়োগ করুন।

যাদের বিভিন্ন চর্ম সমস্যা রয়েছে তারা যদি নিয়মিত এই বনজুঁই/ভাট ফুল সংগ্রহ করে এটি রস করে দিনে বার দুই ক্ষত স্থানে মালিশ দিতে পারেন তাহলে আপনার যে কোন চর্ম রোগ দ্রুত সেরে যাবে। এভাবে ১০- ১৫ দিন নিয়মিত ব্যাবহার করলে চর্ম রোগের জন্য ভাল ফল পাওয়া যায়।

লিভার ভালো রাখে:

লিভার সম্পর্কিত রোগ নিরাময়ের জন্য ক্লেরোডেন্ড্রামের তাজা পাতা চিবান। এটি ডায়রিয়ার নিরাময়েও সহায়তা করে।

পোকামাকড় কামড়ালে বনজুঁই/ভাট ফুলঃ-

অনেক সময় বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দিনে অনেক ব্যাথা করে এবং ফোলে যায় সে ক্ষেত্রে এই বনজুঁই/ভাট ফুল সংগ্রহ করে ছেঁচে রস করে এই ক্ষত স্থানে মালিশ করলে ফোলা ও ব্যাথা দ্রুত কমে যায়।

কৃমি প্রতিরোধেঃ-

ভাট গাছের পাতার রস কৃমি প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে থাকে। কৃমি নাশক হিসেবে কাজ করা ছাড়াও আরও অন্যান্য রোগেরও কাজ করে এই ভাট ফুল।

জ্বর প্রতিরোধে:

ভাট গাছের পাতার রস জ্বর সারাতে ভালো কাজ করে। পাতা ভালোভাবে ধুয়ে রস করে নিন। ৪০ মিলিগ্রাম দিনে একবার সেবন করার কথা বলা হলেও আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

মাংসপেশির ব্যথা ও যৌন রোগ সারায়:

মাংসপেশির ব্যথা কমানোর জন্য  সপ্তাহে চার বার ১০ মিলি রুট ডিকোশন গ্রহণ করুন। রস পেতে ক্লেরোডেনড্রমের পাতা গুঁড়ো করে নিন। প্রতিদিন এটির ৭ মিলি গ্রহণ করুন।

গরু-ছাগলের গায়ে উকুন হলে ভাট গাছের পাতা বেটে দুই থেকে তিনদিন লাগালে উকুন মরে যায়।

সতর্কতা

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করলে বা বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করলে অবশ্যাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্র:herbpathy.com, wikipedia