চুল পড়া রোধে কলার জাদুকরী ব্যবহার।

হাজার হাজার বছর ধরে রূপচর্চা বা সৌন্দর্য চর্চায় যে সকল জিনিস ব্যবহার হয়ে আসছে তার মধ্যে কলা অন্যতম। নারী কিংবা পুরুষ, উভয়ের সৌন্দর্য বাড়াতে চুলের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু নিত্যদিনের ব্যস্ততার কারণে ঠিকভাবে চুলের যত্ন নেয়ার সময়ই হয় না।

অতিরিক্ত রোদে ঘুরে বেড়ানো, ময়লা ও দূষণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি আমাদের মূল্যবান চুলকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে চুল রুক্ষ-শুষ্ক হচ্ছে, এমনকি চুল পড়ার প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে।

তবে হতাশ বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে অল্প সময়ের জন্য হলেও ঘরে বসে নিয়মিত চুলের যত্ন নিন, তবেই না চুল পড়া কমবে। আপনি যদি ঘন-কালো ও মসৃণ চুল চান এবং চুল পড়া রোধ করতে চান, তবে কলাকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিন।

কলার মধ্যে থাকা ফলিক অ্যাসিড চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি চুলে আর্দ্রতা প্রদান করে। যার ফলে চুল শুষ্ক হয়ে যায় না। কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম চুলকে প্রাকৃতিক ভাবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে।

কলা দিয়ে চুলের পরিচর্যার জন্য অনেকগুলো প্যাক রয়েছে জেনে নিন সেগুলো-

কলা, পেঁপে ও মধু:

কলা, পেঁপে ও মধুর মিশ্রণ চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের গভীর থেকে পুষ্টি জোগায়। পেঁপে চুলকে শক্তিশালী করে গোড়া থেকে। পেঁপেতে থাকা ফলিক অ্যাসিড চুল পড়া রোধ করে। দুটি পাকা কলা, অর্ধেক পাকা পেঁপে পিষে নিন এবং তাতে দুই টেবিল চামচ মধু মেশান। এবার ভালো করে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর মাথার ত্বক ও চুলে ভালো করে লাগান। শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন এবং রেখে দিন ৩০ মিনিট। এবার শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এক থেকে দুবার এটি করলে প্রত্যাশিত ফল পাবেন।

পাকা কলা ও এভোক্যাডো:

নরম চুল পেতে গেলে একটি পাকা কলার সাথে এভোক্যাডো নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটিতে নারকেলের দুধ যোগ করুন। এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর হারবাল কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল অনেক নরম ও সুন্দর হবে।

কলা ও মধু:

খুশকি রোধে কলা ও মধু খুবই কার্যকর। এতে থাকা উপাদান মাথার ত্বককে আর্দ্র করে। সেক্ষেত্রে, দুটি পাকা কলা থেঁতলে তাতে দুই চা চামচ মধু মেশান। ভালো করে পেস্ট তৈরি করুন। এবার সেই পেস্ট ত্বক ও চুলে লাগান। ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে দিন। পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

কলা ও বাদাম তেল:

একটি কলা এবং তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা বাদাম তেল নিয়ে মিক্সারে ভালো করে পিষে নিন। এবার এই মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন “এ” এবং “সি” চুলকে আর্দ্রতা প্রদান করে নরম এবং উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করবে।

কলা ও দই :

মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যে দই খুবই কার্যকর, সেইসঙ্গে রুক্ষ হওয়া থেকে চুলকে রক্ষা করে। এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সহায়ক। একটি পাকা কলা থেঁতলে তাতে আধা কাপ দই মেশান। ভালো করে পেস্ট করুন। এবার মাথার ত্বকে ওই পেস্ট লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। পরে শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে দুবার এটি করুন, তারপর দেখুন চমক।

কলা, জলপাই তেল ও নারকেল তেল:

কলা, অলিভ অয়েল ও নারকেল তেলের মিশ্রণ চুলের স্বাস্থ্যে খুবই উপকারী। এতে থাকা উপাদান চুলের গভীরে প্রোটিন পৌঁছে দেয় এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। দুটি পাকা কলা, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও এক টেবিল চামচ নারকেল তেল নিন। এবার মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর এরসঙ্গে জুড়ে দিন এক টেবিল চামচ মধু। ভালো করে পেস্ট তৈরি করুন এবং এটি মাথার ত্বক ও চুলে লাগান। রেখে দিন ৫ থেকে ১০ মিনিট। পরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।

কলা, অলিভ অয়েল ও ডিম:

সুন্দর চকচকে চুল পেতে কারই না ভালো লাগে। তাই চকচকে চুল পেতে গেলে একটি কলার খোসা , অলিভ অয়েল এবং ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবং এই মিশ্রণটি আপনার চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তা দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।

কলা ও অ্যালোভেরা জেল:

অ্যালোভেরার জেলে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন “সি” ও “ই” এবং এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মাথার ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যে খুবই উপকারী। একটি পাকা কলা ও এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরার জেল পাত্রে ঢালুন। কলা থেঁতলে নিন এবং অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে ভালো করে মেশান। পরে মিশ্রণটি মাথার ত্বক ও চুলে লাগান। শাওয়ার ক্যাপ পরে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এবার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন চুল। শ্যাম্পুও করতে পারেন। দেখবেন, চুল পড়া কমবে।

তবে এগুলো ব্যবহার করার পর অবশ্যই মনে রাখবেন, চুল ধোয়ার পরে যাতে চুলে কোনরকম কলার টুকরো বা অংশ আটকে না থাকে। এতে চুল চ্যাটচ্যাটে ধরনের হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এগুলি চুলে খুব বেশি শুকোতে দেবেন না। কিছুক্ষণ লাগিয়ে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন। না হলে এগুলি চুলে আটকে থাকতে পারে এবং চুলকে রুক্ষ করে তুলতে পারে।