বগলে হওয়া দাগ ও দুর্গন্ধের থেকে বাঁচার উপায়।
আমাদের শরীরের দুর্গন্ধ আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার বগল দিয়ে অত্যাধিক গন্ধ ছাড়ার জন্য অন্য মানুষের অসুবিধা সৃষ্টি করে। বেশির ভাগ সময় আমরা নিজেরাই লজ্জা পাই দুর্গন্ধের জন্য এবং লোকজনদের সামনে থেকে দূরে সরে যাই।
ঘামের দুর্গন্ধ ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপাদিত হয়। মেইডক্যাল বিজ্ঞানে এই ব্যাকটেরিয়া ব্রোমিডোড্রিস নামে পরিচিত। ঘামের দুর্গন্ধ এর প্রধান কারণ শরীরে ঘাম হওয়া। বয়ঃসন্ধিকাল পৌঁছেছেন এমন মানুষ শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ তৈরি হয়।
আমাদের রোজকার জীবনেও খুব প্রভাব ফেলে এই সমস্যা। আবার নিজেরই হয়তো খারাপ লাগে কারণ সারা দিন বগলের ঘামে গন্ধে জামা কাপড় ভিজে চ্যাটচ্যাট করে।
তাই যদি বগলের দুর্গন্ধের কারণে বিব্রত হতে না চান, তাহলে এমন কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি রয়েছে যার ফলে আমরা সহজেই বগলে হওয়া দাগ এবং দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে পারি। চলুন জেনে নেয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে-
লেবু:
আমাদের বগলে হওয়া দাগকে লেবু খুব সহজেই দূর করতে পারে। বলা হয় যে বগলের গন্ধ দূর করার জন্য লেবু সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। লেবুর একটা টুকরো কেটে বগলে ঘষতে হবে। এই পদ্ধতিটি নিয়ম করে বেশ কিছুদিন মেনে চললেই বগলে হওয়া দাগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
আলুর রস:
আমরা সবাই জানি আলুর রস খুবই উপকারী। বগলের দুর্গন্ধ দূর করে আলুর রস। আলুর রসের সঙ্গে একটু শশার রস মিশিয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট বগলে লাগিয়ে রাখুন। নিয়মিত করেই দেখুন উপকার পাবেন।
এছাড়াও আলু একটি প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট। আলুকে ঘষে তারপর চিপে তার রস বের করুন। তারপর এই রসটা যদি বগলের তলায় লাগানো যায় তাহলে আমাদের বগলের ত্বক আবার তার নিজের রঙ ফিরে পাবে।
কর্পূর:
এত দিন শুধু জানতেন কর্পূর শুধুমাত্র পুজোর সামগ্রী হিসেবে কাজে লাগে। একেবারেই তা নয়। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু জানিয়েছেন অন্য কথা। প্রতিদিন স্নানের সময়ে ২-৩ টুকরো কর্পূর জলে দিয়ে স্নান করুন। দেখবেন এক মাসের মধ্যে আপনার বগলের গন্ধ চলে গিয়েছে।
তুলসি পাতা:
তুলসি পাতা দিয়ে বানানো চা প্রাকৃতিকভাবে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন এই চা পান করলে ঘাম কম হবে এবং ঘামের দুর্গন্ধ হবে না। তবে তুলসি পাতার চা দিয়ে বগল পরিষ্কার করলেও ভালো উপকার পাওয়া যায়।
প্রথমে একটি তুলোর বল ঠাণ্ডা তুলসি পাতার চায়ে ভিজিয়ে নিয়ে বগলে হালকা ঘষে লাগান। তারপর শুকানো পর্যন্ত কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। ভালো উপকার পাবেন।
শালগমের রস:
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে শালগমের রস ব্যবহারের মাধ্যমে ঘামের বিশ্রী গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটির রস ব্যবহার করলে অন্তত দশ ঘন্টার জন্য আপনার বগলের ঘাম থেকে বিশ্রী গন্ধ ছড়াবে না। শালগমের রস তুলার বলে নিয়ে আন্ডার আর্মে আলতো করে লাগান। ৫ মিনিট ম্যাসাজ এর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আপেল সাইডার ভিনেগার:
আমাদের বগলের দুর্গন্ধ দূর করার এক মহৌষধ হলো ভিনেগার। ভিনেগার ডিওড্রেন্টের মতোও কাজ করে। গোসলের পর কিছুটা তুলো ভিনেগারে ভিজিয়ে তা আমাদের বগলের তলায় রাখতে হবে। কিছু মিনিট রাখার পর পরই বগলের গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
আপেল সাইডার ভিনেগার এমন একটি ভিনেগার যা তৈরি হয় আপেলের রস দিয়ে এবং অ্যাসিডিক হওয়ার কারণে এটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে আন্ডার আর্মকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখরে পারে।
চন্দনের গুঁড়া ও গোলাপজল:
চন্দনের গুঁড়ার সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে সেটা যদি রোজ বগলে লাগানো যায়, তাহলে বগলের দাগ দূর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বগলের দুর্গন্ধও দূর হবে।
টমেটো:
এর প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক ঘামে দূর্গন্ধ সৃষ্টি করে এমন ব্যাক্টেরিয়া দূর করে। সেক্ষেত্রে, টমেটোর ভেতরের অংশ বগলে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। অথবা, গোসলের পানিতে দুই কাপ টমেটোর রস মিশিয়ে গোসল করুন বা ২০ থেকে ৩০ মিনিট তাতে ডুবে থাকুন। ভালো ফলাফল পাবেন।
বেকিং সোডা:
আরেকটি খুবই কার্যকরী পদ্ধতি হলো বেকিং সোডা। বেকিং সোডার সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে তার একটি পেস্ট বানাতে হবে। সেই পেস্টটা বগলে লাগালে খুব তাড়াতাড়ি আর সহজেই বগলের দাগকে দূর করা যাবে।
রোজমেরি:
রোজমেরিতে মিথানল আর ক্লোরোফিল আছে যার মধ্যে প্রাকৃতিক ডিওড্রেন্টের গুন আছে। রোজমেরিতে জিঙ্কও আছে। জিঙ্কের অভাবে আমাদের শরীরে দুর্গন্ধ হয়। রোজিমেরিতে এইসব গুন থাকার ফলে রোজমেরি আমাদের বগলের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
গোলাপ জল:
গোলাপের মন মাতানো সৌরভের জন্য সৌন্দর্য সচেতন মানুষ সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে বহুকাল থেকেই গোলাপ জল ব্যবহার করে আসছেন। তুলোর বল গোলাপ জলে ভিজিয়ে তা বগলে লাগিয়ে রাখুন। আন্ডারআর্মের ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখতে, বডি-স্প্রে ব্যবহারের পরিবর্তে গোলাপ জল ব্যবহার করুন।
এছাড়া সব সময় ত্বক পরিষ্কার রাখলে এবং হাওয়া চলাচল করতে পারে এমন জামা পড়লে ঘামের দুর্গন্ধ হয় না। এছাড়াও সুতি কাপড়ের জামা পরার চেষ্টা করুন। কারন অন্য কাপড়ের চেয়ে সুতি কাপড় খুব দ্রুত ঘাম শুষে নেয়, যার ফলে দুর্গন্ধ কম হয়।