সরকার কেন চাইলেই বেশি বেশি টাকা ছাপাতে পারে না?
টাকা ছাড়া জীবন অচল। সারা দুনিয়ার মানুষ টাকার পিছনেই ছুটে চলে। আমাদের মনে হতে পারে সরকার কেন টাকা ছাপিয়ে দেশের মানুষের হাতে দিচ্ছে না। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেন সচল করছে না। দেশের বড় বড় প্রজেক্টের জন্য টাকা নিজেরাই কেন তৈরি করে না।
কিন্তু ইচ্ছা হলেই এত টাকা তৈরি করা কি সম্ভব? আর এই টাকা দিয়ে দেশের দারিদ্র্য কি দূর করা যাবে?
টাকা মূল্যবান সম্পদ। এই টাকা ছাড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম অচল হয়ে যাবে। টাকা ছাড়া পুরো বিশ্ব থমকে যাবে। প্রতিটি দেশে খুব নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রয়োজন মত টাকা ছাপিয়ে থাকে।
কিন্তু টাকা যদি অতিরিক্ত ছাপানো হয় তাহলে সুফলের থেকে কুফলই বেশি হবে। তাই টাকা ছাপানোর দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা হলেই অতিরিক্ত টাকা ছাপাতে পারে না। কোনো একটি দেশের টাকা ছাপানোর দায়িত্বে থাকে সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে টাকা ছাপিয়ে থাকে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা প্রিন্ট করে। এর মধ্যে রয়েছে দেশের মোট সম্পদের পরিমাণ, চাহিদা, জনগণের উপার্জন ইত্যাদি।
একটি উদাহরণের সাহায্যে দেখা যাক:-
মনে করুন, কোনো একটি দেশের সম্পদ বলতে আছে দশটা আম। সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে ২০ টাকা প্রিন্ট করে। ধরেই নেওয়া যাক প্রতিটি আমের মূল্য ২ টাকা। তাহলে দেশের মোট সম্পদ এবং মোট কারেন্সী ভারসাম্যপূর্ণ আছে। দেশটি পরের বছর মোট ৪০ টাকা প্রিন্ট করল, কিন্তু দেশের মোট সম্পদ দশটি আমই রইল।
যেহেতু দেশেটির কোনো নতুন সম্পদ নেই, তাই ৪০ টাকা বরাদ্দ হল ১০টি আম কেনার জন্য। অর্থাৎ প্রতিটি আমের দাম হলো দ্বিগুণ। এভাবে অতিরিক্ত টাকা ছাপালে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। আর একে মূদ্রাস্ফীতি বলে।
দ্রব্যমূল্য যদি বেড়েই যায় তাহলে বেশি টাকা ছাপিয়ে কি লাভ হল? তাই কোনো একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গবেষণা করে চাহিদা নির্ধারণ করে আর সেই অনুযায়ী টাকা ছাপাতে হয়। একটি দেশে সাধারণত জিডিপির ২-৩ শতাংশ টাকা ছাপানো হয়। তবে উন্নয়নশীল দেশে এর হার কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
ছাপা হওয়া অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যে দেশের ঋণই শোধ করেন, যে দেশেই তা খরচ হয়ে থাকে, তা আবার নিজের দেশেই ফেরত আসে। কারণ আমাদের দেশের টাকা আমাদের দেশের মানুষই গ্রহণ করছে, অন্য কোনো দেশে তো এই টাকা দিয়ে কিছুই করতে পারছেন না।
সুতরাং ঘুরেফিরে বাড়তি টাকা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। আর এই টাকা আমরা বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে ব্যবহার করতে পারিনা কারণ ঋণের চুক্তিতে নির্দিষ্ট কারেন্সীতে শোধ করতে হয়।
অর্থনীতির উন্নয়ন করতে অনেক বেশি টাকা তৈরি করাটা সমাধান নয়, উৎপাদন বৃদ্ধি করাই হল সমাধান।