হার্টের জন্য কোন কোন খাবার গুলো ভালো।
যদি আমাদের দেহ একটি যন্ত্র হয়, তাহলে সেই যন্ত্রের প্রধান অংশ হলো হার্ট। আর হার্ট ভালো রাখার এবং যত্ন নেওয়ার দায়িত্বও আমাদের। কিন্তু সেটা আর পারি কোথায়।
এই ফাস্ট ফুডের দুনিয়াই নিজেকে সামলিয়ে রাখাই কষ্ট। শুধু যে ফাস্ট ফুডের তেল আমাদের হার্টের জন্য ক্ষতিকর তা কিন্তু নয় ফাস্ট ফুডে থাকা অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও মসলা আমাদের জন্য ক্ষতিকারক।
অনেক সময় আমাদের ঘরে তৈরি খাবারেও বেশি তেল ব্যাবহার করে থাকি। আমাদের একটি ভুল ধারণা আছে যে, বেশি তেলের রান্নায় বেশি স্বাদ হয়। সেই ধারণা থেকে আমরা একটু বেশি তেল খেয়ে ফেলি।
বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ হার্টের রোগের কারণে মারা যাচ্ছে। আমরা একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মধ্যে দিয়ে আমাদের হার্ট ভালো রাখতে পারি।
সেই ডায়েটে অবশ্যই বাদাম, মাছ, আস্ত শস্য, জলপাই তেল, ডার্ক চকোলেট, শাকসবজি এবং ফলমূল থাকতে হবে।
স্বাস্থ্যকর ডায়েট, হার্টের রোগের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়। হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –
এগুলির মধ্যে ডায়েটরি নাইট্রেটের পরিমাণও বেশি, যা রক্তচাপ কমাতে, ধমনী শক্ত হওয়া এবং রক্তনালীর আস্তরণের কোষগুলির কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে।
আটটি গবেষণার একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, সবুজ শাক সবজি গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সাথে হার্টের অসুখ ১৬% কমে গেছে।
এর ফলে ধমনীর গায়ে জমে থাকা চর্বি দূর হয় এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাই। ফলে হার্ট ভালো থাকে।
কার্ডিভাস্কুলার disease অর্থাৎ হার্ট attack এবং স্ট্রোক বর্তমান পৃথিবীতে সবথেকে মরণঘাতী রোগ হিসাবে দেখা দিয়েছে। এই দুটো রোগেই বেশিরভাগ মানুষ মারা যাচ্ছে।
মধ্যবয়স্ক কিছু ব্যাক্তির উপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে, যাদের রক্তে লাইকোপিন এবং বিটা-ক্যারোটিন এর পরিমান কম তাদের স্ট্রোক এবং হার্ট-এর রোগের ঝুঁকি বেশি। বিটা-ক্যারোটিন ও লাইকোপিন দুটোই টমেটোতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, আপেলের খোসার মধ্যে যে ফেনলিক উপাদান রয়েছে, যা রক্তনালীর থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্টে রক্ত চলাচলা স্বাভাবিক থাকে।
এছাড়া আপেলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস শতকরা ২০ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ডায়েটে আস্ত শস্য অন্তর্ভুক্ত করা মানে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখা। ৪৫ টি গবেষণার একটি বিশ্লেষণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, যারা প্রতিদিন আস্ত শস্য খেয়েছিল তাদের মধ্যে হার্টের রোগের ঝুঁকি ২২% কম ছিল।
গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রচুর পরিমাণে বেরি খেলে হার্টের রোগের বেশ কয়েকটি ঝুঁকি কমতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, বিপাক সিনড্রোমযুক্ত(metabolic syndrome) ২৭ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, আট সপ্তাহ ধরে হিমায়িত-শুকনো স্ট্রবেরি দিয়ে তৈরি পানীয় পান করার ফলে খারাপ কোলেস্টেরল(LDL) ১১% কমে গেছে।
বিপাক সিনড্রোম হল হৃদরোগের ঝুঁকির সাথে জড়িত শর্তগুলির একটি ক্লাস্টার।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্লুবেরি প্রতিদিন খেলে রক্তনালীগুলির সাথে সীমাবদ্ধ কোষগুলির কার্যকারিতা উন্নত হয় যা রক্তচাপ এবং রক্ত জমাট বাঁধা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
গবেষকদের মতে, ডায়েটে যদি নিয়মিত লাল মরিচ থাকে, তাহলে তা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হার্টের অসুখ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ১৩% পর্যন্ত কমে যায়।
৩২৪ জনের একটি সমীক্ষায়, আট সপ্তাহের জন্য সপ্তাহে তিন বার সালমন খাওয়ার ফলে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, দীর্ঘমেয়াদে মাছ খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল, রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড, রক্তে শর্করার এবং সিস্টোলিক রক্তচাপ কম ছিল।
যারা সামুদ্রিক মাছ খান না তারা মাছের তেল খেতে পারেন। কারণ মাছের তেলে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
মাছের তেল রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করতে, ধমনী কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং রক্তচাপ কমাতে পারে।
একটি পর্যালোচনা অনুসারে, আখরোট খারাপ কোলেস্টেরলকে (LDL) ১৬% কমাতে পারে। ডায়াস্টোলিক রক্তচাপকে ২-৩ mmHg করে কমিয়ে দেয়।
কিছু গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, নিয়মিত আখরোট খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে।
গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, আমন্ড খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রায়ও শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারে। উচ্চ কোলেস্টেরল আছে এমন ৪৮ জনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১.৫ আউন্স (৪৩ গ্রাম) আমন্ড খাওয়ার ফলে পেটের মেদ এবং খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমে গেছে। পেটের মেদ এবং খারাপ কোলেস্টেরল দুটোই হার্টের রোগের কারণ।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৪ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ৬০০-১১,৫০০ মিলিগ্রাম রসুনের রস খাওয়া হয় তাহলে কার্যকরী ভাবে রক্তচাপ কমাবে। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, রসুন রক্তে প্লেটলেট তৈরিতে বাধা দিতে পারে, যা রক্ত জমাট বাঁধা এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
হার্টের ঝুঁকিপূর্ণ ৭,২১৬ প্রাপ্তবয়স্কদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা সবচেয়ে বেশি অলিভ অয়েল গ্রহণ করেছে তাদের হার্টের রোগের ঝুঁকি ৩৫% কমে গেছে। অলিভ অয়েল বেশি পরিমাণে খেলে হার্টের রোগের(হৃদরোগের) কারণে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ৪৮% কমে যাবে।
হার্টকে ভালো রাখতে হলে খাবারে তেলের পরিমাণ কমিয়ে দিন। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন “ই” সমৃদ্ধ সূর্যমুখী তেল গ্রহণ করলে আপনার ত্বক সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে সুরক্ষিত হবে। হাঁপানি, আর্থ্রাইটিস এর তীব্রতা হ্রাস করতেও সূর্যমুখী তেল বিশেষ ভূমিকা রাখে।
উপরোক্ত খাবারগুলোর সাথে সাথে নিয়মিত:
- ব্যায়াম করতে হবে।
- ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে।
- ওজন কমাতে হবে।
- সময়মতো ঘুমাতে হবে।
- কম চর্বি যুক্ত খাবার খান।
- সামাজিক যোগাযোগ বাড়ান।
- গান শুনুন এবং হাসি খুশি থাকুন।
হার্টের সমস্যা শুধু বয়স্ক, মোটা মানুষদের হতে পারে এমনটা ভুল ধারণা। এই সমস্যা যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে।