বিট ঠোঁট গোলাপি করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে ও চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
আমরা বাজারে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনলেও প্রায়ই একটি সবজি এড়িয়ে চলি। আর সেই সবজিটি হল বিট। প্রাচীন সময় থেকেই বিটের বিশেষ কদর রয়েছে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে নিস্তার পেতে নিয়ম করে বিট খেতেন। এগুলো ছাড়াও ত্বকের সুরক্ষার জন্য বিট বেশ উপকারী।
বিট নিজেই দেখতে এত সুন্দর যে রূপচর্চার ক্ষেত্রে বিটের ব্যবহারের কথা উঠলে কেউই উড়িয়ে দেবে না। এখনকার দিনে প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে চর্চাকে সারা বিশ্বেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
লাল রঙের এই সবজিটি রূপচর্চার মহৌষধী। ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে নিয়মিত বিট খেতে পারেন। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত ও ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি, তাঁরা বেশি করে বিট খাবেন। এতে প্রদাহবিরোধী উপাদান থাকায় বিটের জুস নিয়মিত খেলে মুখে ব্রণের সমস্যা দূর হয়। বিট প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণে ভরা যা ত্বককে সুস্থ রাখে এবং চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না।
বিটে ভিটামিন “সি”, পটাশিয়াম, আয়রন ও ফাইবার আছে যা রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বককে সতেজ রাখে। এছাড়াও এটি ত্বককে উজ্জ্বলও করে। ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির মতে, বিট খনিজ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ, যেমন বিটে আয়রন এবং ভিটামিন “সি”, ফোলেট ২২%, ফাইবার ৯%, পটাসিয়ামের ৮% রয়েছে।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, রূপচর্চায় বিটের নানাবিধ উপকারিতা সম্পর্কে-
চুল কালার করতে:
এক চামচ বিটের রস, এক চামচ আমলকি পাউডার, এক চামচ মেথি পাউডার, এক চামচ টক দই, একটি ডিম দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। ছোট চুল হলে পুরো চুলে লাগিয়ে একটি প্লাস্টিক বা হেয়ার ক্যাপ লাগিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকুন। আধঘন্টা পরে শ্যাম্পু করে নিন। বিটের রস চুলে ন্যাচারাল কালার আনতে সাহায্য করে।
ঠোঁটকে গোলাপি করতে:
বিটে প্রাকৃতিক লাল রঞ্জক পদার্থ থাকায় ত্বক ও ঠোঁট রাঙাতেও অনেক মেকআপ কোম্পানি বিট চূর্ণ ব্যবহার করছে। এক চামচ বিটের রস, একটি ভিটামিন “ই” ক্যাপসুল, এক চামচ ভেসলিন, এক চামচ অ্যালোভেরা জেল ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁটে রাত্রিবেলা লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন।
এতে ঠোঁট গোলাপি থাকবে। প্রয়োজনে এটি লিপস্টিক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
টোনার হিসেবে ঠান্ডা:
বিট জুস মেকআপ তোলার টোনার হিসেবে ভালো কাজ করে। মেকআপ তোলার পর বা মুখ ধুয়ে একেবারে রোমকূপ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে ত্বকের জন্য টোনার ব্যবহার করা খুব উপকারী। এই টোনার হিসেবে ঠান্ডা, ফ্রিজে রাখা বিট খুবই কার্যকরী।
বিট জুস করে তুলায় নিয়ে মুখ ও গলা–ঘাড়ে লাগান। এতে ত্বক পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোমকূপ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ভিটামিনও পৌঁছে যায়।
ত্বককে উজ্জ্বল করতে:
বিটের রসে আয়রন থাকে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বককে উজ্জ্বল করতে ২ চামচ কমলা খোসার গুঁড়া এবং ১ চামচ বিটের রস দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এটি পুরো মুখে লাগান এবং ১০ অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিজেই দেখতে পারবেন বিট কীভাবে আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে।
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে:
চোখের নিচের কালো দাগ ও ফোলা ভাব দূর করতে বিটের রস বেশ কার্যকরী। ১ চা চামচ বিটের রস নিন এবং এতে কয়েক ফোঁটা বাদামের তেল মিশিয়ে নিন। তারপর চোখের নীচের অংশে এটি ম্যাসেজ করুন।
১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চোখের চারপাশের ত্বক টানটান হবে এবং কালো দাগ দূর হবে। আর ফোলা ভাবও থাকবে না।
ব্রণ দূর করতে:
ভিটামিন “সি” এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য এর কারণে বিট ব্রণ দূর করতে কার্যকরী। দুই চা চামচ বিটের রসের সঙ্গে এক চা চামচ টকদই মিশিয়ে নিন। এবার ব্রণের ওপর লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। দেখবেন, ধীরে ধীরে ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
ত্বকের শুষ্কতা দূর করে:
অনেকেই শুষ্ক ত্বক নিয়ে খুব সমস্যায় ভোগেন। তাদের ক্ষেত্রে বিট বেশ উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। বিটের রসের সাথে কিছুটা দুধ এবং কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে মুখে মেখে রাখুন এবং ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নিজেই তফাৎটা অনুভব করতে পারবেন।
বিটরুট অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি দুর্দান্ত উৎস যা সম্ভবত শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলতে পারে। ১ চামচ কাঁচা দুধ, ১-২ ফোঁটা বাদাম তেল বা নারকেল তেল এবং ২ চামচ বিটের রস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর আলতো করে এটি আপনার মুখে ম্যাসেজ করুন এবং ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুল পড়া কমাতে:
চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। চুল পড়ার সমস্যা কমাতে বিট খুবই উপকারী। বিটের রসের সাথে কিছুটা আদার রস মিশিয়ে গোসলের আগে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখে কিছুক্ষণ পর তা ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া কমে যাবে।
বয়সের ছাপ দূর করতে:
ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে বিট বেশ কার্যকরী। বিটে ভিটামিন “সি” এর পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে, কেউ কেউ বিটকে ত্বকের জন্য ভাল বলে বিবেচনা করে। কারণ ভিটামিন “সি” কোলাজেন সংশ্লেষণে ভূমিকা রাখে, শুষ্ক ত্বক মেরামত ও প্রতিরোধে সহায়তা করে।
এছাড়া হাফ কাপ দইয়ের সঙ্গে বিটরুটের জুস এবং এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর মুখে লাগান। ১০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলুন। এটি বয়সের ছাপ দূর করার পাশাপাশি ত্বককে সতেজ রাখবে।
দাগ দূর করতে:
এই পেস্টটি বানাতে বিটের সঙ্গে দু চামচ মুলতানি মাটি মেশান। তারপর তাতে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে তিনটি উপকরণ ভালো করে মেশান। এবার এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে মুখটা ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের ক্ষত সারানোর পাশাপাশি ব্রণ এবং নানা রকমের দাগ কমাতে এই মাস্কটি দারুন কাজে আসে।