রূপচর্চায় গাজরের ব্যবহার।

পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ গাজর। গাজর দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি গাজরে আছে নানা ধরণের উপকারিতা। গাজর খেতে পছন্দ করে না এমন লোক খুব কমই আছে। গাজরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন “এ” রয়েছে।

গাজরের মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণে সেরা গাজর রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও কম যায় না। গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলস আছে যা ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে। এছাড়া ত্বকের রুক্ষতা ও বয়সের ছাপ দূর করতেও এটি উপকারী।

চোখ আর দাঁতের মতো ত্বক ও চুলের জন্য বেশ উপকারী এটি। গাজর হতে পারে আপনার সুন্দর আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক ও চুলের গোপন রহস্য। ত্বক আর চুলের সব সমস্যা এই এক গাজর ব্যবহারেই সমাধান করতে পারবেন। মনে রাখবেন, ভিটামিন “এ” ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য খুবই দরকার আর তা আপনি গাজর থেকে অল্পতেই পেতে পারেন। প্রতিদিন একটি করে কাঁচা গাজর খেলে আপনার শরীরে ভিটামিন “এ” এর অভাব হবে। এতে চোখ, ত্বক-উভয়ের জন্যই উপকার।

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, গাজর কিভাবে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্যকে আরও দ্বিগুন বাড়িয়ে দিতে পারে-

উজ্জ্বল ত্বক পেতে:

এক টেবিল চামচ গাজর বাটা, এক চা চামচ বেসন, এক চা চামচ গোলাপজল ও এক চা চামচ শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি উজ্জ্বল ত্বক পেতে চান তাহলে টানা ১৫ দিন এই প্যাক মুখে ব্যবহার করুন। নিজেই নিজের ত্বকের পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।

বলিরেখা দূর করতে:

এক টেবিল চামচ গাজর বাটা, এক টেবিল চামচ দুধ, এক চা চামচ চালের গুঁড়ো, এক চিমটি হলুদের গুঁড়ো ও এক চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এক মাস টানা এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বকের বলিরেখা সহজেই দূর হয়ে যাবে।

ব্রণ দূর করতে:

এক টেবিল চামচ গাজর বাটা, এক চা চামচ লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এক মাসে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুবার এই প্যাক মুখে ব্যবহার করলে ব্রণ দূর হবে।

মুখের ফোলা ভাব কমাতে:

এক টেবিল চামচ গাজর বাটা, এক চা চামচ বিটরুট বাটা, এক চা চামচ আলু বাটা ও এক টেবিল চামচ টকদই একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ঘুম থেকে ওঠার পর মুখের ফোলা ভাব অনেকটা কমিয়ে দেবে।

তেলতেলে ভাব দূর করতে:

গাজরে থাকা ভিটামিন “এ” ত্বকের অতিরিক্ত তেল বের করে দেয় এবং ত্বককে সতেজ ও বিষাক্ত মুক্ত রাখে। তিন চামচ গাজরের রস, ছোলার ময়দা, লেবুর রস ও এক চামচ দই একসঙ্গে মিশিয়ে আধা ঘন্টা মুখে এবং ঘাড়ে লাগান এবং হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করবে সহজেই।

মসৃণ ও ফর্সা ত্বক পেতে:

এক টেবিল চামচ গাজর বাটা, এক চা চামচ ওটস ও এক টেবিল চামচ আপেল বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। এরপর ১০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক প্রাকৃতিক উপায়ে মসৃণ, ফর্সা ও উজ্জ্বল হবে।

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে:

জিন, হরমোন ও পরিবেশগত এই তিন কারণে মূলত ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে। তাই শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের জন্য গাজর একটি আদর্শ রূপচর্চার উপাদান। এক টেবিল চামচ গাজর বাটা, এক চা চামচ মিল্ক ক্রিম, মধু ও ডিমের সাদা অংশ একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করবে।

অ্যান্টি–এজিং মাস্ক হিসাবে:

গাজর অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে ভিটামিন “সি” যা কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে ত্বকের বয়সের গতির লাগাম টানে। ভিটামিন “সি” অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের মতো কাজ করে ফ্রি র‍্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ফ্রি র‍্যাডিকেলই ত্বকের সুক্ষ্মরেখা ও বলিরেখার জন্য দায়ী।

তাই এথেকে রক্ষা পেতে লাগবে শুধু একটা ছোট সাইজের গাজরের পেস্ট আর এক টেবিল চামচ জলপাই বা নারিকেল বা আমন্ডের তেল। একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। তার আগে ত্বকটি ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে ভুলবেন না। মাস্কটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

সানট্যানে দূর করতে:

গাজরে থাকা বিটা ক্যারোটিন এবং ক্যারোটিনয়েড ত্বকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। সমপরিমানে গাজরের রসের সঙ্গে গোলাপ জল সমান অংশে মিশিয়ে মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে করে মুখে স্প্রে করুন।

চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে:

ত্বকের মতো চুলের সমস্যা সমাধানে গাজর বেশ কার্যকর। এতে থাকা ভিটামিন আর খনিজ উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে। আর গাজরের ভিটামিন “এ” এবং ভিটামিন “ই” মাথার তালুর রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। এজন্য চুলে লাগাতে পারেন গাজরের তেল। যা বানানো খুবই সহজ।

দুটি ছোট সাইজের গাজর গ্রেটার দিয়ে কুচি করে কেটে দেড় কাপ জলপাই তেলের সঙ্গে মিশিয়ে এক সপ্তাহ ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় রেখে দিলেই হবে। এই কয়দিনে তেলের রঙ হবে গাজরের মতোই উজ্জ্বল কমলা। ছেঁকে নিয়ে পরিষ্কার পাত্রে আলাদা করে রেখে অনেক দিন ব্যবহার করতে পারবেন এই তেল।

এছাড়া মাথার তালুতে গোসলের আধা ঘণ্টা আগে গাজরের রস লাগাতে পারেন। এতে চুল হবে সুন্দর ও ঝলমলে।