তেল বা চর্বি কি উপকারী? বেশি তেল দিয়ে রান্না করা খাবার কতটা স্বাস্থ্যকর জেনে নিন।

তেল বা চর্বি এমন একটি খাবার যা আমরা প্রতিদিন খাচ্ছি। রান্না করতে যাবেন তেল ছাড়া উপায় নেয়। তেল না হয় খেলাম কিন্তু এখানেও সমস্যা।

না অল্প তেলে গৃহিণীরা রান্না করতে পারেন, না অল্প তেলের রান্না মুখে ভালো লাগে। তাই প্রতিদিন শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত তেল ঢুকে পড়ছে।

তেল বা চর্বি খাওয়ার ফলে কলেস্টেরল- এর মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি।

খাবার টেবিলে যদি থাকে আলু ভাজা, বেগুন ভাজা বা তৈলাক্ত বড় মাছ ভাজা তাহলে তো কথাই নেই।

মনে করুন আপনি ডাল দিয়ে এক প্লেট ভাত খাবেন বা ডাল খেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু তেলচুপচুপে ভাজির কল্যানে আপনি দুই প্লেট বা তিন প্লেট খেয়ে নিচ্ছেন।

পিজ্জা, বার্গার থেকে শুরু করে অধিক তেল চর্বি সমৃদ্ধ মাছ, মাংসের বিভিন্ন আইটেম খাবার টেবিলে দেখলে মুখের জল আটকাতে পারিনা।

আমাদের খাবারের রুচি বাড়িয়ে দেয় মুখরোচক এই খাবারগুলো। বিয়ে, জন্মদিন বা যে কোনো অনুষ্টানে তেল, চর্বি ও মশলাযুক্ত খাবার খেতে আমরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

চর্বি বা তেল কি উপকারী?

তেল আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তেলের প্রধান কাজ হলো –

  • আমাদের ত্বককে নরম রাখে।
  • আমাদের চুলকে উজ্জ্বল ও মসৃন করে।
  • ভিটামিন “ডি”- এর চাহিদা পূরণ করে।
  • ভিটামিন “এ “- এর চাহিদা পূরণ করে।
  • শরীরে তাপ সরবরাহ করে।
  • তৈলাক্ত মাছ ও মাংসে থাকা ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরেকে স্ট্রেসমুক্ত রাখে।

তাহলে তেল বা চর্বিকে আমরা না বলতে পারছি না। তেল আমরা অবশ্যই খাব তবে পরিমাণ মতো। তেল যত কম খাওয়া যাই ততই মঙ্গল।

কারণ বর্তমান সময়ে হাজারো তেলে ভাজা খাবার থেকে শুরু করে মাংস, ফার্স্ট ফুড – সুস্বাদু সকল খাবার বা যে খাবারগুলো আমরা প্রতিদিন বেশি বেশি খেয়ে থাকি সবকিছুই অতিরিক্ত তেলযুক্ত। 

তেল যুক্ত খাবারের পাশাপাশি যদি প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার অর্থাৎ ফলমূল ও সবজি খাই তাহলে খারাপ কোলেস্টেরোল আমাদের শরীরে জমতে পারবে না।

ফ্যাট vs তেল:

তেল ও ফ্যাট দুটোই একই জিনিস। একে ওপরের পরিপূরক। তেল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল থাকে। কিন্তু ফ্যাট বা চর্বি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সলিড থাকে।

আমরা যদি ভালো ফ্যাট সমৃদ্ধ তেল খেতে পারি তাহলে রক্তে কোলেস্টেরোল- এর মাত্রা বাড়বে না। ভালো ফ্যাট সমৃদ্ধ তেল হিসাবে পরিচিত —–

  • অলিভ অয়েল ( not এক্সট্রা virgin )
  • ক্যানোলা অয়েল
  • ভেজিটেবল অয়েল

কিন্তু এগুলো বাদে অন্য সব তেল বা যে তেলগুলো আমরা বেশি খেয়ে থাকি সেগুলো কলেস্টেরল লেভেল বাড়িয়ে তোলে। তাই অতিরিক্ত তেলতো খাবই না তদুপরি ভালো ফ্যাট নির্বাচন করবো।

কিছু ভালো ভেজিটেবল ফ্যাট – safflower অয়েল, sunflower oil, soy oils, Walnuts এন্ড bazil nuts oil ইত্যাদি। এছাড়া avocado অয়েল, peanut অয়েল ভালো ফ্যাট।

তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খেলে ক্ষতি কি?

তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খেলে পাকস্থালীর ওপর চাপ বেড়ে যায়। হজম শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

আপনি ওভারটাইম কাজ করলে যেমন অসুস্থ্য হয়ে পড়েন তেমনি পাকস্থলীকে ওভারটাইম কাজ করতে হয়। অস্বস্তি বোধ করা, বমি, bloating- এগুলোতো লেগেই থাকবে।

বার বার দৌড়ে বাথরুমে যেতে কেউই পছন্দ করে না। এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পেট ব্যাথা ও ডায়রিয়ার মূল কারণ অতিরিক্ত তেল চর্বি খাওয়া।

তাই তেল-চর্বি পরিমাণমতো খান তাহলে বার বার দৌড়ে বাথরুমে যাওয়া ঠেকাতে পারবেন।

ব্রণের সমস্যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা। মুখে যদি ব্রণ ওঠা লেগে থাকে তাহলে কালো দাগ পড়ে ও গর্ত হয়ে মুখমন্ডলের সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে যায়।

তেল-চর্বি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে ব্রনকে সাথে নিয়েই বাঁচতে হবে।

পরীক্ষা করে দেখা গেছে ভালো ফ্যাট সমৃদ্ধ তেল ছাড়া সাধারণ তেলে আছে ট্রান্স ফ্যাট যা শরীরের ওজন বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে। এইসব তেল দিয়ে তৈরী খাবার বেশি খাওয়ার ফলে স্থূলতা বাড়ে।
অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপ এর জন্য দায়ী, এটি ভালো HDL কলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে দেয় যা অধিকাংশ হার্ট রোগের জন্য দায়ী।
অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে টাইপ-২ ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আমাদের অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়।