রুটি বনাম ভাত। কেন রুটি খাওয়া ভাতের থেকে ভালো?
বেঁচে থাকার জন্য আমরা খাবার খেয়ে থাকি। আমাদের প্রধান খাবার ভাত। ভাত আমাদের প্রধান খাবার হলেও রুটি আমাদের পরবর্তী প্রধান খাবার বলা যাই। কারণ রুটিও আমরা কম খাই না। আমাদের বাংলাদেশিদের খাবারে বা ডায়েটে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে।
বাংলাদেশী ডায়েটে মূলত মাছের ঝোল, সবজি, চাটনি এবং আরও অনেকগুলি খাবারের সাথে ভাত। তবে ভাতের চেয়ে ডায়েটের প্রধান অংশ হিসাবে রুটি যুক্ত করা একাধিক কারণে বেশি স্বাস্থ্যকর।
ভাত ও রুটি দুটোই স্বাস্থ্যকর। পুষ্টিগুণের দিক থেকে খুব বেশি পার্থক্য নেই। গম হলো Whole Grain বা পুরো শস্য। ফাইবার বেশি। গমের বাইরের আবরণসহ ভাঙ্গানো আটা অর্থাৎ তুষযুক্ত আটা হলে ঠিক আছে। কিন্তু রিফাইনড সাদা আটায় ফাইবার কম। চালের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো খারাপ। চাল পালিশ করে এতটাই চকচকে বানিয়ে ফেলেছি ফাইবার খুঁজে পাওয়া দুস্কর। কম refine করা বা ঢেঁকি ছাটা চালে ফাইবার থাকে। হয়তো আটার থেকে কম।
যদি আপনার লক্ষ্য হয় চর্বি কমানো এবং পাতলা হওয়া – আপনার জন্য রুটি বনাম সাদা ভাত। তাহলে রুটি সম্ভবত সেরা পছন্দ। এটি অবশ্যই যদি আপনি একই ক্যালোরির সমীকরণ করেন।রুটিতে আপনার প্রোটিন এবং ফাইবার সামগ্রীর কারণে সাদা ভাতের চেয়ে বেশি সময়ের জন্য আপনাকে পূর্ণ করে তুলবে।
রুটির সাথে আপনার কি প্রেম? এটা খারাপ কিছু নয়। রুটি অনেক মানুষের আহারের প্রধান উপাদান। রুটিতে প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার বেশি থাকে ভাতের তুলনায়। রুটিতে কার্বোহাইড্রেট কম ভাতের তুলনায়।
শরীরের ওজন হ্রাসে অনেকে খাবারের ডায়েটারি কার্বোহাইড্রেট ত্যাগ করার কথা বলেন। কিন্তু ভাত ও রুটি আমাদের খাবার তালিকায় এমনভাবে মিশে আছে যে তা বাদ দেওয়া কঠিন। তবে একটি প্রশ্ন দেখা দেয়, শরীরকে ফিট রাখতে দুই খাবার আইটেমের ভেতর কোনটি বেশি উপযোগী।
কেন রুটি খাওয়া ভাতের থেকে ভালো:
ওজন হ্রাস:
রুটি ভাতের চেয়ে কম পরিমাণে ক্যালোরি বহন করে এবং তাই দীর্ঘ প্রক্রিয়াতে ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা যায় যে, যেসব লোকেরা ভাতের চেয়ে বেশি রুটি বেছে নিয়েছে তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ওজন হ্রাস করেছে। এটি প্রমাণিতও হয়েছে যে, এটি তাদের হৃদরোগ, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট স্টোরেজ, ডায়াবেটিস এবং আরও অনেক কিছুতে ঝুঁকি হ্রাস করেছে।
ফাইবার:
সাধারণতঃ রুটি আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি হয়। আটা বা ময়দা আমরা কোথা থেকে পাই? গম থেকে। এটি একটি পুরো শস্য বা Whole grain . আমরা জানি, পুরো শস্য উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং এতে ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে। হজমের জন্য ফাইবার স্বাস্থ্যকর, হৃদরোগ সীমাবদ্ধ করে এবং ওজন রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে। এটি পরামর্শ দেওয়া হয় যে মহিলারা প্রায় ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের প্রায় ৩৮ গ্রাম ফাইবার দৈনিক গ্রহণ করা উচিত।
Lighter ইন নেচার:
ভাতের বিপরীতে রুটি হালকা প্রকৃতির এবং খাওয়ার পরে ভারী অনুভূত হয় না। ক্লান্তি কম লাগে। যখন ভাত খাওয়া হয়, তার স্টার্চ সামগ্রীর কারণে খাওয়ার পরে ঘুমের অনুভূতি দেখা দেয়। রুটিগুলি স্টার্চ এবং ফ্যাট কম থাকে। তাই হালকা এবং আরও প্রসারণযোগ্য।
A Large Variety বা বৈচিত্রতা:
রুটির অনেক রূপ। রুটি স্বাদ, রান্না, প্রস্তুতি পদ্ধতি(পাউরুটি, নানরুটি, মোগলাই, তন্দুরি, পরাঠা, লুচি, ক্রিম বন, fry বন ইত্যাদি) অনুসারে আরও অনেকভাবে পরিবেশন করা যায়। প্রকার, স্বাদ, রান্নার দিক থেকে গমের বা রুটির অনেক বৈচিত্রতা। ভাতেরও বিভিন্ন রূপ রয়েছে তবে রুটি এদিক থেকে এগিয়ে।
দারুন স্বাদ:
রুটিগুলি, এর বৈকল্পগুলির কারণে অনেক বেশি সুস্বাদু। অন্যদিকে ভাত, স্বাদ না থাকলে প্লেইন খাওয়া যায় না। প্রাতঃরাশ, লাঞ্চ / ডিনার, এমনকি একটি নাস্তা হিসাবে দিনের বেলাও রুটি খাওয়া যেতে পারে।
আবার একই ধরনের সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও ভাত ও রুটিতে পুষ্টিমানে ভিন্নতাও রয়েছে।ভাতের চেয়ে রুটিতে উচ্চ মাত্রায় ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। তাই এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য পেটকে পূর্ণ রাখে।ভাতে রয়েছে বেশি শ্বেতসার। তাই হজম করা সহজ।
ভাত রুটির চেয়ে উচ্চমাত্রার ফোলেট অর্থাৎ পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ‘বি’ সরবরাহ করে। রুটি পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের মতো বেশিরভাগ খনিজে সমৃদ্ধ।
উভয় আইটেমে বিদ্যমান সকল উপাদান পর্যবেক্ষণ করলে রুটিকে বলা যায় ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশি কার্যকর। তবে, ভাতের নানা স্বাস্থ্য সুবিধাও বাতিল করা যায় না। অর্থাৎ দুটোই স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদানের চাবিকাঠি। সুতরাং, একটির জন্য অন্যটি বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা বাঙ্গালীরা অনেকে ভাত বা রুটি একটু পরিমানে বেশিই খেয়ে থাকি। পরিমাণমতো খেলে ভাত ও রুটি দুটোই সীমিত পরিমাণে একসঙ্গে গ্রহণ করা যায়।
সতর্কতাঃ
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো ডাক্তারের তত্বাবধানে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।