আজ টাকার অভাব নেই, বাড়ির অভাব নেই, খাবারের অভাব নেই, তবুও মানুষ শান্তিতে নেই কেন?

আজ টাকার অভাব নেই, বাড়ির অভাব নেই, খাবারের অভাব নেই, তবুও মানুষ শান্তিতে নেই কেন? কারণ আজ ভালোবাসার অভাব, বিবেকের অভাব, শ্রদ্ধার অভাব। মানুষ কেন আজ এতো উগ্র, হিংস্র ও নিষ্ঠুর বুঝি না।

অনেক টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, প্রভাব প্রতিপত্তি থাকলেই শান্তিতে থাকা যাই বা সুখ শান্তি আসে, তা নয়। ভালোবাসা, বিবেকবোধ, শ্রদ্ধা-ভক্তি এরকম আরো অনেক মানবীয় গুণাবলীর অর্জন ও প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবার বা সমাজে সুখ শান্তি বিরাজ করে।

ভালোবাসার অভাব:

বিজ্ঞানীরা এতো কিছু আবিষ্কার করে। মাঝে মাঝে মনে হয় ভালোবাসার একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে কতই না ভালো হতো। বর্তমানে অনেকের অবস্থা এমন যে, ভালোবাসার অভাবে ভুগছি, একটা ভ্যাকসিন কে দেবে?

মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, এর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু হতে পারে না। প্রেমের বন্যায় প্লাবিত হোক চারপাশ। হিংসা ও বিদ্বেষ ভুলে সবাই ভালোবাসার জয়গানই গাইবে সারা বছর সে প্রার্থনা করি। ভালবাসার জন্য নিদিষ্ট কোন বানিজ্যিক দিন নয় আমাদের যাপিত জীবনের প্র্রতিদিনই হোক ভালবাসার।

osukhi

বিবেকের অভাব:

এখন আর পাঁচ নয়, তিন বছর বয়সেই বাবা-মা তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্বিবিদ্যালয়ের পরেও আমরা অনেকটা সময় ব্যয় করে শিক্ষা অর্জন করি। এভাবে সমাজে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

একাডেমিকভাবে শিক্ষা অর্জন করলেও কতজন বিবেক বিবেচিত শিক্ষা অর্জন করে? বর্তমান সমাজে শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই কিন্তু শিক্ষিত বিবেকের বড্ড অভাব। আমরা আমাদের শিক্ষাকে সার্টিফিকেট ও চাকরির মাঝেই সীমাবদ্ধ রেখেছি। যার ফলে সমাজে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও শিক্ষিত বিবেকের সংখ্যা অতি নগণ্য। বর্তমান সমাজে যারা দুর্নীতি করে তাদের মধ্যে শিক্ষিত লোকের সংখ্যাই বেশি।

তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো অভাব নেই কিন্তু তাদের একটাই অভাব শিক্ষিত বিবেক। দুর্নীতি দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর জেনেও তারা দুর্নীতি করে কারণ তারা তাদের শিক্ষার সঙ্গে বিবেককে কাজে লাগায় না। যার কারণে সমাজে দুর্নীতি ক্রমাগত বেড়ে চলছে। শিক্ষা আমাদের সভ্য ও মার্জিত হতে শিখায়। আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি ঠিক কিন্তু সেই শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করি না। আর বাস্তবায়ন না করার ফলে আমরা মাঝেমধ্যে অসভ্য বর্বর হয়ে উঠি এবং এমন ঘৃণ্য অপরাধ করে বসি তখন আমাদের মানুষ ভাবতেও অবাক লাগে।

মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই মানুষ হওয়া যায় না, মানুষ হতে শিক্ষিত বিবেক লাগে। আর শিক্ষিত বিবেক তৈরি হয় শিক্ষাকে জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে। কিন্তু আমরা অধিকাংশই শিক্ষাকে জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা তো দূরের কথা চিন্তাই করি না। শিক্ষাকে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখি। এটাকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বাস্তবায়নের প্রয়োজন বোধ করি না।

প্রতিটি মানুষই বিবেকসম্পন্ন। কেউ তার বিবেককে পরিচর্যার মাধ্যমে জাগ্রত রাখে, আবার কেউ তার বিবেককে অবহেলা, অবজ্ঞা এবং উদাসীনতার মাধ্যমে দাবিয়ে রাখে। বিবেককে ক্রমাগত অবহেলার মাধ্যমে বিবেকের অপমৃত্যু ঘটে এবং মানুষ অমানুষে পরিণত হয়। একজন বিবেকসম্পন্ন মানুষ পারে তার শিক্ষাকে মূল্যায়নের মাধ্যমে সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ, জিঘাংসা, পরশ্রীকাতরতা, লোভ-লালসা, অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে সমাজ, দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে।

শ্রদ্ধার ও ভয়ের অভাব:

বর্তমান সমাজে সর্বক্ষেত্রে শ্রদ্ধার খুবই অভাব। শুধু দুই একটা বিষয় আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। শিক্ষক ছাত্রকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ছাত্র শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করছে। শিক্ষককে দেখে ভয়ে পালাবে কি শিক্ষকের সামনেই সিগারেট ফুঁকছে। শিক্ষককে ফাঁদে ফেলানোর বিভিন্ন ফন্দি আটছে।

ছেলে বা মেয়ের বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভয় দিন দিন কোথায় যেনো হারিয়ে যাচ্ছে। ছেলে বাবা-মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করে বউকে নিয়ে আলাদা থাকছে। মেয়ে বাবা-মায়ের মুখে চুনকালি মাখিয়ে ধর্মান্তরিত হচ্ছে।