পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায় ও সে চোখের দেখা প্রাণের কথা সে কি ভোলা যায়।
একান্নবর্তী পরিবারে সকলে লাইন দিয়ে পাশাপাশি বসে খাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। পারিবারিক বা ধর্মীয় যেকোনো অনুষ্ঠানে সকলে মিলে কাজ ভাগাভাগি করে এগিয়ে নেয়া ও আনন্দ-ফুর্তি, খাওয়াদাওয়া-এর কোনো তুলনা হয় না।
বর্তমান ডিজিটাল যুগের মটন বিরিয়ানি বা কাচ্চি বিরিয়ানিকেও হার মানিয়ে দেয় অতীতের আতপ চালের ভাত, আলুভর্তা, মাছ বা মাংসের পদ, নারকেল কোরা ও গুড়।
সকলকে নিয়ে চলা, সকলের মাঝে নিজেকে ধরে রাখতে পারার মধ্যেই তো আসল সুখ।
সত্যি আদর ভালোবাসা ছিলো। একে অপরকে সন্মান করতো। পা ছুঁয়ে প্রণাম করতো। পাড়া-প্রতিবেশী সবার কতো মিল ছিলো। আত্নীয় স্বজন একে অপরের বাড়ি আসতো। সবার কত মিল ছিলো। সুখ দুঃখের সাথী ছিলো। সত্যি সে এক দিন ছিলো।
দাঁড়িয়াবাঁধা খেলা ছিলো। বুড়িছুট, পঞ্চাশ চোর, চোর-পুলিশ খেলা ছিলো। সন্ধ্যে হলে হাত পা ধুয়ে হ্যারিকেন বা কুপির আলোয় পড়া ছিলো। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে সন্ধ্যাবেলায় গ্লাস-ঘটি নিয়ে এপাড়া-ওপাড়ায় শনি পূজোর ফলমূল ও সিন্নি খাওয়ার মজা ছিলো। সত্যি সে এক দিন ছিলো।
সত্যি সে এক সময় ছিলো। এক অন্নে আহার ছিলো। বিশ তিরিশের সংসারেতে বড়ো হাঁড়ি ও মোটা রুটির পাঁজা ছিলো। সুতোয় কাটা ডিম্ ছিলো। মাটির উনুনে কাঠ, মুঠে ও ঘুটে কয়লার আঁচ ছিলো। শীল নোড়ায় বাটা মসলার ঝাঁঝ ছিলো। সত্যি সে এক দিন ছিলো।
কাঁসার থালা বাটি ছিল। তালপাতার পাখা আর খেজুরপাতার ঝাঁটা ও পাটি ছিল। অল্প পাওয়াতেও অনেকখানি পাওয়া ছিল। যেমন ছিল বেশ ছিল। আহা সে এক সময় ছিল।
সকালবেলা আকাশবাণীর সেই যে চেনা টিউন ছিল। চিত্রহার ও দুর্বারে সাজানো এক সন্ধ্যে ছিল। ছুটির দিনে একটা করে ছায়া ছবির মজা ছিল। এন্টেনাতে কাক ছিল। সাপ্তাহিক নাটক, আলিফ লায়লা দেখার সময় এন্টেনা ঘুরিয়ে ছবি পরিষ্কার আনার বিড়ম্বনা ছিল। আহা সে এক সময় ছিল।
নদী, খাল-বিল থেকে দাদুর ধরা মাছ ছিল। ঠাম্মার আর জেঠিমার হাতের আঁচার আর ডালের বড়ির স্বাদ ছিল। এলো চুলে মা কাকিমার পা ছড়িয়ে উকুঁন বাছা আর গল্প ছিল। বিকেলবেলা মাঠে ঘাটে কত যে খেলা ছিল।
অভাব ছিল। দুঃখ ছিল। হিংসা বিষাদ সবই ছিল। তবুও যেন সুখ ছিল।
গরু সারাদিন মাঠে, ডরে, নদীর চরে হেঁটে হেঁটে তাজা ঘাস খেত। তাই গরুর খাঁটি দুধ ছিলো। দুধের মোটা সরের ঘি ছিলো। নকশা তোলা কাঁথা ছিলো। আহা সে এক দিন ছিল।
এর শাড়ি ওর জামা অদল-বদল দুইই ছিলো। চিপ দিয়ে মাছ ধরা খেলা ছিলো। ডাহুক পাখি, বেলেহাঁস, পানকৌড়ি আরো কত পাখি ছিলো। মামার বাড়ি ভারী মজা কিল-চড় নাই। মামার বাড়ি যাওয়ার আনন্দ ছিলো।
পিয়ন ছিলো। চিঠি ছিলো। হাতের লেখার কদর ছিলো। ৫ টাকার বনভোজনে/ চড়ুইভাতি সে যে কি এক মজা ছিল।
অতীত হাতরানো ছাড়া কিছুই করার নেই। অনেকে চোখের জলে ভাসেন।