সর্দি-কাশি ও জ্বর নিরাময়ে ঘরোয়া চিকিৎসা বা প্রাকৃতিক উপায়।

হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য সর্দি, কাশি, জ্বর হয়ে থাকে। হুটহাট জ্বর চলে আসা এই সময়ে অস্বাভাবিক নয়। বাতাসে ঋতু বদলের ঘ্রাণ।

প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের শরীর দ্রুত মানিয়ে নিতে না পারলে একটু-আধটু অসুখ দেখা দিতেই পারে।

একটু সর্দি-কাশি ও জ্বর হয়েছে তাড়াতাড়ি একটা ঔষধ খেয়ে থাকি। কিন্তু সামান্য সর্দি-কাশি ও জ্বরে ঔষধ কেন, আমরা কেন প্রাকৃতিক উপায় গুলো খুঁজি না।

অনেকের সর্দি-কাশি ও জ্বর সারা বছর ধরে লেগেই থাকে। এই জ্বর, সর্দি, কাশির চিকিৎসায় বেশ কিছু প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় রয়েছে।

নিচে এমন কিছু উপাদান দেওয়া হলো যেগুলো সর্দি-কাশি ও জ্বর থেকে আমাদের সুস্থ্য করে তুলবে –

আদা:

Ginger
মসলার মধ্যে অন্যতম ভেষজ গুন সম্পন্ন মসলা হলো আদা। এর স্বাস্থ্যগত সুবিধার জন্য বহু শতাব্দী ধরে ধরে আসছে।

কয়েক টুকরো আদা ১ কাপ পানির সাথে জ্বাল দিয়ে নিন। এই পানি পান করুন দেখবেন কাশিগলা ব্যথা কমে গেছে।

গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, আদা বমি বমি ভাব বন্ধ করতে পারে।

মধু:

rawhoney ayurved

মধুতে বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ রয়েছে। লেবুর সাথে চায়ে মধু পান করলে গলা ব্যথা কমে যায়। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে মধুও কার্যকর কাশি দমনকারী হিসাবে।

একটি গবেষণায় গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে শিশুদের শোবার সময় ১০ গ্রাম মধু দেওয়া তাদের কাশিজনিত লক্ষণের তীব্রতা হ্রাস করে।

তবে ১ বছরের কম বয়সী শিশুকে কখনও মধু দেওয়া উচিত নয়।

রসুন:

Garlic
রসুনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং সর্দি এবং জ্বর সহজে আপনাকে কাবু করতে পারবে না।

১২-সপ্তাহের একটি বড় সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন রসুন গ্রহণ করলে সর্দি-সংক্রমণের সংখ্যা ৬৩% হ্রাস পায়।

চিকেন স্যুপ:

চিকেন স্যুপ একটি নিরাময়যোগ্য নাও হতে পারে, তবে অসুস্থ্যতার সময় এটি দুর্দান্ত পছন্দ।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, সবজি দিয়ে এক বাটি চিকেন স্যুপ দেহে নিউট্রোফিলের গতি বৃদ্ধি করে দিতে পারে।

নিউট্রোফিল একটি সাধারণ ধরণের শ্বেত রক্ত কোষ। এটি শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে চিকেন স্যুপ বিশেষত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণগুলি হ্রাস করার জন্য কার্যকর ছিল।

ভিটামিন “সি”:

Lemon
ভিটামিন “সি” আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লেবু, কমলা, আঙুর এবং অন্যান্য ফল এবং শাক সবজি ভিটামিন “সি” এর একটি ভাল উৎস, মধুর সাথে গরম চায়ে তাজা লেবুর রস খেলে কফ কমে যায়।

পেঁয়াজ:

Onion
ঠান্ডা লাগার ফলে গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি, অ্যালার্জি বা সামান্য গা ব্যথায় দারুণ কাজ করে।

সামান্য পেঁয়াজের রসের সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে খান। উপকার পাবেন।

তুলসী পাতা:

tulsi ayurbedic
তুলসী পাতা কাশি সারাতে চমৎকার কাজ করে। কাশি হলে তুলসী পাতা, আদা ও মধুর একসঙ্গে মিশিয়ে খান৷ দ্রুত আরাম পাবেন।

এছাড়া তুলসী চা খেতে পারেন। তুলসী চা বাজার থেকে কিনতে পারেন বা নিজেরা ঘরে তৈরি করতে পারেন।

ঘরে তৈরি করতে গেলে এক্ষেত্রে আদা কুচি, এলাচ গুঁড়ি এবং পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর সামান্য মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিন। কাশি কমাতে সাহায্য করবে।

দারুচিনি:

Herbal Cinnamon Tea
দারুচিনিতে অ্যান্টি–মাইক্রবিয়াল আর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটোরি গুন রয়েছে। তাই এটি আমাদের সর্দি কাশি থেকে সুরক্ষা করে। দারুচিনি আর লবঙ্গ একসাথে পানিতে দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ফোটান তারপর ছেঁকে পান করুন।

লবঙ্গ:

clove
সর্দি,কাশিতে লবঙ্গ বা লবঙ্গ চা খেলে খেলে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়া যদি এমন হয় যে কাশি শুরু হয়ে ছে আর থামছে না তাহলে মুখের ভিতরে লবঙ্গ নিয়ে আস্তে আস্তে চিবাতে থাকুন। আরাম পাবেন।

হলুদ:

turmeric
হলুদের লাইপোপলিস্যাকারাইড দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল ঠান্ডা, সর্দি, কাশি হওয়ার প্রবণতাকে কমায়।

সর্দি-কাশি কমাতে হলুদের রস বা এক টুকরো কাঁচা হলুদের সাথে মধু মাখিয়ে তা মুখের মধ্যে রেখে আস্তে আস্তে খেতে পারেন।

যদি সর্দি-কাশি ও জ্বর ২ সপ্তাহের বেশি হয়ে যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তবে বাচ্চাদের, বয়স্কদের ও গর্ভবতী মহিলাদের যদি সর্দি-কাশি ও জ্বর হয়ে থাকে তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

রেফারেন্স: