রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার।
পুদিনা প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি পাতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই খাদ্য হিসেবে পুদিনা আপাতত অবহেলিত হলেও ওষুধ হিসেবে অবহেলিত নয় মোটেও। শুধু খাবার আর ওষুধ হিসেবে নয়, রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও পুদিনার রয়েছে যথেষ্ট অবদান। পুদিনা পাতা ত্বকের বিভিন্ন অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে ত্বক।
আসুন এবার জেনে নিন, রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে-
ত্বক উজ্জ্বল করে:
পুদিনা পাতা ভিটামিন “এ”, “সি” এবং “বি” সমৃদ্ধ যা ত্বকের যত্নে অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও এই পাতায় মেলে লৌহ, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বককে নরম ও কোমল রাখতে সাহায্য করে।
তাই এই প্যাকটি বানানোর জন্য আপনার লাগছে দুই টেবিল চামচ চটকানো কলা ও ১০-১২টি পুদিনা পাতা। প্রথমে কলা ও পুদিনা পাতা পিষে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন।
ব্রণ দূর করে:
পুদিনা পাতায় প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়ানাশক গুণ থাকার কারণে ত্বকের ব্রণের সমস্যা সারাতে পুদিনা পাতার জুড়ি নেই। এই পাতার উচ্চমাত্রায় “স্যালিসাইলিক অ্যাসিড” থাকে যা ব্রণ দূর করে। ত্বক পরিষ্কার করতেও এটি বেশ কার্যকর। ১০-১২টি পুদিনা পাতা ছেঁচে এতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। তারপর ব্রণ, ব্রণ আক্রান্ত স্থান, ব্রণের দাগের ওপর লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে তা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এটা ব্যবহার করুন। পুদিনার স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ও লেবুর রসের ব্লিচিং উপাদান ব্রণের দাগ দূর করে। এবং লেবুতে ভিটামিন “সি” থাকায় তা ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের মৃতকোষ দূর করে:
ত্বকের মৃতকোষ দূর করতে এবং কড়া পড়া অংশ স্বাভাবিক করতেও পুদিনা পাতা ভালো কাজ দেয়। সেক্ষেত্রে, এক টেবিল চামচ ওটস, ১০-১২টি পুদিনা পাতা, এক টেবিল চামচ মধু, দুই টেবিল চামচ দুধ ও আধা ইঞ্চি শসার টুকরা লাগবে। প্রথমে পুদিনা পাতার সঙ্গে শসা কুচি ছেঁচে নিন। এরপর বাকি সব উপাদান একসঙ্গে মেশান।
মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৭ মিনিট অপেক্ষা করে গোলাকারভাবে হালকা চাপে স্ক্রাব বা ঘষে নিন। এবং দু’তিন মিনিট স্ক্রাব করার পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এতে মৃতকোষ দূর হবে ও লোমকূপ পরিষ্কার হবে। ফলে ত্বক হবে মসৃণ, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে:
তেল নিয়ন্ত্রণের জন্য মুলতানি মাটি ও পুদিনা পাতা সবচেয়ে ভালো একটি উপাদান। এছাড়া এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। তাই এই প্যাকটি তৈরি করতে এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, ১০-১২টি পুদিনা-পাতা, আধা টেবিল চামচ মধু ও আধা টেবিল চামচ টক দই লাগবে।
প্রথমে পুদিনা পাতা বেটে তাতে মুলতানি মাটি, মধু ও দই মেশান। ঘন মিশ্রণ হওয়া পর্যন্ত মেশাতে থাকুন। তারপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার এটা ব্যবহার করুন।
ত্বকের শুষ্কতা দূর করে:
ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে, ত্বক মসৃণ, আর্দ্র ও কোমল রাখতে পুদিনা পাতার এই ফেইসপ্যাকটি বেশ কার্যকর। সেক্ষেত্রে, দুই টেবিল চামচ টক দই, এক টেবিল চামচ মূলতানি মাটি ও ১০-১২টি পুদিনা পাতা নিন। তারপর পুদিনা পাতা ভালো করে বেটে তাতে দই ও মুলতানি মাটি যোগ করুন।
ঘন পেস্ট হওয়া পর্যন্ত মেশান। এরপর প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার এটি ব্যবহার করুন। উল্লেখ্য যে, দই ত্বক আর্দ্র রাখে এবং খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ মুলতানি মাটি ত্বকের গঠন সুন্দর রাখে।
মনে রাখবেন, যেকোনো রূপচর্চাই ধৈর্য ধরে বহুদিন না করলে আপনি তার সঠিক ফল ভোগ করতে পারবেন না।