পাখির জগৎ।
পাখির জগৎ
—————————
পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।
কবিতার কথাগুলো সাম্যকে ভাবিয়ে তুলল। তাই তো, ভোর হলেই পাখি ডেকে ওঠে। ঘুম ভেঙে যায়। পাখিরা যেন ভোরের দূত। চড়ুই শালিক এরকম দুয়েকটা পাখি সাম্য দেখেছে। কিন্তু আরও যে নানা ধরণের পাখি আছে, সে সব পাখির কথা জানতে ইচ্ছে করে তার। মাকে সে জিজ্ঞেস করবে পাখিদের কথা।
আচ্ছা মা, পাখিরা কি রাতে ঘুমায় না। ভোর না হতেই কিচিরমিচির করা শুরু করে দেয়। মা বলেন, তা হবে কেন। পাখিরাও ঘুমায়। মা বলেন, পাখির দেশ, নদীর দেশ বাংলাদেশ। পাখিরা প্রকৃতিক শোভা। গাছে গাছে ঝোপে ঝাড়ে নদীতীরে তাদের বিচরণ। কখনো তারা দল বেঁধে আকাশে উড়ে বেড়ায়। কখনো পাতার ফাঁকে চুপ করে বসে থাকে। কখনো খাবারের জন্য পোকামাকড়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মা আরও বললেন, দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। এদের গায়ের রং সাদা-কালো। এরা থাকে লোকালয়ে আর অগভীর জঙ্গলে। গাছের উঁচু ডালে মাঝে মাঝে মধুর সুরে গান গায়। ছোট ডাল, খড়কুটো ও শিকড় বাকড় দিয়ে বাসা বানায়। নানা ফুলের মধু আর কীটপতঙ্গ এদের প্রধান খাদ্য।
ছোট্ট পাখি চড়ুই। চড়ুই আমাদের ঘরেরই কেউ। লোকালয় এদের প্রিয় জায়গা। বাসাবাড়ির ঘুলঘুলিতে খড়, টুকরো কাপড়, শুকনো ঘাস দিয়ে এরা বাসা তৈরি করে। মাথা ছাই রঙের। পিঠে বাদামি পালক। তার উপরে কালো ছোট দাগ। ডানার উপরে সাদা অথবা লালচে রেখা। এরা কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলের শত্রু নাশ করে। শস্যদানা এদের প্রিয় খাদ্য।
ছোট্ট আরেক পাখি টুনটুনি। পালকের রং জলপাই সবুজ। মাথায় লালচে রঙের ছোপ। লম্বা ঠোঁটের রং কালচে খয়েরি। পায়ের রং হলুদাভ। লেজ নাড়িয়ে টুই টুই শব্দ করে উড়ে বেড়ায়। এরা মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে। চমৎকার বাসা বানায়। পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখে। ফুলের মধুই টুনটুনির সবচেয়ে প্রিয়।
চড়ুইয়ের মতো চঞ্চল স্বভাবের আরেকটি পাখি হলো বুলবুলি। বুলবুলির মাথা ও গলা কালো। মাথার উপর রাজকীয় কালো ঝুঁটি। এর তলপেট সাদা। তলপেটের শেষে লাল ছোপ। এরা খুব দ্রুত উড়তে পারে।
পানির সঙ্গে যার সখ্য, সেই পাখিটির নাম পানকৌড়ি। পুকুর, খাল ও বিল এদের বিচিরণক্ষেত্র। কুচকুচে কালো এই পাখি ডুব দিয়ে তিন মিটার পর্যন্ত সাঁতরাতে পারে। এদের পায়ের পাতা হাঁসের মতো। ঠোঁট তীক্ষ্ণ আর বাঁকানো। এরা জলজ কীটপতঙ্গ খেতে ভালোবাসে।
বাংলাদেশে আরও অনেক পাখি আছে। এই পাখিগুলো হলো খঞ্জনা, ডাহুক,কোকিল, বাঁশপাতি, শ্যামা, ধনেশ, পানডুবি, ফিঙে, টিয়া, বাবুই ইত্যাদি। মা বলেন, পাখিরা মানুষের বন্ধু। এরা অনেক উপকারী। কিছু কিছু পাখি পরিবেশকে সুন্দর রাখে।