“তালশাঁস” পানিশুন্যতা, পেটের সমস্যা দূর করে ও ত্বক উজ্জ্বল করে।

এই গরমে তাল বা ‘কচি তালশাঁস” না হলে কি হয়। সকলের প্রাণে লাগুক তালশাঁসের শীতল পরশ। অল্প কয়েক দিন স্থায়ী হয় এই ফলটি। তাই দেখামাত্র স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করুন।

শাঁস বের করে প্লেটের উপর সাজিয়ে রাখলে এর প্রত্যেকটা চোখ বা খন্ডকে এক একটা বরফের টুকরো বলে মনে হয়। গ্রামগঞ্জ হয়ে তাল এখন শহরের অলিগলিতে পাওয়া যায়।

এর ইংরেজি নাম: Asian Palmyra Palm বা Palmyra fruit বা  Palm fruit. বৈজ্ঞানিক নাম: Borassus flabellifer. এটি হচ্ছে এশিয়া ও আফ্রিকার গ্রীষ্মকালীন গাছ।
এই গাছের ফলকে Ice Apple ও বলা হয়। এরা এরিকাসি পরিবারের বরাসুস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এর আদিবাস মধ্য আফ্রিকা।

তালশাঁসের যত স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ-

পাকা তালের রস দিয়ে পিঠা খেতে অনেক মজার হলেও কচি তালও খেতে অনেক মজাদার। সাধারণত গ্রীষ্মকালে বাজারে কচি তাল দেখতে পাওয়া যায়। এর নরম কচি শাঁস শুধুই খেতেই সুস্বাদু নয়, বরং এতে থাকা অনেক পুষ্টিগুণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

এতে থাকা অনেক খাদ্যশক্তি এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান আমাদের ভীষণ উপকার করে থাকে। তালশাঁসে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আইরন ও ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক খনিজ উপাদান।

পানিশুন্যতা দূর করে:

এই গরমে কাজ করতে করতে প্রাণ হাঁসফাঁস করছে। প্রচন্ড গরমে বার বার ঘামের কারণে আমাদের শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে। সেটি দ্রুত পূরণ করতে পারে এই তালশাঁস। কচি তালশাঁসে ৯০-শতাংশের উপরে জলীয় অংশ থাকে।

দেহকে শীতল করে:

গ্রীষ্মের উপাদেয় তালশাঁস আজ যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু আমরা তাল ফলকে হারাতে চাই না। কারণ  Plam fruit বা তাল ফল একটি প্রাকৃতিক শীতলকারক। গ্রীষ্মের সময় শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে।

এটি ঘামাচি, ডিহাইড্রেশন, শুষ্ক ত্বক, কিডনিতে সমস্যা এবং চুল পড়া তাপ সম্পর্কিত একাধিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি কেবল শরীরকে হাইড্রেট করে না, অতিরিক্ত ঘামের কারণে নষ্ট হওয়া পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলি পূরণে সহায়তা করে।

হজমের সমস্যা দূর করে:

বেশ কয়েকটি পেটের অসুস্থতা এবং হজমজনিত সমস্যার জন্য palm fruit বা তাল ফল একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে এবং সাধারণ অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

এটি অ্যাসিডিটি এবং পেটের আলসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। গর্ভবতী মহিলাদের তালশাঁস খেতে বলা হয়, কারণ এটি গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব কমিয়ে দেয়।

ত্বকের সমস্যা দূর করে :

ত্বককে সুন্দর উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় করে তুলতে চান, তাহলে তালশাঁস খান। আমরা জানি তালশাঁসের জলীয় অংশে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি-সহ আইরন, ক্যালসিয়ামের মতো মিনারেল রয়েছে। এগুলো ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

ওজন কমাতে সহায়তা করে:

তালশাঁস একটি কম ক্যালোরি ফল এবং ওজন হ্রাস করার চেষ্টা করা লোকেদের পক্ষে উপকারী। ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। এটি পেট দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ রাখে। এটি ঘন ঘন খাওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধে সহায়তা করে যা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। এতে চিনির পরিমান খুব কম থাকে।

রক্তাল্পতা দূর করে :

কচি তালশাঁসের রসে প্রচুর পরিমানে আইরন থাকে। এটি রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে রক্তসল্পতা দূর করে।

অনেক রোগের হোম প্রতিকার:

তালেশাঁসে আছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, সালফার,সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মত বেশ কিছু উপকারী উপাদান। যা আমাদের চোখের জন্য অত্যান্ত উপকারী।

তাই তালের শাঁস খেলে আমাদের দৃষ্টিশক্তির অনেক উন্নতি হয়। এটি খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর এর ফলে আমরা বিভিন্ন রকম সিজিনাল অসুখ থেকে মুক্তি পাই।

দাঁত ভালো রাখে:

কচি তালের শাঁসে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি আমাদের দাঁতের জন্য অনেক ভালো । এটি আমাদের দাঁতের এনামেল ভালো রাখে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। একই সাথে তালের শাঁস আমাদের আমাদের হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে।

 ব্যথাযুক্ত মূত্রত্যাগ নিরাময়ে সাহায্য করেঃ

গরমের সময় অনেকেই ব্যথাযুক্ত মূত্রত্যাগের সমস্যাটিতে ভুগে থাকেন। ৩টি কচি  তালের রস ও ৩ কাপ ডাবের পানি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি খুব বেশি মসৃণ করার দরকার নেই, তালের শাঁসের পাতলা টুকরো যেনো থাকে।

এর সাথে তাল মিছরি মিশিয়ে নিতে পারেন মিষ্টি করার জন্য। এটি একটি চমৎকার গ্রীষ্মের ড্রিংক যা আপনাকে হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি ইনফেকশন মুক্ত হতেও সাহায্য করবে। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধেও সাহায্য করবে এই পানীয়। এটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই খাবেন না। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর যান তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্রঃ Healthbenefits times, wiki