পেটের চর্বি বা ভুঁড়ি কমানোর উপায়।
পেটের মেদ বা পেটের চর্বি কমাতে ওজন হ্রাস করা সব থেকে কার্যকরী উপায়। অনেকেই পেটে চর্বি জমা বা ভুঁড়ি বাড়ার সমস্যা নিয়ে বিব্রত।
পেটে বেশি চর্বি থাকলে কেবল খারাপই দেখায় না, মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। ফলে হার্টের রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য জটিল সমস্যায় ভোগাতে পারে।
এমনকি ক্লান্তি, অনিদ্রা, শ্বাসকষ্টের মতো বহু শারীরিক সমস্যার সঙ্গেও অতিরিক্ত ওজন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
অনেকসময় জিমে গিয়ে, ডায়েট কন্ট্রোল করেও কোনো লাভ হয় না। এবার পেটের চর্বি কমানোর কিছু কার্যকর উপায় জেনে নিন-
প্রচুর পানি পান করুন:
মেদ কাটিয়ে উঠতে চাইলে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাহলে শরীরের বিপাকের হার বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের বিষাক্ত উপাদানগুলোকে দূর করে দিবে। তাই পানিকে প্রাকৃতিক ক্লিঞ্জার বলা হয়।
চিনি এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন:
চিনি জাতীয় খাবার থেকে দূরেই থাকুন অর্থাৎ চিনিকে না বলুন। এছাড়া মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, চকলেট, আইসক্রিম, ফিরনী, সেমাই ইত্যাদি থেকে কিছুদিনের জন্য বিদায় নিয়ে নিন।
মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। এই জাতীয় প্রচুর পরিমাণে খাবার খেলে ওজন বাড়তে পারে।
অনেক গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে অতিরিক্ত চিনি, বেশিরভাগ পরিমাণে ফ্রুক্টোজ যা আপনার পেট এবং লিভারের চারপাশে ফ্যাট তৈরি করতে পারে।
লেবু:
প্রতিদিনের সকালটা শুরু হোক লেবুর সরবত দিয়ে। এই পদ্ধতি পেটের মেদ কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী একটি উপায়।
১ গ্লাস হালকা গরম পানিতে লেবু চিপে সরবত করে সঙ্গে একটু লবণ মিশিয়ে নিন। ইচ্ছে হলে একটু মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন।
কিন্তু চিনি মিশাবেন না। প্রতিদিন সকালে পানীয়টি পান করুন। এই পানীয় আপনার বিপাক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
রসুন খান:
প্রতিদিন সকালে উঠেই খালি পেটে ২/৩ কোয়া রসুন চিবিয়ে খেয়ে নিন, এর ঠিক পর পরই পান করুন লেবুর রস।
এটি আপনার পেটের চর্বি কমাতে দ্বিগুণ দ্রুতগতিতে কাজ করবে। তাছাড়া দেহের রক্ত চলাচলকে আরো বেশি সহজ করবে এটি।
বাইরের খাবার পরিহার করুন:
বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত তেল-মশলা, ঘি-মাখন এড়িয়ে চলুন। রেড মিট এড়িয়ে চলুন।
ফাস্ট ফুড, ডিপ-ফ্রাই করা খাবার, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংক্স, অ্যালকোহল না খাওয়াই ভালো।
বদলে স্ন্যাক্স হিসেবে খান ফল, গ্রিলড্ খাবার, চাট, স্যালাড, আমন্ড, টক দই।
কম খান:
কম খান অর্থাৎ পুরা পেট ভরে না খেয়ে একটু পেটে খালি রাখুন। খাওয়ার সময়ে পেটে একটু জায়গা রেখে খান। এতে করে খাবার ভালো হজম হবে। অতিরিক্ত ক্যালোরির সমস্যাও হবে না।
বেশি বেশি হাঁটুন:
ওজন কমাতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। আর হাঁটা তো কেবল ওজনই কমাবে না, কমাবে হৃদরোগের ঝুঁকিও। এতে বিষণ্ণতা বা মন খারাপ ভাবও কমে যাবে অনেক।
ব্যয়াম করুন:
জিমে যাওয়ার আলাদা সময় না থাকলে বাড়িতেই করুন শরীরচর্চা। রোজ সকালে উঠে আধ ঘণ্টা রাখুন নিজের জন্য।
স্কিপিং, বুক ডন, বৈঠক, পুল-আপের মতো খালি হাতে ব্যায়াম করুন।
ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নির্দ্বিধায় করতে পারেন এই এক্সারসাইজগুলো। তবে ব্যায়াম শুরুর আগে কোনো শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞের থেকে সঠিক ফর্ম অবশ্যই জেনে নেবেন।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান:
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার খাওয়া ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এক বাটি ভর্তি ফল ও সবজি খাবার চেষ্টা করুন।
এতে আপনার শরীর পাবে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, মিনারেল ও ভিটামিন। আর এগুলো আপনার রক্তের মেটাবলিজম বাড়িয়ে পেটের চর্বি কমিয়ে আনবে সহজেই।
একটি ৫ বছরের গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১০ গ্রাম দ্রবণীয় ফাইবার খাওয়া পেটের গহ্বরে চর্বি পরিমাণের ৩.৭% হ্রাসের সাথে সংযুক্ত ছিল।
এটি বোঝাচ্ছে যে দ্রবণীয় ফাইবার ক্ষতিকারক পেটের মেদ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে।
বেশি প্রোটিন খান:
ওজন কমানোর জন্য প্রোটিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাকক্রোনট্রিয়েন্ট হতে পারে। ওজন হ্রাস যদি আপনার লক্ষ্য হয় তবে প্রোটিন যুক্ত করা আপনার ডায়েটে সবচেয়ে কার্যকর পরিবর্তন হতে পারে।
প্রোটিন কেবল আপনাকে ওজন কমাতে সহায়তা করবে না বরং পেটের মেদ কমাতে প্রোটিন বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে লোকেরা বেশি এবং ভাল প্রোটিন খায় তাদের পেটের ফ্যাট কম থাকে। ডিম, মাছ, বাদাম, মাংস এবং দুগ্ধ জাতীয় উচ্চ প্রোটিন খাবার গ্রহণের চেষ্টা করুন।
কম কার্বোহাইড্রেট খাওয়া:
কম কার্বস খাওয়া চর্বি হারাতে খুব কার্যকর উপায়।
২০ টিরও বেশি এলোমেলোভাবে নিয়ন্ত্রিত গবেষণায় দেখা গেছে যে কম কার্ব ডায়েট কখনও কখনও কম চর্বিযুক্ত ডায়েটের চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি ওজন হ্রাস করে।
লো ফ্যাটযুক্ত ডায়েটের তুলনায় কম কার্বোহাইড্রেট ডায়েট বিশেষ করে পেটে এবং অঙ্গ এবং যকৃতের চারপাশে ফ্যাট হ্রাস করে।