মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর বিচারক তার কলমের নিব ভেঙ্গে ফেলেন কেনো?
যুগে যুগে পৃথিবীতে কত প্রথা আমাদের জীবনের সাথে মিশে রয়েছে তার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অবশ্য এর পিছনের কারণগুলো অনেকটাই যুক্তিসঙ্গত।
এ নিব ভেঙে ফেলাটা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা একটা প্রথা বা কাস্টমস বা রেওয়াজ, যেটি মূলত একটি প্রতীকী বিষয়। মৃত্যুদণ্ড প্রদানের আদেশে স্বাক্ষর করতে ব্যবহৃত কলমের নিব ভাঙ্গা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের দিন থেকে একটি ঐতিহ্য।
এর সর্বপ্রথম ব্যাখ্যাটি হলো, যে কলম একজনের জীবনের আলো নিভে যাওয়ার রায় লিখেছে, সে যেন আর কারো জীবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে। প্রথমত, এটি বিশ্বাস করা হয় যে কলম, যেটি কারও জীবন কেড়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, তা আর কখনও কোনও কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়।
সহজ কথায়, কলম রক্তের স্বাদ নিয়েছে; তাই এটি অবিলম্বে ভেঙে ফেলা উচিত যাতে এটি আরেকটি জীবন না নেয়।
এই তত্ত্ব অনুসারে, বিচারক তার কলমের নিব ভেঙে ফেলেন কারণ তিনি চান না যে এটি আবার অন্য রায়ের জন্য ব্যবহার করা হোক।
মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বা কারও প্রাণ কেড়ে নেওয়ার কাজটি এতটাই “অপবিত্র” বলে বিবেচিত হয় যে কলমটি আপনাআপনিই অপমানিত হয়ে যায়।
তাই কলম নষ্ট করা হয়।
দ্বিতীয়ত, বিচারককেও তাঁর রায়ের বিষণ্ণতা ছুঁয়ে যায়। এতে তিনিও ব্যথিত হন। এজন্য ওই যে বলা হয় :
দণ্ডিতের সাথে
দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ট সে বিচার।
সে মন খারাপের অনুভূতি থেকে নিজেকে দূরে রাখতেই মৃত্যুদণ্ডদাতা বিচারক নিবটি ভেঙে ফেলেন।
তৃতীয়ত:
একবার লিখিত বা স্বাক্ষরিত হলে, বিচারকদের রায় পর্যালোচনা বা প্রত্যাহার করার ক্ষমতা নেই। তাই নিব ভেঙে ফেলা হয়েছে যাতে বিচারক তার নিজের রায় পুনর্বিবেচনার কথা ভাবেন না। অনুশীলনটি একটি বিশ্বাসের প্রতীকী যে একটি কলম যা একজন ব্যক্তির জীবন কেড়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় তা আর কখনও অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়।
মন খারাপের অনুভূতি থেকে বা অপরাধবোধ হতে বিচারক তাঁর প্রদত্ত দণ্ড ফিরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন। কিন্তু তিনি যেন তা না করতে পারেন, তার জন্যই কলমের এ নিব ভেঙে ফেলা।
সর্বশেষ ব্যাখ্যায় বলা হয়, যেকোনো মৃত্যুই দুঃখ দেয়, কম বা বেশি, যদিও কখনো কখনো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের মতো সর্বোচ্চ শাস্তিরও প্রয়োজন হয়। তার পরও কলমের নিব ভেঙে ফেলার মাধ্যমে বোঝানো হয়, মৃত্যু একটি দুঃখজনক বিষয়।